আশুলিয়ায় ফার্নিচার গুদামে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

আগের সংবাদ

বাতাসে আগুনের হলকা!

পরের সংবাদ

কমেনি মাছ-মুরগির দাম বেড়েছে আলু-পেঁয়াজের

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঈদের পর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনো রাজধানীতে বাড়েনি মানুষের আনাগোনা। এ কারণে রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনো কেনাবেচা ঠিক আগের মতো জমে ওঠেনি। অন্য সময়ের তুলনায় মানুষের আনাগোনা কম থাকার পরও ঈদের আগের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি এখনো। ঈদের আগে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি ও মাছের দাম এখনো কমেনি। উল্টো নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজ, আলু, আদা ও রসুনের দাম। সঙ্গে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম চার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা আসে গত বৃহস্পতিবার। এর আগের দিন বুধবার সুপার পামওয়েলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পণ্যের সরবারহ ঠিক থাকলেও পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে খুচরায় এর প্রভাব পড়েছে। বেচা-বিক্রি কিছুটা কম হলেও বাড়তি পণ্যের চাপ নেই। রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে ঈদের আগে বেড়ে যাওয়া মুরগির দাম এখনো বেশি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত অন্য সময়ে এ ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে থাকে।
এদিকে মুরগির মতো সব ধরনের মাছও চড়া দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঈদের আগের তুলনায় প্রতিটি মাছের কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের কারণে বাজারে মাছের সরবরাহ কম। যার কারণে মাছের দাম কিছুটা বাড়তি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি বড় রুই ৪৫০ টাকা, মাঝারি রুই ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, বড় পাঙাশ ২৮০-৩০০ টাকা, আকারভেদে ইলিশ মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, বড় কই ৬০০ টাকা, শিং ৮৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০ টাকা ও আইড় ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোট চিংড়ি ৩০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৮০০ টাকা, মলা ৩০০ টাকা, পাবদা ৫০০ টাকা ও লৈট্টা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগরে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ঈদের পর বাড়ি থেকে আসার সময় কিছু মাছ-সবজি নিয়ে এসেছিলাম। সেগুলো দিয়ে গত ২-৩ দিন চলেছে। এখন বাজার করতে এসেছি। বাজারে পণ্যের দাম কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু মাছ-মুরগির দাম বাড়তি। পাবদা মাছ ঈদের আগে ৪৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছিলাম। এখন নিলাম ৫০০ টাকা কেজিতে। আর কাঁচকি মাছ নিয়েছি ৩৬০ টাকায়, যেটা আগে ৩২০ টাকায় নিতাম। আসলে সব ধরনের মাছেই ২০ থেকে ৫০ টাকা দাম বাড়তি।
এদিকে ঊর্ধ্বমুখী দামে বিক্রি হওয়া মাছ-মুরগির সঙ্গে তালিকায় যোগ হয়েছে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও সয়াবিন তেল। গতকাল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা দরে। কোথাও কোথাও কেজি ৬০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। ঈদের চার-পাঁচ দিন আগে আলুর কেজি ছিল ৪৫ টাকার আশপাশে। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আলু কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। অন্যদিকে ঈদের আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি নেমেছিল ৫০ টাকার ঘরে। কেজি কেনা গেছে ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে। কিন্তু ঈদের পর চড়া হতে থাকে দাম। কয়েক দফায় বেড়ে এখন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। পেঁয়াজের মতো দর বেড়েছে আদা-রসুনেরও। বাজারে এখন আমদানি করা প্রতি কেজি চায়না রসুন ২২০ থেকে ২৩০ এবং দেশি রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে চায়না রসুন ১৯০ থেকে ২১০ টাকা এবং দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া চায়না আদার কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে।
আলু ও পেঁয়াজের বাড়তি দামের বিষয়ে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মেতালেব মিয়া বলেন, আলু পেঁয়াজ আমদানি ছাড়া কোনো উপায় নেই। এবার শুরু থেকে দাম চড়া। বাজার এই বাড়ে, এই কমে। কিন্তু নাগালের মধ্যে আসেনি। আমরা যেভাবে কিনি সেভাবে বিক্রি করি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সয়াবিন তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম চার টাকা বাড়ানো হয়। এ হিসাবে পাঁচ লিটারের বোতলে দর বেড়েছে ১৮ টাকা। ফলে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম হবে ১৬৭, পাঁচ লিটারের দর হবে ৮১৮ এবং খোলা সয়াবিনের লিটার হবে ১৪৭ টাকা। অন্যদিকে সুপার পামওয়েলের লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ টাকা। তবে সুপার পামওয়েল বাজারে এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে।
এদিকে মাছ-মুরগিসহ অন্যান্য কয়েকটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও স্বস্তি দিচ্ছে সবজি। বাজারে মানুষের আনাগোনা কম থাকায় দ্রুত পচনশীল সবজির দাম কমতির দিকে। গত সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে কিছুটা কম দামেই বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি। বাজারে মটরশুঁটি ৮০-৯০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা, গোল বেগুন ৬৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, করলা (বড়)-৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ আকারভেদে ৬০-৮০ টাকা এবং ফুলকপি-পাতাকপি ৩৫-৪০ টাকায় প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়