রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান : প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি; মাছ-ভাত পেলেই তো যথেষ্ট। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নেই, ডাল-ভাতেরও অভাব নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে দেখি ৪০ লাখ টন খাদ্যঘাটতি। এই অবস্থায় আমাদের সরকারের যাত্রা শুরু। তখন রিজার্ভ মানিও তেমন ছিল না। এশিয়াতে খাদ্য মন্দা চলছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলব না। নিজের ফসল নিজেরা উৎপাদন করব। জাতির পিতা সবসময় বলতেন, আমরা কারো কাছে ভিক্ষা চাইব না, কারণ ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা মানসম্মান নিয়েই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। সেই আদর্শে আমরা দেশকে এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি।
এর আগে সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন। এছাড়া দেশের ডেইরি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন ও পোল্ট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান। প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দেশব্যাপী ৬৪টি জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় এই প্রদর্শনী একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব প্রদর্শনীতে স্ব স্ব উপজেলা থেকে উন্নত জাতের এবং অধিক উৎপাদনশীল জাতের গবাদিপশু যেমন- গাভি, বাছুর, ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, হাঁস, দুম্বা, কবুতর, সৌখিন পাখি, পোষা প্রাণী ও বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
কৃষি গবেষণা ও উৎপাদনে সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নেই, ডাল-ভাতেরও অভাব নেই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। তিনি বলেন, ?আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, যেমন খালেদা জিয়া ঘোষণা দিল যে দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে এলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফখরুদ্দীন সাহেব প্রধান উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন। মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন আবার

ঘোষণা দিলেন আলু খাওয়ার জন্য। হাজার পদের আলুর নানা রকমের তালিকা তৈরি করা হলো এবং তার আবার প্রদর্শনী হলো। বেশ উন্নত হোটেলে। মানুষ ভাত পাচ্ছে না তাতে কী! আলু খাবে। কেউ আমাদের ডাল-ভাত খাওয়াতে চাইল, কেউ আমাদের আলু খাওয়াতে চাইল, মাছে-ভাতে বাঙালি আমরা; মাছ-ভাত পেলেই তো যথেষ্ট। সেটাই তো আমরা চাই। সেটাই তো আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নেই, ডাল-ভাতেরও অভাব নেই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। আরো বড়-বড় মাছ, সব কিছু খাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ গবেষকরা গবেষণা করে করে সেগুলো কিন্তু আজকে উৎপাদন করছেন। আমরা আমাদের অনেক প্রায় বিলুপ্ত মাছ আবার ফিরে পাচ্ছি। গবেষণা ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে আসতে পারে না, এটাই হলো বড় কথা। তাছাড়া মুরগির ক্ষেত্রেও গবেষণা করে বিভিন্ন ধরনের পাখি এখন উৎপাদন হচ্ছে। শুধু ডিমই নয়; মাংসও এখন মানুষ খেতে পাচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত খাল-বিল, নদী-নালার দেশ আমরা, আমাদের দেশের মানুষের কেন আমিষের কষ্ট হবে! খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা আমদানি করবে, ব্যবসা করবে ওই দিকে তাদের চিন্তা। আমাদের হচ্ছে, আমরা আমাদের নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াব।
সমুদ্রসম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। আজকে এই সমুদ্র সম্পদ আমাদের কাজে লাগাতে আমরা সুনীল অর্থনীতি ঘোষণা দিয়েছি। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গভীর সমুদ্রের সম্পদ এখনো আমরা আহরণ করতে পারিনি। আসলে উদ্যোক্তাও পাওয়া যাচ্ছে না, এটা হলো বাস্তবতা। তবে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমরা এখন কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই উৎপাদন আমরা আরো বাড়াতে চাই।
পণ্যের দাম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেখি জিনিসের দাম নিয়ে চিন্তিত, পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেন? আমাদের কিন্তু ৯০ ভাগ পেঁয়াজই আনা হতো ভারত থেকে, সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলাম। ভোজ্যতেল ৯০ ভাগ আনা হয় বিদেশ থেকে। কেন আনতে হবে? নিজের দেশে আমরা তো উৎপাদন বাড়াতে পারি। তবে এবার সুখবর হলো, আমাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে সরষের উন্নত জাত নিয়ে আসা হয়েছে। আজকে আমাদের সরষে উৎপাদন ভালো হচ্ছে। সরিষার তেল হচ্ছে, যেটা হার্টের জন্য সব থেকে নিরাপদ। সেসঙ্গে আমাদের চালের তুষ থেকে যে তেলটা হয়, সেটাও হচ্ছে। তিলের তেল, আমরা আরো বহুমুখী করতে পারি বা করার সে সুযোগ আরও আছে। আমরা এখন করেও যাচ্ছি। প্রোটিনের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ডেইরি ও পোল্ট্রি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
গভীর সমুদ্রসম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা দুঃখজনক, বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করলেও এখনো সমুদ্রসম্পদ আহরণ করতে সক্ষম হয়নি। বাস্তবতা হলো এই সেক্টরে উদ্যোক্তা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তা, তারপর পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে কৃষিতে ভুর্তকি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন পাশাপাশি কৃষিতে আরো গবেষণা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। মানবদেহের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে মাছ ও প্রাণীগুলোর জন্য নিরাপদ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতেও বলেন সরকারপ্রধান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়