ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

স্রোতের বিপরীতে মাঝিহীন নৌকার দুঃসহ দিনলিপি

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের জন্য ছিল কঠিন দুঃসময়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কেউ যেন আর আওয়ামী লীগের হাল ধরতে না পারে, সেজন্য তার পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে ৩ নভেম্বর দলটির জাতীয় চার নেতাকেও নির্মমভাবে জেলখানায় হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে সব ধরনের অপচেষ্টা চালানো হয়। দলটির নেতারা নানা গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বিশ্বাসঘাতকতা করেন সিনিয়র নেতাদের অনেকেই। ছিল নেতৃত্বের দোদুল্যমানতা। ছিল নেতৃত্বের ভীরুতা-কাপুরুষতা। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সিঁড়ি বেয়ে কেউ কেউ যোগ দেন খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায়। সে সময় গ্রেপ্তার করা হয় দলটির সারাদেশের নেতাকর্মীদের। চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গুলি করে মেরে ফেলা হয় অনেক নেতাকর্মীকে।
এতবড় একটি মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিরোধের ডাক দেয়ার মতো আওয়ামী লীগে একজনও যোগ্য নেতা ছিল না। তারপরেও দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দমে থাকেনি। তারা চেয়েছিল, কেউ একজন প্রতিরোধের ডাক দিক। কিন্তু সেই ডাক দেয়ার মতো নেতা ছিল না। ফলে দীর্ঘ অমাবশ্যার কালো মেঘে ঢেকে ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে ফেরারি জীবনে। বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে আপসহীন নেতাদের পালিয়ে থাকতে হয়েছিল। দুঃসহ দিনগুলোর কথা তুলে ধরে ওই সময় ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর আশা করেছিলাম, এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সারাদেশের তৃণমূলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা প্রস্তুত ছিল প্রতিরোধ গড়ে তোলার। কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে সেটা হয়নি। কারণ, সে সময় ছিল নেতৃত্বের দুর্বলতা, ভীরুতা, দোদুল্যমানতা। যদি কোনোভাবে প্রতিরোধের ডাক দেয়া হতো, তাহলে সারাদেশ উত্তাল হয়ে যেত।
এদিকে ১৫ আগস্টের পর ক্ষমতা দখলকারী খুনি মোশতাক বন্দুকের জোরে বিভিন্ন অধ্যাদেশ জারি করতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জারি করা হয় কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত কারো বিরুদ্ধে দেশের কোনো আদালতে অভিযোগ পেশ করা যাবে না।
১৯৭৬ সালের ৩০ জুলাই থেকে শুরু হয় ঘরোয়া রাজনীতি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালের ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আনুষ্ঠানিক বর্ধিতসভা হয়। সেখানে মহিউদ্দিন আহমদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন।
দিকভ্রান্ত আওয়ামী লীগের হৃদয়ে পিতৃহত্যার প্রতিশোধের আগুন। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু হয় সাংগঠনিক তৎপরতা। ১৯৭৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল ঢাকার হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত হয় দুদিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন। অধিবেশনে পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত জোহরা তাজউদ্দীনকে অন্তর্বতী আহ্বায়ক করা হয়। এরপর ১৯৭৮ সালের ৩ থেকে ৫ মার্চ তিন দিনব্যাপী দলটির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল হয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর এটিই ছিল সামরিক শাসনের অধীনে প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিল। এ কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত ও সংগঠিত হয়। অধিবেশন থেকে অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়। কারাগারে আটক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং জেলহত্যার বিচার দাবি করা হয়।
সম্মেলনে পরবর্তী দুই বছরের জন্য আবদুল মালেক উকিলকে সভাপতি এবং আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ১১ আগস্ট মিজানুর রহমান চৌধুরী ঢাকায় নিজ বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের নামে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেন। একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে তার এ ঘোষণায় দেশবাসী বিস্মিত হলেও দলটির নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হননি। তারা জানে কোনটি তাদের প্রকৃত ঠিকানা। এর প্রায় তিন বছর পর ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে দলের নেতৃত্ব এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদেশে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রথমবারের মতো সভাপতিমণ্ডলী গঠন করা হয়। এরপর ওই বছরের মে মাসে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। নব উদ্যমে শুরু হয় আওয়ামী লীগে তার পথ চলা।
এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ভোরের কাগজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পুরো প্রেক্ষিতটাই পাল্টে যায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা সংবিধান থেকে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ- এই চার মূল নীতিকে কেটে ছিঁড়ে বিদায় করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে এ দেশকে পরিচালনা করতে নানা প্রক্রিয়া শুরু করে। সামরিক শাসন জারি করা হয়। জাতীয় চার নেতা ও আওয়ামী লীগের সামনের সারির প্রচুর নেতাকে হত্যা করা হয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান শুরু হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অধিকাংশই নেতাকর্মীই ছিলেন কারাগারে বন্দি। বাকিরা পলাতক। কেউ কেউ বেইমানি করেছে। তারপরেও আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী সংকট কাটিয়ে উঠেছে। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেয়ায় দলটি নেতৃত্ব শূন্যতা কাটিয়ে উঠে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, পঁচাত্তরে শুধু জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীনতার চেতনা ও সব অর্জন। জাতির পিতাকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গেই একাত্তরে পরাজিত শক্তি হিংস্র হায়েনার মূর্তিতে ফিরে এসে প্রতিশোধ মুখর হয়ে ওঠে। উপরন্তু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিভ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী চরমপন্থি বাম উগ্রবাদীদের রোষানলে পড়ে আওয়ামী লীগ। স্বল্প সময়ের মধ্যে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রত্যাগত সামরিক বেসামরিক অফিসার, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষে গণহত্যায় জড়িত বাঙালি অফিসাররা সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, বেসামরিক পদপদবি দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগ নিধনে নামে। রাষ্ট্রযন্ত্র এবং দেশবিরোধী অপশক্তিগুলো যৌথভাবে আওয়ামী লীগের ওপর নারকীয় অত্যাচার চালায়। সেই চরম প্রতিকূলতার মাঝেও যারা আওয়ামী লীগ করেছেন, আদর্শ ও দলকে এগিয়ে নিয়েছেন তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়