নর্থ সাউথের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন

আগের সংবাদ

৪৫ লাখ গ্রাহকের কী হবে

পরের সংবাদ

বদলে গেছে ঢাকার দৃশ্যপট

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** বিধিনিষেধ অমান্য করায় কয়েকশ আটক, জরিমানা ** যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা **
কাগজ প্রতিবেদক : একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য কঠোর অবস্থানে থাকায় রাজধানীর সড়ক ও গলির দৃশ্যপট বদলে গেছে অনেকটাই। বেশির ভাগ সড়কেই সুনসান নীরবতা। রাস্তায় রিকশা ও পণ্যবাহী যানবাহনের আধিক্য বেশি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো খোলা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত গাড়িতে এবং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আনা- নেয়ায় অফিসের ব্যবস্থাপনায় আরো কিছু যানবাহন চলাচল করছেন। তবে এসব যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনে গতকাল এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ রাস্তায় বের হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ মানুষকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের আট বিভাগে মোট ৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর বাইরে আটক করা হয় ২৪৯ জনকে। নিয়ম না মানায় আটজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও করা হয়েছে। লকডাউনে জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা না মানায় ওই সময় পর্যন্ত ২২২টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে প্রায় তিন লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। নিয়ম না মেনে দোকান খোলা রাখায় ১০ মালিকের কাছ থেকে ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে পুলিশ।
অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল জানান, কেবল ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগেই ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁও থানা এলাকায় ৩০ জন, শিল্পাঞ্চল থানা ৮ জন, মোহাম্মদপুর ২৬ জন, আদাবর থানা ১৮ জন, শেরে বাংলা নগর থানা ৪০ জন এবং হাতিরঝিল থানা পুলিশ ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করে। ওই কর্মকর্তা জানান, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাহতাব উদ্দিন জানান, কঠোর লকডাউনের মধ্যে অপ্রয়োজনে বের হওয়ায় তার এলাকার বিভিন্ন থানায় দুপুর পর্যন্ত একশর বেশি মানুষকে আটক করা

হয়েছে। দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ৯৯ হাজার টাকা। মিরপুর বিভাগে মোট ৯৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক না পরায় মিরপুর দারুস সালাম সড়কে তিনজনকে জরিমানা করেছে র?্যাব-৪ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে দুইজন গাড়ি চালক এবং একজন মোটরসাইকেল চালক। মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম। রমনা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, সকালে রমনা থানার সুগন্ধা মোড় থেকে দুজন এবং শাহবাগ মোড় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া মোহাম্মদপুর জোনে ১০ জনকে এবং লালবাগে ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার ও ২৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২৫ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মতিঝিলে ১৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৯টি দোকানকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দুই ব্যক্তিকে মোট ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পুলিশের ওয়ারী বিভাগে ১৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপ্রয়োজনে বের হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ জনকে। এছাড়া ১৬ জনকে মোট ১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গুলশান বিভাগে ২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় ৬১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয়েছে ৭ জনকে এবং সাজা দেয়া হয় ৮ জনকে। সারাদেশে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথমদিনে বিধিনিষেধ মেনে চলা হচ্ছে কিনা- তা যাচাই করতে পুলিশের মতো র‌্যাবও বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে।
সুনসান রাজধানী : পুলিশ, র‌্যাব (র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন), সেনাবাহিনী ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মানুষের চলাচল খুবই কম ছিল। তার ওপর দফায় দফায় বৃষ্টি মানুষের চলাচল আরো কমিয়ে দেয়। ব্যস্ততম প্রাণচাঞ্চল্যময় রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, ফকিরাপুল, আরামবাগ বাণিজ্যিক এলাকায় একেবারেই সুনসান নীরবতা। এসব এলাকার কোনো দোকানপাট অফিস খোলেনি। তবে জুন ক্লোজিংয়ের কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় সকালেই অফিসে কাজে যোগ দেন। রমনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সকালের দিকে একেবারেই মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি। এলিফ্যান্ট রোডের সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব সড়কের ও অল্পসংখ্যক মানুষের যাতায়াত লক্ষ্য করা গেছে। তবে সকাল ৮টার আগেই এলাকায় কিছু গার্মেন্টস কর্মীরা যথারীতি গার্মেন্টসে পৌঁছেছে। ধানমন্ডি, পান্থপথ, বিজয় সরণি, মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায়ও সকাল থেকে মানুষ এবং যানবাহনের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা অবস্থায় দেখা যায়। নগরীর গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায়ও লোক চলাচল বলতে গেলে ছিলই না। সেনাবাহিনীর টহল থাকায় সকালের দিকে লোকজন তেমন বেরই হয়নি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু রিকশা এবং মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। নগরীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলকারখানা ও গার্মেন্টস খোলা থাকায় সকালের দিকে লোকজনের চলাচল একটু বেশিই ছিল। মিরপুর এলাকায়ও গার্মেন্টস কর্মীদের দলবেঁধে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন মোর, ভিআইপি সড়কও ছিল প্রায় ফাঁকা। হাতিরপুল এলাকায় লোকজনের চলাচল কিছুটা থাকলেও এখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর নয়াবাজার, বাবুবাজার, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে যানবাহনের সংখ্যা এবং মানুষজনের উপস্থিতি সামান্য হয়েছিল। গত কয়েক দিনে সড়কে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে ২/৩ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও গতকাল সকাল থেকে এসব চেকপোস্টে ১০ থেকে ১২ জন পর্যন্ত পুলিশ সদস্য তৎপর ছিলেন।
সকালের দিকেও গাবতলী এলাকায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের চলাচল দেখা গেছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি ছিল। লকডাউনের কাজ না থাকায় তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান। আবার আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে অনেকেই ঢাকায় ঢুকছিলেন। এদের মধ্যে গার্মেন্টস কর্মী বেশি ছিল। নাজিয়া নামে এক গার্মেন্ট কর্মী জানান, তিনি আমিনবাজারে থাকেন। কিন্তু তার গার্মেন্টস মিরপুর এক নম্বর সেকশন এলাকায়। গার্মেন্ট খোলা থাকায় তিনি কাজে যোগ দিতে যাচ্ছেন। চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা এদের পরিচয় জানার পর সবাইকেই যেতে দিয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজন কিংবা জরুরি সার্ভিসের বাইরে থাকা যেসব লোকজন চেকপোস্ট অতিক্রমের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। মোস্তাফিজ নামে এক ব্যক্তি সাভারের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে গাবতলী চেকপোস্টে তিনি পুলিশকে অফিসের আইডি কার্ড দেখাতে না পারায় পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়।
গার্মেন্টস শিল্পকারখানার যেসব গাড়ি কর্মীদের নিয়ে চলাচল করছে সেসব গাড়ির কাগজপত্র দেখার পরে পুলিশ যেতে সহযোগিতা করছে। এই চেকপোস্ট দিয়ে অনেকে প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় তাদেরও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক যানবাহনের কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকায় সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মিরপুর বিভাগের গাবতলী জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার জানান, প্রতিটি চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। তবে অনেক মানুষই বাইরে বের হয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নানান রকমের অজুহাত দেখাচ্ছেন। যারা ঢাকার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সকালে দিকে বিপুলসংখ্যক নি¤œ আয়ের মানুষ ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য গাবতলী পৌঁছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যেতে দেয়া হয়েছে।
নগরীর আব্দুল্লাহপুর এলাকাতেও পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই পয়েন্ট দিয়েও গতকাল ভোরের দিকে লোকজন ঢাকা ছেড়েছে। রাজধানীতে কাজ না থাকায় গাজীপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার এসব বাসিন্দারা ঢাকা ছেড়েছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ অংশের হাইওয়েতে পুলিশ ৬টি চেকপোস্ট বসিয়ে যন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার এলাকার ওয়াপদা রোড, ব্যাংক কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি টহল দিয়েছে। পৃথকভাবে সেনা সদস্যরা টহল দিচ্ছে।
এদিকে কঠোর বিধিনিষেধের আরোপের পর ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক, শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিধিনিষেধ কার্যকর করার দায়িত্বে রয়েছে। এই ঘাটে ফেরি চলাচল করলেও শুধু পণ্যবাহী যানবাহন, এম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন পারাপার করা হয়নি। শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় এক রকম ফাঁকাই বলা চলে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাট ইউ যানবাহন এবং মানুষ না থাকায় ফাঁকা রয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে। উভয় ফেরিঘাটে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়