৯৯৯-এ কলে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ও বাঁশির চিত্রকল্প

পরের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রেলের মেগা প্রকল্পগুলোর বেহাল দশা, প্রত্যেকটিই শম্বুক গতিতে চলছে। ফাস্ট ট্রাক প্রায় প্রতিটি প্রকল্প ৫-৭ বার সময় ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। তারপরও প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। এক যুগ অতিবাহিত হলেও খুলনা-মোংলা প্রকল্পটি কবে শেষ হবে বলা মুশকিল। মাটি ভরাট, রেললাইন বসানোর কাজে কিছুটা গতি এলেও রূপসা ব্রিজের অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ। মূলত রূপসা রেল ব্রিজের নকশায় ত্রæটি সংশোধন, ভূমি অধিগ্রহণে ধীরগতি ও প্রকল্প এলাকাটি নিচু জলাভূমি হওয়ায় ব্রিজ-কালভার্ট তৈরিতে সমস্যার কারণে প্রকল্পের কাজ সময়মতো করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে জানিয়েছে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান। তিনি ভোরের কাগজকে জানান, এ প্রকল্পটির সবচেয়ে বড় সমস্যা রূপসা ব্রিজ, এ ব্রিজের নকশা বদলাতে হয়েছে। সে কারণে খরচ ও সময় বেড়ে গেছে।
তাছাড়া এখন পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়নি, প্রকল্প এলাকাটি নিচু ভূমি হওয়ায় অনেক কালভার্ট, ব্রিজ ও মাটি ভরাট করতে অতিরিক্ত সময় লাগছে। এসব কারণে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করতেই ৪-৫ বছর দেরি হয়। এজন্য একটি সংশোধিত প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ এ প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। এখনো সংশোধিত ব্যয় চূড়ান্ত হয়নি। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা অনুমোদনের জন্য শিগগিরই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ফাস্ট ট্রাকভুক্ত ভারতীয় এলওসি অর্থায়নে চলা খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করতে হয়েছে ৫ দফা। ১ হাজার ৭২১ কোটি থেকে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, সময় বেড়েছে ২০১০ থেকে ২০২২

সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সম্প্রতি আবারো সময় ও অতিরিক্ত হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্পের পক্ষ থেকে রেল মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন বলে রেলসূত্রে জানা গেছে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে মোংলা বন্দর-খুলনা রেললাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের অধীনে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কাজই ওই সময় হয়নি। পরে ভূমি অধিগ্রহণে সময় ব্যয় হয়, যার ফলে ২০১৭ সাল থেকে কিছুটা কাজের অগ্রগতি দেখা যায়। ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন এন্ড টু ব্রো-এলটি লিমিটেড, তারাই স্লিপারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে সম্প্রতি রেল সচিবের সভাপতিত্বে রেলের প্রকল্পের মনিটরিং সেলের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়- সেখানে বলা হয়েছে প্রকল্পটির নির্মাণকাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়, ১১ বছরে সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ। এখনো বাকি ২৪ শতাংশ। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির কাজ ২০১০ সালে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পাঁচ-পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সম্প্রতি নতুন করে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সঙ্গে চাওয়া হয়েছে আরো ৯০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকাও।  
রেলসূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ার প্রথমবার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ে। এরপর তৃতীয় দফায় ফের দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়ায় তা বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ পঞ্চম দফায় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় রেল ট্র্যাকের অগ্রগতি ৬৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হলেও মাত্র রূপসা রেল সেতুর কাজ ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, খুলনা-মোংলা রুটটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যে কোনোভাবে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুলনায় নির্মাণাধীন রূপসা রেল সেতু সম্পর্কে রেলমন্ত্রী বলেন, সমস্যা যাই হোক না কেন, সেগুলো সমাধান করে এই সময়ের মধ্যেই (ডিসেম্বর ২০২১) কাজ শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, এই রুটে রেল যোগাযোগ চালু হয়ে গেলে মোংলা বন্দর দিয়ে আসা বিভিন্ন পণ্য দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করা যাবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ এবং এই দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পারবে।
রূপসা রেল সেতু ডিজাইনে ত্রæটি : এদিকে গত বছরে প্রকল্পের বড় ধরনের ত্রæটি ধরা পড়েছে রূপসা রেল সেতু নির্মাণে। আগের নকশা অনুযায়ী, পাইলগুলো নির্ধারিত লোড বহন করতে সক্ষম না হওয়ায় সেগুলোর দৈর্ঘ্য বাড়াতে হচ্ছে। এদিকে প্রতিটি স্কিউ (কিছুটা তির্যক) রেল সেতুকে সোজা করে নির্মাণ করায় লাইনার ওয়াটারওয়েকে কাভার করার জন্য সেতুগুলোর স্প্যান বাড়াতে হয়েছে। এছাড়া আরডিএসও স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে নির্মাণ সময় কমানোর জন্য কিছু থ্রো-টাইপ সেতুকে প্লেট গ্রিডার সেতুতে নির্মাণ করায় সেতুর লেভেল বেড়ে গেছে। ফলে এ উচ্চ লেভেলকে মেলানোর জন্য দুপাশে ফরমেশন লেভেল/এমব্যাংকমেন্ট প্রোফাইলের উচ্চতা বেড়েছে। এতে বেড়েছে এমব্যাংকমেন্ট ফাইলের পরিমাণও। বেড়েছে সময় ও ব্যয়।
প্রকল্পের জমা দেয়া নথিতে আরো বলা হয়েছে, মাটির মান ভালো না হওয়ায় ৩১টি সেতু এবং ১০৭টি কালভার্টের পাইলের দৈর্ঘ্যও বাড়াতে হয়েছে। এতে করে এই কাঠামোগুলোর নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পের জন্য আরো ৯১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এদিকে রেল ভবন সূত্র বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৭ মাসে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩-৪ শতাংশ, সেখানে ২০২২-এর ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়