গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : অর্থ আত্মসাৎ

আগের সংবাদ

মন্ত্রী-এমপির হস্তক্ষেপে লাগাম

পরের সংবাদ

নাটোরে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ : ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি আ.লীগ নেতা রুবেলের

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, নাটোর ও সিংড়া : নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে তুলে এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করা হয়েছিল সেই মাইক্রোবাসের মালিকের পরিচয় পাওয়া গেছে। ওই মাইক্রোবাসের মালিকের নাম লুৎফুল হাবীব রুবেল। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দেলোয়ার হোসেনের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী। তবে ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মাইক্রোবাসটি আটক করতে পারেনি। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে সিংড়া উপজেলার কয়েকজন সাংবাদিক ও একজন গাড়িচালক মাইক্রোবাসটি লুৎফুল হাবীব রুবেলের বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থাকায় তারা তাদের নাম প্রকাশ করেননি।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি মাইক্রোবাসটির মালিক বলে স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসটি তিনি ভাড়ায় খাটান। অপহরণের কাজে মাইক্রোবাসটি ব্যবহার হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না। গত মঙ্গলবার থেকে তিনি মাইক্রোবাসটির হদিস পাচ্ছেন না। চালকের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। তিনি এ ব্যাপারে একটি জিডি করবেন বলে জানান।
এদিকে আলোচিত মাইক্রোবাসটি তিন দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ। গাড়িটির নিবন্ধন নম্বর ও মালিকানার তথ্য পুলিশের কাছে আছে বলে দাবি করা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। বুধবার সকালে সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, গাড়ির চালককে শনাক্ত করা গেছে। তার নাম সুজন। ভিডিও ফুটেজ থেকে গাড়িটির যে নিবন্ধন নম্বর পাওয়া গেছে, তা বিআরটিএতে পাঠানো হয়েছিল। বিআরটিএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরবরাহ করা নিবন্ধন নম্বরটি ভুল। তাই মালিকানার তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি।
ওসি আরো বলেন, ‘অনেক সময় ভিডিওর অস্পষ্টতার কারণে ভুল নম্বর আসতে পারে। তবে তারা গাড়িটি আটক করার চেষ্টা করছেন। ঘটনার পর থেকে গাড়িটি জনসমক্ষে বের হয়নি। গাড়িটি আটক করার পর বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকালে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। বিকাল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় তার গ্রামের বাড়ি সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রামে সামনে ফেলে রেখে যায়। ওই ঘটনায় জড়িত অন্তত ১৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তাদের শনাক্ত করেছেন। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও গাড়িচালকও রয়েছেন। তবে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি।
এদিকে নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করার মামলায় গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা সুমন আহমেদ (৩০) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জবানবন্দি দেয়া হয়। জবানবন্দির তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
সদর থানা সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা সুমন আহমেদ ও নাজমুল হককে গতকাল বিকালে নাটোর সদর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার

তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন আসামি সুমন আহমেদের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। আদালত এ ব্যাপারে সুমনের বক্তব্য জানতে চেয়ে তাকে সময় দেন। পরে তিনি জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। সন্ধ্যার পরে ওই আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রওশন আলম তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে সুমন ও নাজমুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, সুমন জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করার কথা স্বীকার করেছেন। তার সঙ্গে আরো কারা ছিলেন তাও বলেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম জানাননি ওসি। দেলোয়ার হোসেনের একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে সুমন স্বীকার করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়