রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণার দাবি : নির্মূল কমিটির আলোচনা সভা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস জানাতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ঐতিহাসিক ১০ এপ্রিলকে ‘গণপ্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র : স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের সৃষ্টিতত্ত্ব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি। বক্তব্য রাখেন মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও শহীদ সন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির আইটি সেলের সভাপতি ও শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের অনেকে কিছুই জানে না। তাদের বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালের এ গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস জানাতে হবে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত না করা হলে আগামী প্রজন্মকে সচেতন করা যাবে না। তিনি বলেন, দেশপ্রেম কোনো বিমূর্ত বিষয় নয়। প্রতিদিনের কাজ ও দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার নাম হচ্ছে দেশপ্রেম। আমরা কোথা থেকে শুরু করেছি এবং দেশকে কোথায় রেখে যাচ্ছি এ উত্তরণই হচ্ছে দেশপ্রেম।
মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সাহসী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। এ দিন প্রথম সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়- যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের আত্মপ্রকাশ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এই সরকার গঠন করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

বলেন, বাহাত্তরে আমাদের সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। চারটি মূলনীতিতে সংবিধান রচনা করেছেন। যারা বলে এতে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিল না, তারা ইচ্ছা করেই এর অপব্যাখ্যা করছেন। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ছাড়া অচিন্তনীয়। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছেন। হিজাব পরা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়- উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৌলবাদীদের লক্ষ্য দেশে তালেবানি হিজাবতন্ত্র কায়েম করা।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, মুজিবনগর ঘোষণায় যা বলা হয়েছিল আজ ৫৩ বছর পর তার অধিকাংশই বিলীন হয়ে গেছে। একটি দেশের উত্থানের জন্য ৫৩ বছর কম সময় নয়। কিন্তু এ সময়ে বাংলাদেশ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে মানুষের সাম্য, মানবিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার সবই লুপ্ত। মুজিবনগর ঘোষণায় বাঙালি জাতির যে আত্মমর্যাদার কথা বলা হয়েছিল দৃপ্তভরে, তা আজ অপসৃত। একটি জাতির উন্নয়নের জন্য যে দিকনির্দেশনার প্রয়োজন, এর সবই ছিল আমাদের শাসনতন্ত্রে। তবে আজ তা যুগোপযোগী নয়- এমন কথা এখনো বলা যাবে না। ওই ঘোষণা, তথা শাসনতন্ত্র যদি নিষ্ঠভাবে মেনে চলা যায় তাহলে জাতি অনেক বিভ্রান্তি, দ্ব›দ্ব দূর করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আগে শিক্ষিতদের মৌলভী বলা হলেও এখন ধর্মান্ধরা মৌলভী। এ কারণে সমাজ এখন মৌলভীকরণ ও হিজাবিকরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাহাত্তরের শাসনতন্ত্রে আবার ফিরে যাব কি না তা-ও নির্ধারণ করতে পারে আওয়ামী লীগ।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মূল সংবিধান কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ই ছিল কার্যত বাংলাদেশের সংবিধান। এজন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এ ঘোষণাপত্রকে বলা হয়েছে সংবিধানের ‘জেনেসিস’ বা সৃষ্টিতত্ত্ব। ১০ এপ্রিলকে গণপ্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের পাশাপাশি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, নতুন প্রজন্ম জানে না স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র কী, মুজিবনগর সরকার কী। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যসূচিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নেই- যা প্রধান বিষয় হিসেবে থাকা উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়