রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

বীরত্বের চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহ শুধুই ইতিহাস!

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : যেই চট্টগ্রামে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন প্রচণ্ড প্রতাপশালী ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধে নেমে চট্টগ্রামকে ৪ দিন স্বাধীন রেখেছিলেন সেই ঐতিহাসিক যুব বিদ্রোহের দিনটি অনেকটা নিষ্প্রভ নীরবে চলে গেল। সরকারিভাবে তো নয়ই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবিদার বড় রাজনৈতিক দলসহ অন্যরাও বোধ হয় ভুলে যেতে বসেছেন সেই দিনটিকে। তবে কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ছোট কিছু সংগঠন এই দিনটিকে স্মরণ করেছেন নানা আয়োজনে।
এত বছর পরও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের নামে কোনো মনুমেন্ট হয়নি, কোনো সড়কের নামকরণ করা হয়নি। চট্টগ্রাম নগরীতে তার নামে নেই কোনো বড় স্থাপনা। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ ও আলোচনায় বীর প্রসবিনী চট্টলা, মাস্টারদা সূর্যসেনের চট্টগ্রাম, বীরকণ্যা প্রীতিলতার চট্টগ্রাম বলে বাহবা কুড়াতে দ্বিধাবোধ করেন না। অথচ কোন প্রেক্ষাপটে, কার নেতৃত্বে, কাদের অসীম সাহসী আত্মত্যাগের বিনিময়ে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি রাষ্ট্রীয়ভাবে। নতুন প্রজন্মের কাছে এসব প্রাতঃস্মরণীয় বীরদের দেশপ্রেম-আত্মত্যাগের কাহিনী তুলে ধরারও কোনো প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সূচনা হয়। নগরীর দামপাড়ায় তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকের (বর্তমানে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন) অস্ত্রাগার দখল করে নিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী বিপ্লবীরা। সেখানেই অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের ঘোষণা দেয়া হয়, যে সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেন। এই ১৮ এপ্রিল থেকে চারদিন চট্টগ্রাম ছিল স্বাধীন। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে ইংরেজ সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যুব বিদ্রোহের বিপ্লবীদের মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে অন্তত ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত ও ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন। আহত হন অনেকে। কিন্তু সেই এদিহাসিক জালালাবাদ পাহাড়টিকেও সংরক্ষণ করা হয়নি সর্বসাধারণের জন্য।
তবে এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘রাস্তা জুড়ে রোদ হোক’ শিরোনামে দ্বিতীয়বারের মতো যুব বিদ্রোহ দিবস পালন করেছে আবৃত্তি সংগঠন বোধনের একাংশ। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা দিবসটি পালন করে। সংগঠনটির সহসভাপতি সুবর্ণা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, কবি কমলেশ দাশগুপ্ত, প্রীতিলতা ট্রাস্টের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য। এ সময় বক্তারা, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সেই মহান শহীদদের আদর্শকে তরুণদের সামনে তুলে ধরতে হবে উল্লেখ করে যুব বিদ্রোহের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তারা বলেন, যুব বিদ্রোহে অংশ নেয়া বিপ্লবীদের স্মরণে রাষ্ট্রকে আরো নানা উদ্যোগ নিতে হবে। সভায় বক্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতাসহ অন্য বিপ্লবীদের ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। বোধনের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বোধনের অনুষ্ঠান সম্পাদক মৃন্ময় বিশ্বাস।
পরে দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন নৃত্য নিকেতন ও মাধুরী নৃত্যকলা একাডেমি। দলীয় গানে অংশ নেন সংগীতালয়, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। একক আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিলেন সুচয়ন ললিতকলা কেন্দ্রের আবৃত্তিশিল্পী তাসকিয়া তুন নূর তানিয়া, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের মৌসুমী মৌ, নরেন আবৃত্তি একাডেমি আবৃত্তিশিল্পী পৃথা পারমিতা। কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি ফারহানা আনন্দময়ী ও সারাফ নাওয়ার। বোধন আবৃত্তি পরিষদের শিশু ও বড়দের আবৃত্তি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় যুব বিদ্রোহ উৎসব।
এছাড়া কয়েকটি সংগঠন নগরীর রহমতগঞ্জে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
# #################

ছবির ক্যাপশন : চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ স্মরণে আবৃত্তি সংগঠন বোধন আবৃত্তি পরিষদের একাংশের পরিবেশনা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়