ভূমিহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণের দাবি বিএনপির

আগের সংবাদ

ঈদ ঘিরে লকডাউন শিথিল : ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিন সারাদেশে বিধিনিষেধ শিথিল, আজ প্রজ্ঞাপন

পরের সংবাদ

নেইমারের হাসি-কান্না

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : এক কনফেডারেশন কাপ ছাড়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোনো অর্জন নেই নেইমার জুনিয়রের। ব্রাজিলের জার্সিতে গতকাল তার সামনে এসেছিল কোপা আমেরিকা জেতার সুযোগ। নিজেদের মাটিতে এ কাপটা হাতছাড়া হলো তার। তর্কসাপেক্ষে সময়ের তৃতীয় সেরা খেলোয়াড়ের তাই কান্না করা তো স্বাভাবিকই। মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-০ গোলে হারার পর নেইমার কেঁদেছেনও। তার ও সতীর্থদের অশ্রæজলে ভিজেছে মারাকানা স্টেডিয়াম। ক্ষণকাল পরেই পরম বন্ধু লিওনেল মেসির সঙ্গে হাসিতেও মেতেছেন তিনি। খুনসুটি করেছেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের সঙ্গেও।
মারাকানার ফাইনালের আগে নেইমার বলেছিলেন তারা আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে হারাবেন। নেইমারের পক্ষ থেকে কথাটা ছিল এক প্রকার নিশ্চিত করেই। মাঠের খেলায় হলো তার উল্টোটা। শিরোপা জিতেছে মেসির দল। পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার প্রহরও শেষ হয়েছে। মেসিরা আনন্দে ভাসলেও নয়ন জলে ভেসেছেন নেইমার। গতবার তার দল যখন কোপা জিতেছে, তখন স্কোয়াডে ছিলেন না তিনি। এবার দলে থেকেও ফাইনাল থেকে অতৃপ্তি নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে।
ফাইনালে হারলেও টুর্নামেন্টে স্বপ্রতিভায় উজ্জ্বল ছিলেন নেইমার জুনিয়র। টুর্নামেন্টে দুটি গোলের পাশাপাশি তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। গোলে অবদানের ক্ষেত্রে মেসির পরই তার নাম। গোল-অ্যাসিস্ট মিলিয়ে মেসি অবদান রেখেছেন ৯টি গোলে। ফলস্বরূপ নেইমার মেসির সঙ্গে যৌথভাবে এবারের কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ এবারের কোপায় একটি ম্যাচে বেঞ্চেও ছিলেন না তিনি।
কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেছিলেন তিনি। ওই ম্যাচে গ্যাব্রিয়েল বারবোসার গোলে সহায়তাও করেন তিনি। পরের ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে নেইমার নিজের অন্য গোলটি পান। ব্রাজিল ওই ম্যাচ জিতে ৪-০ গোলের ব্যবধানে। নেইমার অ্যাসিস্ট করেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের তৃতীয় ম্যাচেও। সেমিফাইনালে পেরুর বিপক্ষে ব্রাজিলের ১-০ গোলে জেতা ম্যাচেও লুকাস পাকুয়েতার গোলটিতে অবদান ছিল তার।
ব্রাজিল কোপা আমেরিকায় ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেবার ইনজুরির কারণে তিতের দলে ছিলেন না পিএসজি তারকা। না হলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আজ একটা শিরোপা হতো তার। ২০১০ সালে ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারের অভিষেক হয়। ওই বছরের ১০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অভিষেকেই গোল করেন তিনি। ব্রাজিল জয় পায় ২-০ গোলে। সেই লিকলিকে গড়নের ছেলেটিই এখন ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে। ব্রাজিলের জার্সিতে ১১১ ম্যাচে করেছেন ৬৮ গোল, সেলেসাওদের সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলেকে টপকাতে তার দরকার আর মাত্র ১০ গোল। পেলে ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচে করেছেন ৭৭ গোল।
কোপা আমেরিকার ফাইনালে গতকাল ব্রাজিলকে হারিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর পর প্রথম শিরোপা জয় করেছে আর্জেন্টিনা। এবারের কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা হয়েছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। গ্রুপ পর্বে চিলির বিপক্ষে শুধু ড্র করেছিল দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বাকি সব ম্যাচে পেয়েছে জয়। কোপা আমেরিকা ২০২১ এ আর্জেন্টিনা সব মিলিয়ে গোল করেছে ১২টি। অন্যদিকে তারা গোল হজম করেছে মাত্র তিনটি। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ম্যাচ খেলেছে সাতটি। তারা গোল হজম করেছে তিনটি ম্যাচে। আর বাকি চার ম্যাচে আর্জেন্টাইনদের পরাস্ত করে তাদের জালে বল পাঠাতে পারেনি কেউ। এবার কোপা আমেরিকায় গোলপোস্টের নিচে আস্থার পরিচয় দিয়েছেন আর্জেন্টিনার সোনার ছেলে মার্টিনেজ। সেমিফাইনালে এবং ফাইনালে দলের প্রয়োজনে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা।
এত কম গোল হজম করার জন্য আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ বড় অবদান রেখেছে। আর সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কোপা আমেরিকায় খেলার আগে এমিলিয়ানোকে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক হিসেবে চিনতেন না খুব বেশি মানুষ। কারণ এবারের কোপার আগে তিনি আর্জেন্টিনার জার্সিতে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেন। ফলে তাকে না চেনারই কথা। কিন্তু তিনি কোপায় নিজের গোলরক্ষক দক্ষতায় আর্জেন্টিনাকে স্বপ্নের শিরোপা এনে দিয়েছেন। যেখানে দুই মাস আগেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার কোনো পরিচিতি ছিল না। সেখানে তিনি এখন আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের এ বছরের জুন মাসে অভিষেক হয় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের মাধ্যমে। প্রথম ম্যাচটি তিনি খেলেন ৩ জুন চিলির বিপক্ষে। সেটি আর্জেন্টিনা ১-১ গোলে ড্র করে। পরের ম্যাচে কলম্বিয়ার হয়েও খেলার সুযোগ পান মার্টিনেজ। সেই ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে মেসিরা করে ২-২ গোলের ড্র। কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা সবমিলিয়ে সাতটি ম্যাচ খেললেও মার্টিনেজ খেলেছেন ছয় ম্যাচে। তিনি খেলেননি শুধু বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে। ইনজুরি সমস্যার কারণে তাকে ওই ম্যাচে বসে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু মার্টিনেজ প্রথম থেকেই ছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনির প্রথম পছন্দ। ফলে তিনি পরের ম্যাচগুলোতে আবার ফেরেন। মার্টিনেজ আসল পরীক্ষাটি দেন সেমিফাইনালে। শেষ চারে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ড্র হওয়ার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে তিনি কলম্বিয়ার তিনটি শট ঠেকিয়ে দেন। সেমির মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে তিনটি শট ঠেকিয়ে দেয়া চাট্টিখানি কথা না। সেই কাজটিই বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে করেন মার্টিনেজ।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনাও পেনাল্টি মিস করে বসেছিল। ফলে ওই ম্যাচটিতে মেসিদের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মার্টিনেজ তার অসাধারণ দক্ষতায় আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে যান এবং দলকে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতিয়ে এরপরই ক্ষান্ত হন। আর দলকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর শিরোপা এনে দেয়ার পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন হাতেনাতে। তিনি এবারের কোপা আমেরিকার সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৯২ সালে জন্ম নেয়া ২৯ বছর বয়সি সালে ইমিলিয়ানো মার্টিনেজের আর্জেন্টিনার জার্সিতে ২০২১ সালে তার অভিষেক হলেও তিনি ২০১১ সালে প্রথমবার ও ২০১৯ সালের দ্বিতীয়বার দলে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু দুবারই তাকে বসে থাকতে হয়েছিল। মানে দলে ডাক পড়লেও অন্য গোলরক্ষকদের কারণে একাদশে আর জায়গা হয়নি তার। আর দলে ডাক পেয়েও তার জন্য ম্যাচ না খেলতে পারার অনুভূতিটা কষ্টকর ছিল এ নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। হয়তো তার আত্মবিশ্বাস ছিল তিনি ঠিকই একদিন নিজের প্রতিভার সম্মান পাবেন। তাই তো একটুও বিচলিত না হয়ে খেলা চালিয়ে যান। অবশেষে এই ২০২১ সালে মেসির সঙ্গে একই ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ তৈরি হয়ে যায় তার।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ক্লাব পর্যায়ে বর্তমানে খেলছেন ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার হয়ে। তাকে যখন অ্যাস্টন ভিলা দলে ভেড়ায় তখন তার নামের পাশে ছিল না কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কিন্তু তার দক্ষতা ও প্রতিভা দেখে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ক্লাবটি তাকে নিয়ে আসে। আর প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলার পরই তাকে আর্জেন্টিনা দলের জন্য ডাকেন কোচ লিওনেল স্কালোনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়