রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

মধুচন্দ্রিমার বদলে চিরনিদ্রা : ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের দাফন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি (শহর) থেকে : নববিবাহিত আল-ইমরান (২৩) ও রিপা আক্তার (২২) দম্পতি। সাগরপাড়ের কুয়াকাটায় মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার কথা ছিল তাদের। এর আগে বরিশালে রিপার আরেক বোন নাহিদা আক্তার সনিয়ার জন্য নতুন বাসা দেখার কথা ছিল তাদের। জীবনের এই আয়োজন সাঙ্গ হলো মুহূর্তেই। ঝালকাঠিতে গত বুধবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তাদের প্রাণ। গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় উন্মত্ত ট্রাকের চাপায় নিহত হয় ১৪ জন।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রেখে গেছে গভীর শোকের আবহ। থামছে না স্বজনদের কান্না। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতালে মরদেহের পাশে বসে দুই কন্যার বাবা বারেক মৃধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল আমার দুই মেয়ে-জামাই ও তাদের দুই সন্তান। বড় মেয়ে সিলেট থাকত। বড় জামাই সিলেট থেকে বদলি হয়ে বরিশালে আসবে। তার জন্য সবাই মিলে ভাড়ার জন্য বাসা দেখতে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে প্রাইভেট কারটি যখন ঝালকাঠি গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় টোল দিচ্ছিল, তখন একটি ট্রাক আমার মেয়ে-জামাই-নাতি-নাতনিদের চাপা দিয়ে মেরে ফেলে।
তিনি বলেন, আমার নাতিটা দুপুর ১২টার (বুধবার) দিকেও আমার কোলে ছিল। আমি আদর করে চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম।
গত বুধবার বেলা ২টার দিকে ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের চাপায় প্রাইভেট কার ও অটোরিকশার ১৪ যাত্রী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ বারেক মৃধার পরিবারের ৬ জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের সাউথপুর এলাকার বারেক মৃধার মেয়ে নাহিদা আক্তার সনিয়া (৩০), তার স্বামী মো. হাসিবুর রহমান (৩৫), তাদের ছেলে তাহমিদ (১), মেয়ে তাকিয়া (৪), বারেকের আরেক মেয়ে রিপা আক্তার (২২) ও তার স্বামী আল-ইমরান (২৩)।
নিহত হাসিবুর রহমান সিলেটে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন।

পরিবারসহ ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন তারা। নিহত ইমরান ঢাকার কুর্মিটোলায় বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন। তিনিও ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে কুয়াকাটায় মধুচন্দ্রিমায় যাচ্ছিলেন ইমরান-রিপা দম্পতি।
বারেক মৃধা আরো বলেন, মেয়ে-জামাই সবাই যাচ্ছিল। তাই নাতি-নাতনিদেরও যেতে দিয়েছিলাম। যখন গাড়িতে ওঠে তখন একবার মনে হলো যে ওদের যেতে দেব না। তারপরও কি মনে করে যেতে দিলাম।
নিহত দুই বোনের ভাই পারভেজ বলেন, সবাই বাড়ি থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে বের হয়েছিল বরিশালে বাসা ভাড়া করার জন্য। এরপর খবর পাই গাবখান সেতুর কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছে।
বোন মনি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ওরা একজন বরিশাল আরেক জন কুয়াকাটা ঘুরতে যাবে। কিন্তু আর যাওয়া হলো না।
আরেক বোন তরিকা আক্তার বলেন, দুপুরে সবাই এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্রাইভেট কারে বরিশালের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি আহাজারি করে বলেন, ওদের ছোট ছোট সন্তানদের আদর করে দিলাম। এটাই যদি শেষ আদর হবে বুঝতাম তাহলে আরো বেশি করে আদর দিতাম। ছোট বোন রিপার এক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। ওদের হাতের মেহেদি এখন পর্যন্ত মোছেনি। নববিবাহিত দম্পতির ইচ্ছা ছিল বরিশাল থেকে কুয়াকাটা গিয়ে হানিমুন (মধুচন্দ্রিমা) করবে। কিন্তু সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। এখন হানিমুনের পরিবর্তে অন্তিম শয়ানে শায়িত হলো।
রাজাপুরের হাসিবুর, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের দাফনসম্পন্ন হয়েছে গতকাল। এর আগে সকাল ১০টায় উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথপুর দাখিল মাদ্রাসা চত্বরে ৪ জনের একসঙ্গে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজায় প্রায় ২ হাজার মানুষ অংশ নেন। সাউথপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল খালেক মাওলানা জানাযা নামাজ পড়ান। বিকাল ৫টায় পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
এর আগে বুধবার রাতে তাদের মরদেহ নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
রিপাকে তার বাবার বাড়িতে এবং তার স্বামী ইমরানকে নিজ বাড়ি রাঙামাটিতে দাফন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়