টুকরো খবর

আগের সংবাদ

জোড়াতালির বাঁধে উৎকণ্ঠা ** বর্ষার শুরুতেই নদীভাঙন ** দ্রুত বাঁধ মেরামতের দাবি ** সোচ্চার হচ্ছেন এমপিরা **

পরের সংবাদ

টাকা পাচার হয় পাঁচ কারণে ** ৩৬ দেশে পাচার হচ্ছে টাকা, সবচেয়ে বেশি ১০ দেশে ** হাতেগোনা মামলা হলেও আটকে আছে আইনি জটিলতায় **

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নাকের ডগা দিয়েই প্রতি বছর ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হচ্ছে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। বাংলাদেশ থেকে এসব অর্থ যাচ্ছে পৃথিবীর ৩৬ দেশে। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে ১০ দেশে। যার বড় অংশই জমা হচ্ছে সুইস ব্যাংকে। মূলত অর্থ পাচারের ঘটনায় পাঁচ কারণকে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে রয়েছেÑ বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, আইনের শাসনের ঘাটতি এবং বেপরোয়া দুর্নীতি।
এদিকে, পরিমাণে অল্প হলেও, টাকা পাচারের নতুন মাধ্যম হয়ে উঠছে বিভিন্ন অ্যাপস। স¤প্রতি বিগো লাইভ ও লাইকির মাধ্যমে প্রতি মাসে শত কোটি টাকা পাচারের ঘটনাও সামনে এসেছে। দেখা গেছে, গত ৫ বছরে অর্থ পাচারের ১ হাজার ২৪টি প্রতিবেদন চ‚ড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ)। বিদেশি সংস্থার উপাত্তেও মিলেছে ভয়াবহ খবর। তারপরও মামলা হয়েছে হাতেগোনা। সেগুলোও আটকে আছে আইনি জটিলতায়। দুদক বলছে, মামলার ফল না আসা পর্যন্ত পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আর বিশ্লেষকদের অভিযোগ, সরকার আন্তরিক নয় বলেই টাকা পাচার বাড়ছে। তাই এবার টাকা পাচার বন্ধে, অর্থ লেনদেনের গতিবিধি ডিজিটাল মাধ্যমে তদারকি করতে নতুন আইন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যমান কিছু আইনেও সংশোধন আনা হবে। তবে, টাকা পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি করেছেন দুদকের আইনজীবীরা। 
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া সম্ভব নয়। আবার ব্যাংকের মাধ্যমেও মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই যা করার কাস্টমসকেই করতে হবে। কেন বাড়ছে টাকা পাচার? এমন প্রশ্নের জবাবে পাঁচটি কারণ তুলে ধরেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব,

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, আইনের শাসনের ঘাটতি এবং বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগে অর্থ পাচার কমছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ থেকে যে টাকা বাইরে চলে যায়, তা আর ফিরে আসে না। সুতরাং কালো টাকা সাদা করার সঙ্গে অর্থ পাচার কম হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা বহুদিনের। তবে নতুন করে আলোচনায় আসে ২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে ২২৭ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পায় দুদক। দেশের বাইরে টাকা সরিয়ে বাড়ি কেনার খবরও পুরনো। কিন্তু এবার নাম এসেছে সংসদ সদস্যদের। নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী, জান্নাতীর নামে কানাডার বেগমপাড়ায় সাড়ে ১২ কোটি টাকায় বাড়ির কেনার খবর প্রচার হয়েছে গণমাধ্যমে। বাসিন্দা না হয়েও, কানাডায় বাড়ির মালিক হওয়া সহজ। মোট দামের ওপর মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। জানাতে হয় না টাকার উৎসও। আর তাই ক্রমাগত কানাডা হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজদের টাকা পাচারের পছন্দের গন্তব্য। কানাডার সরকারি সংস্থা ফিনট্রাকের তথ্যÑ এ মহামারির মধ্যে দেশটিতে গত এক বছরে ১ হাজার ৫৮২টি টাকা পাচারের ঘটনা ঘটেছে। মূলত করছাড়, প্রশ্নবিহীন বিনিয়োগের অবাধ সুযোগের প্রলোভন দিয়ে উন্নয়নশীল দেশের টাকা নিজেদের অর্থনীতিতে নিতে আগ্রহী উন্নত দেশগুলো। অর্থ পাচারের খোঁজখবর রাখে, এমন সব বৈশ্বিক সংস্থার তথ্যউপাত্ত বলছে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয় বিশ্বের ৩৬টি দেশে। তবে, সবচেয়ে বেশি হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে ১০ দেশের অর্থনীতি। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ড। আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো বা ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানিতে কম মূল্য দেখানো বা আন্ডার ইনভয়েসিং, আর হুন্ডি টাকা পাচারের জনপ্রিয় মাধ্যম।
গেøাবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটিসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয় এসব মাধ্যমে। কিন্তু এ কৌশল প্রতিরোধে ব্যাংকের কিছু করার নেই; বরং যা করার তা কাস্টমসকেই করতে হবে।
অর্থ পাচারে আমলারাও কম যান না। গত বছরের নভেম্বরে এমন তথ্য জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন নিজেই। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সে সময় তিনি বলেন, গোপনে কানাডার টরন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে। আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে; কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছেÑ সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চার জন। এ ছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরো তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে সংখ্যাটি তত নয়। তিনি বলেন, পাচারের দায় বিদেশি সরকারও এড়াতে পারে না। যেমনÑ সুইজারল্যান্ডে কে ব্যাংকে টাকা রাখলেন, সেই তথ্য আমাদের দেয় না। তারা ট্রান্সপারেন্সির কথা বলে; কিন্তু যদি বলি কার কার টাকা আছে, সেই তথ্য দাও, তখন তারা দেয় না। এটি একটি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।
এরপর গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, কারা টাকা নিয়ে যায়, তালিকা আমার কাছে নেই। বিরোধী সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নামগুলো আমাদের দেন। কাজটি করা আমাদের জন্য সহজ হবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই তালিকা তো অর্থমন্ত্রীর কাছেই থাকার কথা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। সেখান থেকে অতি সহজেই তিনি তালিকা পেতে পারেন।
জানা গেছে, গত ৫ বছরে অর্থ পাচারের ১০২৪টি প্রতিবেদন চ‚ড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। বিদেশি সংস্থার উপাত্তেও মিলেছে ভয়াবহ খবর। জিএফআইসহ বিভিন্ন সূত্র বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ৮৪ বাংলাদেশির টাকা পাচারের তথ্য এসেছে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সেও। কিন্তু  মামলা হয়েছে হাতেগোনা। জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলনে, ২০১৮-২০ এর মধ্যে ৭৭টি মামলা হয়েছে মানি লন্ডারিংয়ের। ৫০টি মামলা চার্জশিট হয়ে ট্রায়ালে আছে। আর বাকি ২৭টি মামলার তদন্ত হচ্ছে। এগুলো কোর্টে আসতে অনেক সময় লাগে, মমলা নিষ্পত্তি হতে অনেক সময় লাগে। প্রত্যেকটা ধাপ চ্যালেঞ্জ করা হয়। অর্থ পাচার রোধে আছে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন। সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধ ও টাকা পাচার প্রতিরোধে তথ্য লেনদেনের জোট ১৫৯ দেশের এগমন্ড গ্রুপের সদস্যও হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, সদিচ্ছার ঘাটতি, স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তার ঘাটতি অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। যারা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের একটা বড় অংশ রুইকাতলা জাতীয়; যারা আসলে ক্ষমতা ও রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। সে কারণে তাদের গায়ে হাত দেয়া হয় না। প্রশ্নবিহীনভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহুবারই দিয়েছে সরকার। অর্থবিলের এমন বিধান টাকাকে অপ্রদর্শিত রাখার মানসিকতাকে উসকে দেয় বলে মতো আইনজীবীদের।
সুইসব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা : সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ থাকার হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি প্রকাশিত এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে রয়েছে ৫৭ কোটি ৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ফ্রাঁ ৯৫ টাকা ধরে) যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ছিল ৬১ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফলে আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থ কিছুটা কমেছে। তবে বাংলাদেশি গ্রাহকের নামে থাকা আমানত অনেক বেড়েছে।
সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে তাও জানা যায় না। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান সম্পর্কে বলেছে, এসব পরিসংখ্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রাহকের তথ্যের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রাখা হবে। গোপনীয়তার স্বার্থে সব ডাটা সমন্বিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আলাদাভাবে কোনো গ্রাহকের তথ্য নেই। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের বেশির ভাগই বৈদেশিক বাণিজ্যকেন্দ্রিক। গ্রাহকের আমানত হিসাবে যে অর্থ থাকে, তার মধ্যে সুইজারল্যান্ডে এবং অন্যান্য দেশে যেসব বাংলাদেশি থাকেন, তাদের অর্থও রয়েছে। গ্রাহক আমানতের একটি অংশ পাচার হয়ে যেতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। বিএফআইইউর কাছে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা এর আগে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সংবলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে- এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সুইস ব্যাংকগুলোতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অর্থ জমা রাখতে পারেন। তবে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে সে দেশে জমা করার সুযোগ নেই। কঠোর গোপনীয়তার কারণে অর্থ গচ্ছিত রাখার নিরাপদ স্থান হিসেবে সুইজারল্যান্ড অর্থ পাচারকারীদেরও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাপের মুখে সুইস ব্যাংকগুলো এ কঠোর গোপনীয়তার নীতি সা¤প্রতিক বছরগুলোতে অনেক শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তারা তথ্য দিতে বাধ্য। এ জন্য সা¤প্রতিক সময়ে অর্থ গচ্ছিত রাখার প্রবণতা কমতে পারে।
সুইস ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশিদের গচ্ছিত জমার পরিমাণ গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছিল। সে সময় জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০১৭ সালে কমলেও (৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্রাঁ) সেটি আবার ২০১৮ সালে (৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ) বেড়ে যায়। এর পর ২০১৯ ও ২০২০ সালের হিসাবে জমানো অর্থের পরিমাণ কমতে দেখা যাচ্ছে।
টাকা পাচার বন্ধে আসছে নতুন আইন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার দাবি : অর্থ পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রথম সরাসরি আইন ‘মানি লন্ডারিং আইন-২০০২’। শাস্তি ছিল কমপক্ষে ছয় মাস, সর্বোচ্চ সাত বছর জেল। আর অপরাধের সঙ্গে জড়িত অর্থের দ্বিগুণ জরিমানা। এর পরের আইন হয় ২০০৯ সালে। কারাদণ্ডের শাস্তি একই রকম থাকলেও, অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি পুরোটাই বাজেয়াপ্তের বিধান রাখা হয়। পুরনো আইন বাতিল করে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে কার্যকর হয় নতুন আইন। বাড়ানো হয় জেল-জরিমানা, দুটোই। কিন্তু, তাতেও সন্তুষ্ট নন আইনজীবীরা। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, বর্তমান আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ যথেষ্ট নয়। টাকা পাচার রোধে যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকরের দাবি জানান দুদক আইনজীবী। টাকা পাচার বন্ধে বর্তমান আইনের ওপর নির্ভর করতে চান না অর্থমন্ত্রী। তাই উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন আরো একটি আইন তৈরির। সংশোধন হবে আরো কয়েকটি পুরনো আইনের।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে মানিলন্ডারিং আইন সংশোধনের আগ পর্যন্ত ২৭ ধরনের অপরাধ থেকে টাকা পাচারের অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্বে ছিল একমাত্র দুদক। এখন কেবলমাত্র একটি, শুধু ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার দুদকের এখতিয়ারভুক্ত। বাকিগুলোর দায়িত্বে এনবিআর, সিআইডি, বিএসইসি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ অধিদপ্তর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়