পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীকে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের খোলা চিঠি : সোনালী ব্যাংকে একীভূতে অনীহ বিডিবিএল কর্মীরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কাজ শুরু হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা আপত্তিও উঠতে শুরু করেছে। এছাড়া ব্যাংক পাড়া ও দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে ‘মার্জার ইফেক্ট’। ব্যাংকের আমানতকারী ও গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারাও এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করতে চাইছে তাদের বেশির ভাগই একীভূত হতে চাচ্ছে না। একীভূতকরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেসিক ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের পর এবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে বিডিবিএল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মার্জার ইফেক্ট’ ব্যাংক পাড়া ও দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। ব্যাংকের আমানতকারী ও গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তারা আমানত তুলে নিচ্ছে। নতুন করে আমানত রাখতে ভয় পাচ্ছে। গ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করছে। ব্যাংক কর্মকর্তারাও এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
গত শুক্রবার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভাজন অনুযায়ী দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করার কথা থাকলেও এ বিষয়ে আরো বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। কিছু কিছু ব্যাংক আছে, যারা নিজেদের অতীতের দুর্দশা কাটিয়ে ভালো অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। তারা নিজেদের নিয়ে আশাবাদী। এসব ব্যাংককে হঠাৎ করে অন্য একটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে দিলে কর্মীদের কর্মস্পৃহা থাকে না, আমানতকারীরা দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব পড়ে যায়, উভয় ব্যাংকের পরিবেশ ভিন্ন হওয়ায়, কাজের ধরন ভিন্ন হওয়ায় কাগজে-কলমে একীভূত হলেও, নিজেরা সহজে একীভূত হতে পারে না।
এতে আরো বলা হয়, একটি বাদে সব ইন্ডিকেটরে ভালো থাকা সত্ত্বেও বিডিবিএলকে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে মার্জের প্রক্রিয়া চলছে। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের পরিমাণ একটু বেশি। তবে সেই ঋণগুলোর বেশির ভাগই সাবেক বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার আমলের। ২০১০ সালে (বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে মার্জ করে প্রতিষ্ঠিত হয় বিডিবিএল) প্রতিষ্ঠালগ্নে ঋণখেলাপির হার ছিল ৬০ শতাংশেরও কাছাকাছি। যা বর্তমানে প্রায় ৩৪ শতাংশ। আগামী এক থেকে দুই বছরের মাথায় এই ঋণ খেলাপির হার ১৫ শতাংশের নিচে আসবে বলে বিডিবিএলের মনে করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিডিবিএল কোনো বছরই লোকসানের মুখ দেখেনি। টানা ১২ বছর সামান্য হলেও লাভ করা একটি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক বলা যায় না। এই লাভ দেখাতে হিসাব বিজ্ঞানের কোনো মারপ্যাঁচ লাগেনি। শতভাগ একচুয়াল লাভ। বিডিবিএলের কোনো প্রভিশন ঘাটতি নেই। অন্য রেশিওগুলোও ভালো। তারল্য সংকট নেই। অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের মতো বিডিবিএলের মূলধন ঘাটতি নেই, বরং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিই আছে। বিডিবিএল পরিচালনার জন্য সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হয় না, উল্টো প্রতি বছরই লাভের একটি বড় অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়।
আরো বলা হয়, বিডিবিএল গঠন হওয়ার পরে অর্গানোগ্রামের ৪৫ শতাংশ জনবল নিয়ে আজ পর্যন্ত টিকে আছে এবং বার্ষিক লাভ নিয়েই টিকে আছে, যা প্রশংসার যোগ্য। চিঠিতে জানানো হয়, বিডিবিএলের সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিডিবিএলের ৪টি বহুতল ভবন (একসময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভবনসহ), ২টি সিকিউরিটি হাউজ, আইসিবির ২৫ শতাংশ মালিকানা এবং অন্যান্য সম্পত্তির কারণে অনেক বড় ব্যাংকই বিডিবিএলকে তাদের সঙ্গে মার্জ করে নিতে চায়। কিন্তু বড়দের অযৌক্তিক চাওয়া কি সব সময় পূরণ করতে হয়?
মার্জ করতে হলে একই মালিকানাধীন অনেকগুলো

ব্যাংক রয়েছে। সেই প্রাইভেট ব্যাংকগুলোকে একত্রিত করে একটি ব্যাংকে পরিণত করলে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক কমে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভাজন অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসির অবস্থান জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংকের থেকে ভালো। তাহলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসিকেই কেন মার্জ করতে হবে, এটা একটু ভেবে দেখা উচিত। এই বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। একটি দেশের অর্থনীতির চাকা বলা হয় ব্যাংকিং খাতকে। ব্যাংকিং খাতকে ঠিক করতে হলে আরো সময় নিয়ে, পরিকল্পনা মাফিক বিচার বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়