আশুলিয়ায় ফার্নিচার গুদামে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

আগের সংবাদ

বাতাসে আগুনের হলকা!

পরের সংবাদ

মধুখালীতে মন্দিরে আগুন : গণপিটুনিতে শ্রমিক নিহত, আহত ৮

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অঞ্জন সাহা রানা, (ফরিদপুর) মধুখালী থেকে : মধুখালীতে একটি কালী মন্দিরে নির্মাণশ্রমিকরা হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে এমন অভিযোগ তুলে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই সহোদর নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টা ও গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে তারা মারা যান। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানাপুলিশের ওসি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত দুই ভাই হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (১৭) ও আশাদুল (১৫)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে সর্বজনীন কালী মন্দিরে আগুন দেয়ার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উত্তেজিত জনতার পিটুনিতে ২ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি পুলিশসহ ৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে মধুখালী থানাপুলিশের একাধিক সদস্য আছেন। জানা যায়, কয়েকদিন ধরে স্থানীয় কালী

মন্দিরসংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সংস্কার কাজের পাশাপাশি টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছিল। হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লীর কালী মন্দিরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মন্দিরের পূজারী তপতী মন্ডল বলেন, পূজা শেষে লাকড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দেখেন শ্রমিকরা মন্দিরসংলগ্ন নসিমন থেকে মালামাল নামাচ্ছেন এবং এর কিছুক্ষণ পরেই তারা মন্দিরে আগুন লেগেছে বলে চিৎকার শুরু করেন। তার পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় মধুখালী থানাপুলিশ। আহত শ্রমিকদের উদ্ধারের সময় উত্তেজিত জনতা তাদের ওপরও হামলার চেষ্টা চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন সাংবাদিকদের বলেন, মাগরিবের নামাজ শেষে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিতের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই হাজার হাজার জনতা। জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনকে ফোনে বিষয়টি জানাই। পরে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। সেখানে মধুখালী থানাপুলিশের পাশাপাশি বালিয়াকান্দি থানাপুলিশ, ফরিদপুর জেলাপুলিশ, রাজবাড়ী জেলাপুলিশ, র‌্যাব-১০, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংবাদকর্মীরা আছেন। তবে স্থানীয় লোকজনকে খুব একটা দেখা যায়নি। পুলিশ কিছুক্ষণ পরপর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ সদস্য, প্রশাসনের লোকজন ও সাংবাদিকরাও জনতার বাধার মুখে পড়ে। পরে জেলা পুলিশের বড় বহর এসে তাদের উদ্ধার করে। সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটি মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে এখনো জানা যায়নি। বিক্ষুব্ধ লোকজন নির্মাণশ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে, মারপিট করেছে।’
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছে। তারা শুক্রবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়