পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন : খলনায়কদের কাছে ভরাডুবি চলচ্চিত্র নায়ক-নায়িকাদের

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে নায়ক-নায়িকরা নেতৃত্ব পাননি। শীর্ষ দুই পদে জয় পেয়েছেন দুই খলনায়ক। চিত্রনায়িকা নিপুণ পরাজিত হয়েছেন খল চরিত্রের অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের কাছে। একসময়ের সাড়া জাগানো চিত্রনায়ক মাহমুদ কলি হেরেছেন খলনায়ক মিশা সওদাগরের কাছে। শুধু কলি-নিপুণ নয়, তাদের প্যানেলের রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে। অনেক নাটকীয়তার পর গত শুক্রবার ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ভোটগণনা শেষে শনিবার ভোররাতে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। নির্বাচনে কলি ও নিপুণ প্যানেল থেকে সম্পাদকীয় পদে একজন ছাড়া বাকি আটটি পদেই বিজয়ী হয়েছেন মিশা-ডিপজল প্যানেলের প্রার্থীরা। কার্যনির্বাহী সদস্যপদে মিশা-ডিপজল পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৯ জন। কলি-নিপুণ প্যানেল থেকে দুজন বিজয়ী হয়েছেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে গেল মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে নতুন করে আলোচনায় আসেন। তখন তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ছিলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। ভোটে এই পদের ফলাফল নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে আদালতের দ্বারস্থ হন নিপুণ ও জায়েদ। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে নিপুণ দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। এই পুরোটা সময় নিপুণের সমালোচনায় মুখর ছিলেন জায়েদ খান। থেমে থাকেননি নিপুণও; তিনি জায়েদের সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তায় বিরক্ত ছিলেন সিনিয়র অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। গেল মেয়াদের সাধারণ সম্পাদক নিপুণ এবারো একই পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। তবে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন নির্বাচনের আগ মুহূর্তে জানান, এই মেয়াদের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে তিনি আর অংশ নেবেন না। হঠাৎ করে সভাপতির এমন ঘোষণায় বেকায়দায় পড়েন নিপুণ। এছাড়া সাইমন সাদিকসহ কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের আরো কয়েকজন সদস্য সরে যাওয়ায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন এই নায়িকা।
অন্যদিকে মিশা-ডিপজল তাদের প্যানেল গুছিয়ে ফেললেও সভাপতি প্রার্থী খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় নিপুণকে। অনেক তারকাকে রাজি করানোর চেষ্টার খবর এলেও শেষ পর্যন্ত একসময়ের আলোচিত নায়ক মাহমুদ

কলি সভাপতি প্রার্থী হন। তারপরও যেন নির্বাচনী মাঠ

জমাতে পারেননি তিনি। প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা মিশা-ডিপজল প্যানেলের প্রার্থীদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল বলেও কেউ কেউ মত দেন, যা নিপুণের জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি। তাছাড়া গেল মেয়াদে নিপুণের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে শাহনূর, নানা শাহ ও ডি এ তায়েবের মতো অনেকেই মিশা-ডিপজলের সঙ্গে যোগ দেন, যা ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আগের মেয়াদের নির্বাচনে নিপুণ সভাপতি হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন সিনিয়র অভিনয়শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চনকে। এ বছরের মার্চে হঠাৎ করে শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে টাকার ছড়াছড়ি হয়। ভোটাররা প্রতিটি প্যানেল থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নেন। হঠাৎ করে সভাপতির এমন বক্তব্য সাধারণ সম্পাদকসহ সেই প্যানেলের জন্য মন্দ বার্তা বয়ে আনে, যা ভোটে প্রভাব ফেলেছে।
এছাড়া নিপুণের ক্ষমতা প্রদর্শনের ব্যাপারটিও সামনে এসেছে। নির্বাচনের আগে আগে নিপুণ তার ক্ষমতাবলে কয়েকজনকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ দিয়েছেন, এমন কথা চলচ্চিত্রের অনেকে বলেছেন। আবার ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সদস্যপদ বাতিলের ব্যাপারটিও নিপুণের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি। প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকা মামলার আসামি আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের সদস্যপদ এবং তার নির্বাচনের বিষয়টিও নিপুণকে সমালোচনায় ফেলে। নিপুণের প্যানেল থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা যখন আসে, তখন চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বেফাঁস মন্তব্যও নির্বাচনে নিপুণ প্যানেলের জন্য নেতিবাচক হয়েছে। গেল মেয়াদে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পীরজাদা শহীদুল হারুন। তার সঙ্গে নিপুণের দ্ব›দ্ব ছিল প্রকাশ্যে। দুজন দুজনকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতেও ছাড়েননি। সেই পীরজাদাকে এবার দেখা গেছে কলি-নিপুণ প্যানেলে। হঠাৎ করে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ‘চিরশত্রæ’ হিসেবে পরিচিত পীরজাদা হারুনের সঙ্গে হাত মেলানো এবং একই প্যানেল থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। চিত্রনায়িকা শাহনূর এবার নিপুণের বিপরীত প্যানেল থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে ডিপজল এবং মিশা সওদাগরদের প্রস্তুতিও এবার তুলনামূলক বেশি ছিল। কমিটিতে না থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাধারণ শিল্পী তথা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন তারা। এক্ষেত্রেও ঘাটতি ছিল নিপুণ এবং তার প্যানেলের অন্য সদস্যদের। এছাড়া দীর্ঘদিন সংগঠনের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না সভাপতি প্রার্থী মাহমুদ কলির। তাকে সচারচর দেখা যেত না কোনো আয়োজনে। পর্দায়ও দীর্ঘদিন তার উপস্থিতি ছিল না। প্রায় বিস্মৃতিতে চলে যাওয়া এই তারকাকে তাই নেতৃত্বে দেখতে চাননি ভোটাররা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়