রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

সিসা দূষণে বিপর্যস্ত শিশুরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে সিসা দূষণ ভয়ংকর সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। এই দূষণে সবচেয়ে বেশিই আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। ফলে শিশুদের মানসিক বিকারগ্রস্ততা, প্রতিবন্ধী হওয়ার হার বাড়ে এমনকি শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বিগত ২০২৩ সালে ল্যানসেট বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এক বছরে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর কারণ সিসা দূষণ। নিম্নমানের জিনিসপত্র, খেলনা, ভেজাল খাদ্যপণ্য ছাড়াও বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের বাচ্চাদের শরীরে সিসার পরিমাণ বেশি থাকে। সিসা দূষণ আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ। টঘওঈঊঋ এবং চটজঊ ঊঅজঞঐ যৌথভাবে একটি গবেষণা করে বের করেছে যে, বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু এর শিকার। এ দেশের আনুমানিক ১ কোটি শিশুর শরীরে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১০ মাইক্রোগ্রামের চেয়েও বেশি সিসা পাওয়া গেছে। সিসা হলো একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন, যা শিশুদের মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতি করে এবং এটি একটি ভারী ধাতু। এটি সাধারণত প্রকৃতিতে (মাটিতে) এবং মানুষের ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিসপত্রে পাওয়া যায়। এই ভারী ধাতুর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রকৃতি দূষিত হয়ে পড়ে এবং মানুষ কোনোভাবে এই ভারী ধাতুর সংস্পর্শে এলে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা হয়। শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে বড়রাও। প্রাকৃতিক পরিবেশের সতেজ বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতিবিধি যেন ব্যাহত হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। আর বায়ুদূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবেশে বেড়েছে সিসার মাত্রা। সিসাযুক্ত বাতাস শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও সিসাযুক্ত খাবার অথবা পানীয় খেলেও সিসা দূষণের শিকার হতে পারে। সিসা দূষণের কারণে বাচ্চাদের কথা বলায় এবং আওয়াজ শোনার ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দিতে পারে। সিসা দূষণের কারণে শিশুদের হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। বড় হওয়ার পর স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে।
এক কথায় বললে সিসা দূষণ বাচ্চাদের শারীরিক, আচরণগত এবং মানসিক বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য দায়ী। এটি যে কোনো বয়সি বাচ্চার সিসা দূষণের আশঙ্কা বেশি। মূলত ৯ মাস থেকে ২ বছর বয়সি বাচ্চাদের শরীরে সিসা প্রবেশ করার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি কারণ ওরা সাধারণত ফ্লোরে, মাটিতে হামাগুড়ি দেয়। এবং স্বভাবগত আগ্রহের কারণে সামনে যা পায় তা ধরে ফেলে, এমনকি সেটা মুখেও নিয়ে নেয়। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, সিসা খাবারের মাধ্যমে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং চামড়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। সাধারণত খাবার পাত্র যেমন অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের বাসনপত্র চকচকে করতে সিসাযুক্ত রং ব্যবহার করা হয়। এসব পাত্রে রান্না করা খাবার খেলে পাত্র থেকে সিসা গলে খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে ঢুকতে পারে। অনেক দিনের পুরনো ট্যাপের পানিতে সিসা থাকার আশঙ্কা খুব বেশি। বিদেশি চকোলেট ও জুসের মধ্যেও সিসা থাকতে পারে। সবসময় বাচ্চার খেয়াল রাখে, আশপাশে থাকে এমন প্রাপ্তবয়স্ক লোক যদি সিসাযুক্ত জুয়েলারি অথবা কাপড় পরে, তবে শিশু এতে সিসা দূষণের শিকার হতে পারে। সিসা দূষণে শিশু আক্রান্ত হলে কিছু বিষয় লক্ষণীয়। যেমন ক্ষুধা কমে যাওয়া, বেশিরভাগ সময় শারীরিকভাবে ক্লান্ত, অবসন্ন অনুভব করা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা, শারীরিক বৃদ্ধি ঠিকঠাক না হওয়া, বমিভাব অথবা বমি হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথায় ভোগা, হাড়ে ব্যথা অনুভব করা, মাথাব্যথা হওয়া, পড়াশোনায় অমনোযোগ বা পড়া মনে রাখতে না পারা। যেহেতু বাংলাদেশে এখনো শিশুশ্রমিক রয়েছে তাই বাংলাদেশের পথশিশুদের শরীরে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে। শহরে পথশিশুদের বেশিরভাগই বিভিন্ন আবর্জনার স্তূপে প্লাস্টিক, লোহার জিনিসপত্র কুড়িয়ে দিন কাটায়। আবর্জনার স্তূপগুলোতে বিষাক্ত সিসার পরিমাণ ভয়ংকর মাত্রায় থাকে। পথশিশুদের শ্বাসের মাধ্যমে এবং চামড়া দিয়ে প্রবেশের মাধ্যমে সিসা দূষণে আক্রান্ত হয়ে প্রাণঘাতী অসুখের শিকার হয়।
সিসা দূষণের মতো সমস্যার ক্ষতিকর প্রভাবকে প্রাথমিক পর্যায়ে মূল্যায়ন না করা হলেও এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হয়। তাই এই দূষণ নিরসনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং দূষিত এলাকা থেকে দূরে থাকা উচিত। পাশাপাশি ঘরে বাচ্চাদের ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে। এছাড়াও তাদের নিয়মিত নখ কাটতে হবে যাতে নখের নিচে জমে থাকা ময়লার মাধ্যমে সিসা শরীরে ঢোকার আশঙ্কা কমে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাদের খাবারে যাতে আয়রন, ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম থাকে তাই নিয়মিত ডিম, মাংস, শিমের বীজ, ফলমুল, লেবু, সবুজ মটরশুঁটি, টকদই, পনির ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীর থেকে সিসা বের হয়ে যায়। যাদের বাড়ির পানির কল, পাইপ পুরনো তারা দিনের শুরুতে ব্যবহারের জন্য পানি নেয়ার আগে অন্তত ১০ মিনিট পানির কল ছেড়ে রাখতে পারেন। এই ১০ মিনিটে পানির সঙ্গে বেশিরভাগ সিসা চলে যাবে এবং সিসা দূষণের আশঙ্কা কমবে। ঘরের বাইরে বা খেলার মাঠে খোলামেলাভাবে বসে খাবার অথবা পানি খাওয়া থেকে শিশুদের বিরত রাখতে হবে এবং শিশুশ্রমিকের শ্রমের হারের পরিমাণ কমিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয়ে অগ্রসর হতে হবে।

সুমাইয়া আকতার : শিক্ষার্থী, বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়