জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

দুর্নীতির অভিযোগ : নথিপত্র সংগ্রহে বিমান অফিসে দুদক

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মিসর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজসংক্রান্ত ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান টিমের প্রধান উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম এই অভিযান পরিচালনা করে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলাকা অফিসে এ অভিযান চালায় দুদক টিম।
অভিযান সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মূলত দুদক অনিয়মসংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করতেই এ অভিযান পরিচালনা করে। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ অভিযানে তারা লিজসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করে। আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি বিমান অফিস থেকে শিগগিরই সরবরাহ করার প্রতিশ্রæতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বর্তমান অবস্থান ও কার কতটুকু দায়িত্ব ছিল সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেয় অনুসন্ধান টিম।
এদিকে, দুদকের অভিযানের বিষয়ে বিমান অফিসের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মিসর থেকে বিমান লিজের অনিয়মের বিষয়টির সঙ্গে আগের কমিটির বিভিন্ন লোকজন জড়িত। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুদকের তদন্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা চাই তদন্তে জড়িতরা শনাক্ত হোক।
অন্যদিকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল দুদকের অভিযানের বিষয়ে বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়েছে। বিষয়টি সংসদীয় কমিটিতে ছিল তারা সেটি রেফার করেছে দুদকে। সেটি রেফারের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের টিম এসেছে। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। দুদক যেন নির্বিঘেœ তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য আমাদের লোকজন সেখানে কাজ করছে। দুদককে সর্বোচ্চ সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিমানের ফ্লাইটসংক্রান্ত ডকুমেন্টগুলো আমরা দেখি। আমাদের সব তথ্য প্রিজার্ভ (সংরক্ষিত) আছে। আমি ২০১৮ সালে এখানে যোগদান করি। এর আগে কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। আমি দেখেছি মিসরের দুটি বিমান ভিয়েতনামের বিমানবন্দরে আছে, যেখান থেকে ঠিক করে ফেরত দেয়ার কথা। এই জটিলতার মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমিসহ আমাদের একটি টিম নিয়ে মিসরে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে ফেরত দেয়ার যে আলোচনা সেগুলোতে আমি ছিলাম।
দুদক সূত্র জানায়, বিমানের মিসরীয় এয়ারক্রাফট লিজ নেয়ার প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১নং সাবকমিটি প্রাথমিক তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। দাখিল করা প্রতিবেদনে বিষয়টি আরো গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য দুদকে পাঠানোর সুপারিশ ছিল। সে সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকে অভিযোগ পাঠানোর পর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠায় অনুসন্ধান কমিটি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বরাবর পাঠানো চিঠিতে অনুসন্ধান টিম লিজ নেয়ার দরপত্রসহ অন্তত ১৩ ধরনের নথিপত্র অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহের অনুরোধ করা হয়।
যেসব নথিপত্র তলব করেছে দুদক, ইজিপ্ট এয়ার কর্তৃক রিপোর্ট অব ফিজিক্যাল ইন্সপেকশন অব টু ৭৭৭-২০০ ইআর এয়াক্রাফট শীর্ষক পরিদর্শন প্রতিবেদনের ছায়ালিপি। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর ওই বিমান লিজ নেয়ার জন্য গঠিত টিম, তাদের আদেশ ও এ সংক্রান্ত নথির ছায়ালিপি, ২০০৯ সালের ১১ জুনে অনুষ্ঠিত ফ্লাইট প্ল্যানিং কমিটির লিজ নেয়াসংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্তের ছায়ালিপি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ক্রয় নীতিমালা ও আর্থিক কার্যক্রমের সত্যায়িত ছায়ালিপি, বিমান লিজ নেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্তসংক্রান্ত নথি, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও নোটসহ পূর্ণাঙ্গ নথির সত্যায়িত ছায়ালিপি, লিজ নেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র ও বিজ্ঞপ্তি কোন কোন পত্রিকায় এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে তার রেকর্ডপত্র, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির প্রতিবেদন ও দরপত্রে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলোর তালিকা, লিজ নেয়ার প্রক্রিয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে এয়ারক্রাফট দুটি লিজ নেয়া এবং ফেরত দেয়া পর্যন্ত যাবতীয় ব্যয়ের বিল-ভাউচার, রেজিস্ট্রার, ব্যাংক হিসাব বিবরণী, মুড অব ট্রান্সজেকশনসংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি, এয়ারক্রাফট লিজ নেয়ার উদ্দেশ্যে গঠিত ইন্সপেকশন টিম সদস্যদের নাম, পদবি ও বর্তমান ঠিকানাসহ তালিকা, তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ছায়ালিপি, পাসপোর্টের প্রথম দুই পৃষ্ঠার ফটোকপি এবং মিসরে অবস্থানসংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি, এয়ারক্রাফট দুটির বর্তমান অবস্থা ও অবস্থানসংক্রান্ত তথ্যাদি, বিমানের ৩টা চেক (এসিডি) সংক্রান্ত নিয়মাবলি বা নির্দেশিকাসংক্রান্ত ছায়ালিপি এবং এয়ারক্রাফট উড্ডয়নের সক্ষমতা, যোগ্যতাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিয়মাবলি বা নির্দেশিকা।
জানা যায়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিসর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এতসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১১শ’ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়