আশুলিয়ায় ফার্নিচার গুদামে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

আগের সংবাদ

বাতাসে আগুনের হলকা!

পরের সংবাদ

জাতীয় পতাকার প্রথম ডিজাইনার শিবনারায়ণ দাশ আর নেই

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : একাত্তরের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। লাল-সবুজের ভেতরে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র সংবলিত ওই পতাকার নকশা যারা করেছিলেন, তাদের একজন ওই সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শিবনারায়ণ দাশ। শুধু স্বাধীনতার পতাকাই নয়, অস্ত্র হাতে স্বাধীনতা যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন এই গেরিলাযোদ্ধা। গতকাল শুক্রবার ৭৮ বছর বয়সে হাসপাতালের বিছানায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় পতাকার নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ, ছাত্রজীবনে যিনি ‘শিবু দা’ হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। বাংলার অকুতোভয় এ সৈনিক, আড়ালের মানুষ শিবনারায়ণ তার মরদেহটিকেও দান করে গেছেন দেশের কল্যাণে। মৃত্যুর পর তার ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেছেন, বাবার মরদেহ বারডেমের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে। তার দেহ দান করা হবে এবং কর্নিয়া দান করা হবে সন্ধানীতে।
এদিকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাশের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শোক বার্তায় তারা প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শিবনারায়ণ দাশের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ ও তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আজ শনিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়াত শিবনারায়ণ দাশকে গার্ড অব অনার প্রদান শেষে জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুর ১২টায় মরদেহ কুমিল্লা নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিকালে তার মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার দেহ দান করা হবে।
শহীদ সন্তান শিবনারায়ণ দাশের পিতা সতীশ চন্দ্র দাশ। তিনি কুমিল্লায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রীর নাম গীতশ্রী চৌধুরী এবং এক সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ। শিবনারায়ণ প্রথম ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন তিনি। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
শিবনারায়ণের তৈরি করা লাল-সবুজের ভেতরে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র সংবলিত পতাকা ধরেই হয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে বসে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ওই পতাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন ‘জয়বাংলা বাহিনীর’ জন্য। আ স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ এবং মার্শাল মনি বহুদিক বিবেচনা করে লাল-সবুজের মাঝে বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তের পর আঁকিয়ে শিবনারায়ণ দাশকে পতাকা আঁকতে বলা হলে তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে পতাকাটি আঁকেন। ওই পতাকাই পরবর্তীতে একাত্তরের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ণ দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা সঠিকভাবে তুলে ধরা এবং বিকৃতিরোধে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মানচিত্র সংবলিত ওই লাল-সবুজ পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেয়া হয়। শিবনারায়ণ চলে যান বিস্মৃতির আড়ালে। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শিবনারায়ণ দাশ। মনিপুরী পাড়ার বাসায় ওইদিন রাতে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে শমরিতা থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয়েছিল। আজ শনিবার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই ফিরবেন নিথর দেহ নিয়ে, আড়ালের মানুষ শিবনারায়ণ, তৎকালীন ছাত্রলীগের ‘শিবু দা’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়