জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

গ্রেপ্তারের কৌশল

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০ মার্চ। বিকেল। দুপুরের রোদ পড়ে এসেছে। ক্যান্টনমেন্টের ফ্লাগ স্টাফ হাউজের পিতলের ফলকগুলো তখনো চকচক করছে। প্রধান সেনাপতি জেনারেল হামিদ ও লে. জে. টিক্কা খান এখানে বসলেন। অপারেশন সার্চলাইট চূড়ান্ত করা হলো। সিদ্ধান্ত হলো, প্যারামিলিটারি ফোর্স যেমন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও পুলিশ বাহিনীকে নিরস্ত করা হবে। এবং আরো সিদ্ধান্ত হলো, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনারত অবস্থাতেই শেখ মুজিবসহ আওয়ামী হাইকমান্ড ও নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।
২০ মার্চ। প্রেসিডেন্ট হাউজ। অপারেশন সার্চ লাইট অনুমোদিত হলো। ইয়াহিয়া বললেন, আওয়ামী নেতাদের এভাবে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া হবে বিশ্বব্যাপী মারাত্মক।
২০ মার্চ ও ২১ মার্চের মধ্যরাতে সবখানে একটা গা-ছাড়াভাব বিরাজ করছিল। সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে, ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটা চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে। কিন্তু এ রমরমাভাব কিছুটা স্থিমিত হলো যখন ২১ মার্চ মুজিব এবং তাজউদ্দীন প্রেসিডেন্ট হাউসে অনির্ধারিত ভিজিটে যান এবং প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেন, যেন ঘোষণা থেকে ফেডারেল মন্ত্রিসভা গঠনের ব্যাপারটি বাতিল করা হয়। মুজিবের এ সুপারিশ ইয়াহিয়া এবং তার সহকারীরা উপলব্ধি করল যে, মুজিব আর অখণ্ড পাকিস্তান চাচ্ছেন না। কামাল হোসেনও একটি নতুন খসড়া পেশ করলেন, যা আগেরটা থেকে ভিন্ন ছিল।
ইয়াহিয়া একটি রাজনৈতিক সমাধানের আশা ছেড়ে দিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, স্থবির অবস্থার জন্য মুজিবই দায়ী ছিলেন। মুজিব চলে যাওয়ার পর তিনি জেনারেল টিক্কাকে বললেন, ‘হারামজাদাটা ঠিক করছে না। তুমি প্রস্তুত হও।’
জুলফিকার আলী ভুট্টোকে যখন বলা হয়, মুজিব তার সাথে দেখা

করতে রাজি হয়েছেন, তিনি ঠিক করলেন ঢাকায় অবস্থানকারী অন্য পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে যোগ দিবেন এবং একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করবেন। ২২ মার্চ যখন ঢাকায় আসেন, তখন একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকা পিপল মন্তব্য করে, ‘স্বৈরাচারী চেঙ্গিস খানের মতো পাকিস্তানের রাজনীতির খলনায়ক ভুট্টো এলেন, সামনে পেছনে মেশিনগানের নিরাপত্তা নিয়ে।’ সেøাগান দেয়া হয়, ভুট্টো, গণতন্ত্রের হত্যাকারী।
সংবিধানের খসড়া তৈরি করতে দুই আলাদা কমিটি গঠনকে ভুট্টো বিরোধিতা করেন। তিনি ভাবলেন, এ ধরনের কমিটি পশ্চিম পাকিস্তানে গঠন করা খুবই কঠিন হবে। কারণ সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত বিরাজ করছে।
তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হলে এসব দল নিজেদের মধ্যে দ্ব›দ্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তার নিজের দলই সংবিধানের খসড়ার বিষয়ে ভেঙে যেতে পারে।
পিপিপির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা হবে দুটি পাকিস্তানের সামিল। দুই অঞ্চলকে ভিন্ন রকমের স্বাতন্ত্র্য দেয়া হবে। এটা করলে পরিস্থিতি সামলানো দুষ্কর হবে।’ তিনি আশঙ্কা করেন, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকে তার মতাদর্শে টেনে আনতে পারবেন না। তিনি বালুচিস্তানের এক নেতার উদ্ধৃতি দেন, ‘দুটি কমিটি থাকতে পারলে, পাঁচটি কমিটি থাকতে পারবে না কেন?’
একজন সেনা কর্মকর্তাকে ভুট্টোর এক বিশ্বস্ত সহকারী আব্দুল হাফিজ কারদারকে বললেন, ‘আমরা তাদেরকে শিক্ষা দেব। তোমার চেয়ারম্যানকে শক্ত থাকতে বলো।’ জেনারেল আকবর ফরমানকে বললেন, ‘এ হারামজাদাকে (মুজিব) পশ্চিম পাকিস্তান শাসন করতে দেব না।’
২২ মার্চ সন্ধ্যায় ভুট্টো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আবার বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেন। পীরজাদার মতে, যে সংবিধান খসড়া প্রণয়নের জন্য দুই কমিটি গঠনের প্রস্তাবে রাজি হলেন। তবে আব্দুল হাফিজ কারদার বলেন, পিপিপি আলাদা দুটি কনস্টিটিউশনাল কনভেনশনের বিরুদ্ধে ছিল। কারণ এটার ফলে বিচ্ছিন্নতা হওয়াটা অনিবার্য। সিদ্দিক সালিকও বলেন যে, ভুট্টো মন্তব্য করেন যে মুজিবের প্রস্তাবে দুই পৃথক পাকিস্তানের বীজ নিহিত ছিল।
প্রেসিডেন্টের টিমের সাথে আওয়ামী লীগের চতুর্থ বৈঠক বসে ২৩ মার্চ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট হাউসে। তাজউদ্দীন ও কামাল হোসেন ২৬ পৃষ্ঠার খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, যা গ্রহণ করা হলে তা হতো পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার লিখিত অনুমোদন। এ প্রস্তাবনায় তিনটি অংশ ছিল- সাংবিধানিক বিষয়- অর্থ ও প্রশাসন। আওয়ামী লীগ তাদের দাবি বাড়িয়ে দিল।
পীরজাদা খসড়াটা নিয়ে বলেন, সরকার এটাকে পর্যালোচনা করে দেখবে। কিন্তু ততক্ষণে রমরমা ভাবটা বিলীন হয়ে গিয়েছিল। ২৪ মার্চে দুই পক্ষের বৈঠক আবার বসে এবং কর্নেল হাসানের মতে, তারা প্রায় সমঝোতায় এসেছে।
বিচারপতি কর্নেলিয়াস এবং জেনারেল পীরজাদা জেনারেল ইয়াহিয়াকে জানালেন, যদি তারা আওয়ামী লীগের এ প্রস্তাবকে গ্রহণ করে, এটির অর্থ হবে কনফেডারেশন, যা তাদের দেয়ার অধিকার ছিল না।
পাকিস্তানের জাতীয় দিবস প্রতি বছর ২৩ মার্চে পালিত হয়। এ দিনটিতে লাহোরে শেরেবাংলা ফজলুল হক পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন দেশের দাবি জানান। তার ঠিক ৩১ বছর পর বাঙালিরা দাবি জানায়, তাদের নিজেদের জন্য একটি আলাদা স্বাধীন দেশ, পাঞ্জাবিদের শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় বিচ্ছিন্নতার কারণ ধর্ম ছিল না। এর কারণ ছিল অর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম ২৩ মার্চকে প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে।
ইয়াহিয়া শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করলেন মুজিবকে এমন পথে আনা, যাতে পাকিস্তান ভেঙে না যায়। তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকে মুজিবকে বোঝানোর জন্য পাঠালেন। কিন্তু তারা সবাই বিফলে ফিরে এলেন। ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য স্পষ্ট ছিল, যখন ২৪ মার্চে তিনি এসে প্রস্তাব করলেন, আওয়ামী লীগের খসড়ায় ‘ফেডারেশন’ শব্দটি বদলিয়ে ‘কনফেডারেশন’ করা হোক।
 
আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘ইট ইজ টু নাইট’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়