শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

দুর্ভোগ সঙ্গী করে আতঙ্কের শহরে : ফেরি ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় >> মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শিল্পকারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থ?লে ফিরে আসার সুবিধার্থে ১৬ ঘণ্টার জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করায় গতকাল রবিবার ঢাকামুখী পথে মানুষের ঢল নামে। করোনার আতঙ্কের মধ্যে চরম দুর্ভোগ সঙ্গী করেই গন্তব্যে ফিরেছেন তারা। লঞ্চগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। যানবাহনের চাপে প্রতিটি সড়কেই ছিল দীর্ঘ যানজট। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল সারা দিন থেমে থেমে চলে যানবাহন। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার সব ফেরি এবং লঞ্চে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অনেকটা জীবন বাজি রেখেই ফেরি পার হতে হয়েছে তাদের। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। এদিকে অনুমতি সত্ত্বেও গতকাল দেশের অধিকাংশ নৌরুটেই দূরপাল্লার লঞ্চ চলেনি।
চলমান ‘কঠোর লকডাউন’ শেষ হওয়ার চার দিন আগেই শনিবার গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের কাজে যোগদানের তাগিদ দেন। চাকরি হারানোর ভয়ে ওইদিনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন হাজার হাজার শ্রমিক। কিন্তু লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দলে দলে হেঁটে যাত্রা করেন তারা। শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরাতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১৬ ঘণ্টার জন্য গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। এই সুযোগে শ্রমিক ছাড়াও সড়কে সব শ্রেণীর মানুষের ঢল নামে। এতে ঢাকামুখী মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। গত শনিবার রাত ৮টায় সরকারের পক্ষ

থেকে হঠাৎ করেই গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা দেয়ার পর সব জেলা থেকেই মানুষ বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোয় হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এই সুযোগে পরিবহন ব্যবসায়ীরাও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে সব সিটে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। এরপরও বাসযাত্রীদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে শতভাগ আসনে যাত্রী নেয়ার পরও পথে পথে থামিয়ে আরো যাত্রী তুলে দাঁড় করিয়ে আনা হয়।
উত্তরবঙ্গ থেকে আসা গণপরিবহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাই?ল মহাসড়?কের এলেঙ্গা থেকে রাবনা বাইপাস পর্যন্ত মহাসড়কে শনিবার রাত থেকেই ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে রাতভর থেমে থেমে চলে যানবাহন। রবিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই যানজট ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও শনিবার মধ্যরাত থেকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় থেমে থেমে যানবাহন চলেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সব যানবাহন ধীরগতিতে চলেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে শনিবার রাতে রওনা হয়ে রবিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছে কর্মস্থলে যাওয়ার কথা থাকলেও পথের ভোগান্তির কারণে রবিবার দুপুরের দিকেও তাদেরকে মহাসড়কের যানজটের আটকে থাকতে হয়।
মহাসড়কের বি?ভিন্ন স্থানে কর্মস্থ?লে ফেরা মানুষ?দের উপ?চে পড়া ভিড় ছিল। পর্যাপ্ত গণপরিবহন না পাওয়ায় মানুষ ট্রাক, মিনি ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেটকার, সিএনজি ও মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছে। চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এবং ঝুঁকি নিয়ে লাখ লাখ মানুষ কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করে। দেশের অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কেও ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।
মুন্সীগঞ্জে শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যানবাহন ও মানুষের চাপে গতকাল ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সবগুলো ফেরি ধারণক্ষমতার তিন-চার গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে ফিরেছে। উভয় ঘাটে ১৬টি করে ফেরি চলাচল করলেও দুপুর পর্যন্ত মানুষের ভিড় কমেনি।
শহীদ বরকত নামের একটি ফেরি সকালে বাংলাবাজার ঘাট থেকে প্রায় তিন হাজার যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ঘাট এসে পৌঁছে বলে জানা গেছে। যাত্রীর চাপে এই ফেরিতে একটি মোটরসাইকেল পর্যন্ত উঠানো সম্ভব হয়নি। শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চে যাত্রী পারাপারে কোনো বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করা হয়নি। ফেরির মতো লঞ্চগুলোতেও ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি যাত্রী পারাপার করা হয়। অবশ্য শিমুলিয়া ঘাটে স্থানীয় প্রশাসন কয়েকটি লঞ্চের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফেরার জন্য গণপরিবহন খুলে দেয়া হলেও পরিকল্পনার অভাবে তা ভেস্তে গেছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়কে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি থাকলেও সারা দিনই রাজধানীর সড়কগুলোয় সব ধরনের যানবাহন অবাধে চলাচল করেছে। সকাল থেকে কোনো রাস্তায়ই পুলিশের ব্যারিকেড বা তৎপরতা ছিল না। এ কারণে বিকাল পর্যন্ত অবাধে বাসের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশা, হিউম্যান হলার ও অন্যান্য গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় মাত্র ১০ শতাংশ বাস চলাচল করেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য চলাচলের অনুমতি দেয়ায় অনেক মালিক তাদের বাস রাস্তায় নামতে দেননি। আবার বেশির ভাগ পরিবহন শ্রমিক ঢাকার বাইরে থাকায় মালিকের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় বাস নামাতে পারেননি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে রজনীগন্ধা, মিডওয়ে, সিটি বাস’সহ সব রুটের বাস চলাচল করেছে।
মালিবাগে রাইদা পরিবহনের চালক হাবিবুর জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু যাত্রী একেবারেই কম। রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে গতকাল খুব কমসংখ্যক বাস ঢাকার বাইরে গেছে। এসব এলাকায় ঢাকার বাইরে যাওয়া যাত্রী দেখা মেলেনি। ঢাকার বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে।
এদিকে দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচলের অনুমতি থাকলেও সদরঘাটের সঙ্গে ৪০টি নৌরুটের মধ্যে মাত্র চারটি রুটের লঞ্চ চলাচল করেছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন রুটের লঞ্চ চলাচল করেনি। হঠাৎ চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও প্রস্তুতি না থাকায় লঞ্চগুলো ঘাট ছাড়েনি বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়