ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

সোনার পদকের লড়াইয়ে চীনের আধিপত্য

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দেখতে দেখতে সমাপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে টোকিও অলিম্পিক। চার দিন পর পর্দা নামবে এবারের অলিম্পিকের। এরই মধ্যে টোকিও অলিম্পিকে ঘটেছে নানা ঘটনা। প্রতিদিনই পদক তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশের নাম। কাতারকে প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ এনে দেন ভারোত্তোলক ফারেস এলবাখ। টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ফোরামে ছেলেদের ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে দাপট দেখিয়ে জিতেছেন তিনি। এলবাখ স্ন্যাকে ১৭৭ কেজি এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ২২৫ কেজিসহ মোট ৪০২ কেজি উত্তোলন করেন। তারপর চেষ্টা করেছিলেন ক্লিন অ্যান্ড জার্কের বিশ্ব রেকর্ড ২৩২ কেজি তুলতে, তবে কোমর উচ্চতার বেশি উঠাতে পারেননি। ২০১৬ সালে রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকে এলবাখ সপ্তম হয়েছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৮। পাঁচ বছর পর অনেকটাই পরিণত হয়ে এসে সোনার দেখা পেলেন কাতারের এই ভারোত্তোলক, মোট তুলেছেন ৪০২ কেজি। অলিম্পিকে কাতারকে দ্বিতীয় স্বর্ণ এনে দেন হাইজাম্পার মুতাজ ঈসা বারসিম। এবার হাইজাম্পে ১১৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম অলিম্পিক সোনা ভাগ করে নেন কাতারের মুতাজ ঈসা বারসিম এবং ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি। নির্ধারিত নিয়মে খেলা সমতায় শেষ না হলে খেলা গড়াবে টাইব্রেকারে, বিশ্বের প্রায় সব খেলাতেই তো নিয়মটা এমন। হাইজাম্পেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কাতারের মুতাজ ঈসা বারসিম আর ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি ব্যতিক্রম এক নজিরই স্থাপন করলেন। টাইব্রেকারের প্রস্তাব নাকচ করে সোনা নিলেন ভাগাভাগি করে। তাতেই দুজনের বন্ধুত্বটা ঠাঁই করে নিল ইতিহাসের পাতায়। অলিম্পিকের ১১৩ বছরের ইতিহাসে যে এমন কিছু দেখেনি কেউ।
গত অলিম্পিকে ৪৬ স্বর্ণ জিতে পদক তালিকায় শীর্ষে ছিল আমেরিকা। এবার এশিয়ার মাটিতে চীন আধিপাত্য বিস্তার করছে। ১১তম দিন শেষে চীন ৩২ স্বর্ণ, ২০ রৌপ্য এবং ১৬ ব্রোঞ্জসহ ৬৮ পদক নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়ে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে চীন। আমেরিকা ২৪ স্বর্ণ, ২৭ রৌপ্য এবং ২০ ব্রোঞ্জসহ ৭১ পদক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জাপান রয়েছে তৃতীয় স্থানে। তারা ১৯ স্বর্ণ, ৬ রৌপ্য এবং ১১ ব্রোঞ্জসহ ৩৬ পদক জিতেছে। অস্ট্রেলিয়া রয়েছে চতুর্থ স্থানে। ১৪ স্বর্ণ, ৪ রৌপ্য এবং ১৫ ব্রোঞ্জসহ ৩৩ পদক জিতেছে তারা। এখন দেখার বিষয় চীন গতবার আমেরিকার ৪৬ স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে কিনা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েদের অলিম্পিক স্প্রিন্টের ডাবল জিতেছেন জ্যামাইকার অ্যালেইন থম্পসন হেরা। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জয়ের পর গতকাল জিতলেন ২০০ মিটার স্প্রিন্টের সোনা। তিনি সময় নিয়েছেন ২১.৫৩ সেকেন্ড। শুরু থেকেই দৌড়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন থম্পসন হেরা। কিন্তু শেষ ৩০ মিটার তাকে ভালোই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন নামিবিয়ার ১৮ বছর বয়সী স্প্রিন্টার ক্রিস্টিয়ান এমবোমা। তিনি ২১.৮১ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতেছেন রৌপ্য পদক। যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাবি টমাস জিতেছেন ব্রোঞ্জ। সময় নিয়েছেন ২১.৯৪ সেকেন্ড।
গতকালও অলিম্পিকে বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে। টোকিও অলিম্পিকে সাইক্লিং ট্র্যাকে গতকাল মাত্র ৬ মিনিটের ব্যবধানে বদলে গেছে বিশ্ব রেকর্ড। আগের দিন নারীদের টিম পারসুট ইভেন্টে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিল জার্মানি। গতকাল সেটি ভেঙে দেয় গ্রেট ব্রিটেন। তবে রেকর্ড পুনরুদ্ধার করতে মাত্র ৬ মিনিট নিয়েছে জার্মানির নারীরা। মাত্র ৪ মিনিট ৬.১৫৯ সেকেন্ডে ৪ মিটার ইভেন্টের প্রতিযোগিতা শেষ করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে জার্মানি।
সোমবার কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ৪ মিনিট ৭.৩০৭ সেকেন্ড নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিল জার্মানি। মঙ্গলবার তিন নম্বর হিটে সেটি ভেঙে দেয় গ্রেট ব্রিটেন। তারা সময় নেয় ৪ মিনিট ৬.৭৪৮ সেকেন্ড। ঠিক পরের হিটেই নিজেদের রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে নেয় জার্মানি। তাও মাত্র ৬ মিনিটের ব্যবধানে।
টোকিও অলিম্পিকের ১১তম দিনে গতকাল শুরুতেই অবিশ্বাস্য কীর্তির জন্ম দিয়েছেন নরওয়ের কারস্টেন ওয়ারহোম। পুরুষদের ৪০০ মিটার হার্ডলস শেষ করেছেন ৪৫.৯৪ সেকেন্ডে। যা নতুন অলিম্পিক ও বিশ্ব রেকর্ড। চলতি বছরের জুলাইয়ে নিজ দেশ নরওয়েতে ৪৬.৭০ সেকেন্ডে হার্ডলস শেষ করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন কারস্টেন। আর অলিম্পিক রেকর্ড ছিল ৪৬.৭৮ সেকেন্ডের, যা গড়া হয় ১৯৯২ সালের আসরে। আজ এ দুটিই ভেঙে দিলেন কারস্টেন।
বিশ্ব রেকর্ড গড়ার পথে দৌড়ের শুরুতেই বাকিদের পেছনে ফেলে দেন কারস্টেন। তবে তার কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাই বেনজামিন। শেষ পর্যন্ত মাত্র ০.২৩ সেকেন্ডের ব্যবধানে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জিতেছেন এ নরওয়েজিয়ান। জাপানের ২০ বছর বয়সি তরুণী সেনা ইরি ইতিহাসই গড়ে বসলেন বটে। নারীদের বক্সিংয়ে ইতিহাসে যে কখনোই অলিম্পিক সোনা পায়নি তার দেশ জাপান। সে অধরা সোনাটাই তিনি জিতলেন টোকিও অলিম্পিকে। গড়লেন ইতিহাসও, ফেদারওয়েট বক্সিংয়ে ৫৪-৫৭ কেজি শ্রেণির ফাইনালে ফিলিপাইনের নেস্থি পেতেসিওকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। কুগিকান এরেনায় গতকাল খেলার শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল সেনার। এরপর বিচারকদের রায়ে ৫-০ ব্যবধানে জিতেছেন তিনি।
এমন আধিপত্যের পরও পেতেসিও ম্যাচ শেষে জানালেন, এই ম্যাচেও তার মনে জমেছিল শঙ্কার মেঘ। প্রতিপক্ষ পেতেসিও এমন চোয়ালবদ্ধ প্রতিরোধই গড়ে তুলেছিলেন তার বিপক্ষে। বললেন, ‘ওর কারণে বারবার আমাকে পেছাতে হচ্ছিল। তাই এক সময় মনে হচ্ছিল, হেরে যাচ্ছি হয়তো। তবে শেষ পর্যন্ত জিততে পেরে অনেক খুশি আমি।
টোকিও অলিম্পিকসের এবারের আসরে প্রথম পুরুষ ডোপপাপী আব্রামিয়ান। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় অ্যাথলেট। এর আগে ডোপ টেস্টে ধরা পড়েছিলেন নাইজেরিয়ার মহিলা স্প্রিন্টার ব্লেসিং ওকাগবারে। জর্জিয়ান শট পুটার বেনিক আব্রামিয়ানের নুমনায় নিষিদ্ধ স্টেরয়েড পেয়েছে ইন্টারন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (আইটিএ)। ৩৬ বছর বয়সী এই অ্যাথলেটকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের রিও দে জেনেইরো অলিম্পিকে অংশ নেওয়া আব্রামিয়ানের টোকিওতে পরীক্ষা করা হয়েছিল গত শনিবার। আইটিএ জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার (বি-স্যাম্পল) পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন জার্জিয়ান অ্যাথলেট। আইটিএ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, অ্যাথলেটকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে এবং বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
চারটি অলিম্পিকেই তো অংশগ্রহণ করা অনেকটা স্বপ্নের মতো। এত বয়স পর্যন্ত শরীরর ফিট রেখে, নিজেকে সেরার আসনে রেখে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করাটাই তো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু কিউবান অ্যাথলেট মিজান লোপেজ যে ইতিহাস তৈরি করলেন, তা রীতিমতো প্রতিটি অ্যাথলেটের জন্যই দারুণ একটি শিক্ষা।
শুধু অংশগ্রহণেই সীমাবদ্ধ থাকেননি মিজান লোপেজ। টানা চারটি অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে রীতিমত রেকর্ড গড়েছেন তিনি। গ্রেকো-রোমান বিভাগে প্রথম কুস্তিগীর হিসেবে পরপর চার অলিম্পিকে সোনা জয়ের রেকর্ড গড়েছেন মিজান।
মিজান লোপেজের কৃতিত্ব বিরল হলেও একমাত্র নয়। কারণ কুস্তিতে আরও একজনের চার আসরে চারটি স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড রয়েছে। তিনি হলেন জাপানের কাউরি ইচো। জাপানের এই কুস্তিগীর অবশ্য ফ্রি-স্টাইলে পরপর চারটি অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন। ২০০৪, ২০০৮, ২০১২ এবং ২০১৬ অলিম্পিকে সোনা জেতেন কাউরি ইচো।
২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকে যাত্রা শুরু মিজান লোপেজের। এরপর ২০২০ টোকিও অলিম্পিক পর্যন্ত টানা চারবার সোনা জিতলেন কিউবার তারকা কুস্তিগির মিজান লোপেজ। এবার টোকিওতে সোনা জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই নজিরও গড়ে ফেললেন তিনি।
মিজান ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক, ২০১৬ রিও অলিম্পিক এবং এবার টোকিও অলিম্পিকে সোনা জিতলেন। জর্জিয়ার লাকোবি কাজাইয়াকে গ্রেকো-রোমান ১৩০ কেজি ওজন শেয় ফাইনালে ৫-০ পরাজিত করেন মিজান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়