ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

স্বজনের জীবন বাঁচাতে করুণ আকুতি

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করুণ শব্দে সাঁই সাঁই করে ছুটে এসে জড়ো হচ্ছে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স। সারিবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে মুমূর্ষু কারো কারো মুখে কৃত্রিম বাতাস ঠেসে ধরা। কেউবা প্রাণ হারিয়েছেন পথেই। নির্জীব দেহটাই কেবল পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সের শয্যায়। কারো জরুরি চিকিৎসা দরকার। কারো দরকার মৃত্যুর ঘোষণাপত্র। কিন্তু হাসপাতালের ভেতর থেকে ডাক্তার নার্স কেউই আসছেন না ধারেকাছে। বেলা গড়াতেই ঝাঁপ খোলা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে রোগীর স্বজনদের হাহাকার আর আর্তনাদ কেবল বাড়তেই থাকে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সবচেয়ে বড় ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দেখা গেছে এমন করুণ দৃশ্য!
মুখটা হা করা। হয়তো শেষবারের মতো পৃথিবীর বাতাস শুষে নিতে চেয়েছিল বুকের ভেতরে। কিন্তু পারেননি। ধুম করে নিস্তেজ হয়ে গেছে আবদুর রহমানের বুকের পাঁজরগুলো। সঙ্গে থাকা স্ত্রী বিবি আমেনা বুকে পাঁচ-পাঁচ দশ আঙুলে চাপ দিচ্ছেন একটু পর পরই। কাজ হচ্ছে না। চিৎকার করে বিলাপ করছেন- ‘ডাক্তার, ও ডাক্তার একবার আসেন। মানুষটা নাই, সত্যিই নাই? ও ডাক্তার আসেন একটু’। এবার সিলিন্ডার অক্সিজেনের বোতলটা ধরে ঝাঁকালেন জোরে। ফের বুকে পিঠে চাপ দিচ্ছিলেন। অচেতন স্বামীর জ্ঞান ফিরে পেতে পাগলের মতো ছটফট করছিলেন বিবি আমেনা। কিছুক্ষণ পর পরই তাকিয়ে থাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দিকে। কিন্তু ডাক্তার আসে না। বিবি আমেনা এবার জোরে জোরে বিলাপ করে বলতে থাকেন- আমরা গরিব বইলাই ডাক্তার আসে না, দ্যাখে না, আমরা কই যামু? কার কাছে বিচার দিমু? ততক্ষণে ছেলে হোসেন মিয়া হাসপাতলের বারান্দায় ডাক্তারের খোঁজ করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন অ্যাম্বুলেন্সে অচেতন হয়ে পড়ে থাকা বাবা আব্দুর রহমানের কাছে।

দীর্ঘ ৪০ মিনিট অসহায় অপেক্ষা আর কান্নাকাটির পর অবশেষে একটি অক্সিমিটার নিয়ে একজন আয়া আসলেন। আব্দুর রহমানের হাতের আঙ্গুলে কিছু সময় লাগিয়ে রেখে কোনো রেজাল্ট জানাতে পারেননি তিনি। এভাবে কাটলো আরো ৪০ মিনিট। দুপুর দেড়টার দিকে একটি ট্রেসার এসে দাঁড়াল তার অ্যাম্বুলেন্সের সামনে। ততক্ষণে নিথর স্বামী বেঁচে আছেন এই আশা ছেড়ে দিয়েছেন বিবি আমেনা। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে স্বামী আব্দুর রহমানকে নিয়ে রাজধানীর মহাখালীর করোনা হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি।
আব্দুর রহমানের স্ত্রী বিবি আমেনার মতোই বুকফাটা আর্তনাদ বারো বছরের ছোট্ট মেয়ে ইউসার। ‘আম্মু তো আমাকে রেখে কবরে একা থাকতে পারবে না, থাকে নাই কোনোদিন। আল্লাহ, তুমি কেন আমার আম্মুকে নিয়া গেলা? আমার তো আব্বুও নাই। আম্মু তুমি যেও না আম্মু’ চিৎকার করে এভাবেই বিলাপ করছিল ইউসা।
করোনা আক্রান্ত মাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে তিনটা হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে এসেছিল ডিএনসিসি করোনা হাসপাতলে। মাকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে নিতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক ঘণ্টার উপরে। ইউসা জানায়, শ্বাসকষ্টে দম নিতে পারছিলেন না তার মা ফিরোজা বেগম। অ্যা¤ু^লেন্সেই জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। অচেতন অবস্থায় জরুরি বিভাগে নেয়ার দশ মিনিট পরে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিকাল ৩টা পর্যন্ত ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালের সামনে ১১টি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা রোগীদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালের কোনো ডাক্তার, নার্স বা কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। রোগী নামানোর জন্য পর্যাপ্ত ট্রলির ব্যবস্থা নেই। রোগীর স্বজনরাই তাদের জরুরি বিভাগে নেন। এতে নতুন আসা রোগীদের স্বজনদের আক্ষেপ আর অপেক্ষা ফুরায় না।
অ্যাম্বুলেন্সের সামনে অপেক্ষারত একজন চালক বলেন, এই হাসপাতালের অবস্থা এমনই। প্রতিদিন অনেক রোগী আসে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে কোনো রোগীকে হাসপাতালের লোকজন নামায় না। ডাক্তার নার্স কেউই তো বাইরে আসে না। রোগীর লোকজনই রোগীকে হাসপাতালে নেন। এ নিয়ে আমরা কথা বললে সমস্যা। অনেক সময় আমরা চালকরা রোগীদের জরুরি বিভাগ পর্যন্ত দিয়ে আসি। জরুরি বিভাগের বাইরের যদি অবস্থা এই হয়, তাহলে ভেতরের অবস্থা কী? তা বুঝে নেন।
দেড় ঘণ্টা ধরে অ্যাম্বুলেন্সে থাকার পর রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের জরুরি বিভাগ থেকে অ্যাম্বুলেন্সের একটা বড় দূরত্ব রয়েছে। সেখানে একটা সমস্যা হচ্ছে। আমাদের জনবলেও ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে ম্যানেজ করা একটু কষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও গত দুচারদিন ধরে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটও দেখা দিয়েছে।
তিনি জানান, আজ (গতকাল) সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগী রয়েছেন ৫৬৪ জন। এদের মধ্যে ১১২ জন আইসিইউতে এবং ২৮৮ জন এসডিইউতে রয়েছে। হাসপাতালটির আইসিইউ এবং এসডিইই রোগীতে পূর্ণ। এছাড়া সাধারণ বেডে ৫৪ জন রোগী রয়েছে। গত সোমবার ৬৯ নতুন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। ছুটি পেয়েছেন ৪০ জন। এ থেকে কর্তৃপক্ষকে ১১৯ জনের বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়