নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়া হবে বলে সাফ ঘোষণা দিলেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। গত মঙ্গলবার উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে একটি পথসভায় এমন ঘোষণা দেন তিনি।
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক ওরফে সাবাব চৌধুরী। তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা তিনবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী (সেলিম)। আগামী ৮ মে এ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
গত মঙ্গলবার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিউলী একরাম বাজারে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছেলের পথসভায় বক্তব্য দেন একরামুল করিম চৌধুরী। বক্তব্যে সংসদ সদস্য বলেন, ‘যে এলাকা থেকে ভোট কম দেবেন, সে এলাকায় আমি কোনো উন্নয়নে হাত দিব না। স্ব স্ব এলাকা। গিভ অ্যান্ড টেক। আমাকে দিবেন, আমি আপনাদের দিব। আমারে এমপি বানাইছেন, আমি তো বলছি, পাঁচ বছর ক্ষমতায় আছি, এখন আমার মনমতো উপজেলা চেয়ারম্যান যদি বানান, আমার মিডলম্যান (মাঝের ব্যক্তি) আমি আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। …আমি আজ এখানে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। পরে এখানে যেকোনো একটি দোকানে বসে আপনাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলব।’ তার এ বক্তব্য স্থানীয় অনেক লোক মুঠোফোনে রেকর্ড করেন। ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়ার হুমকির বিষয়ে গতকাল

বুধবার একরামুল করিম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভোটারদের

উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে কোনো বক্তব্য দিইনি। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে দেয়া আমার বক্তব্যের কোনো অংশকে কাটাছেঁড়া করে কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা প্রচার করছে। তাছাড়া আমি ছেলেকে নির্বাচনে প্রার্থী করিনি। আমার ছেলে একজন ব্যবসায়ী। এলাকার জনগণ জোর করে তাকে প্রার্থী করিয়েছে। সে এমনিতেই জিতবে।’
একরামুল করিম চৌধুরীর এ বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী। গতকাল বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রার্থীকে পছন্দ করবেন, তাকে ভোট দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার (একরামুল করিম চৌধুরী) মতো একজন ব্যক্তি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভোটারদের এলাকায় উন্নয়ন না করার হুমকি দেয়া মোটেই সমীচীন নয়। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ছেলের পক্ষে ভোটারদের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন, এতে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসব বক্তব্যের ভিডিওসহ নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান এই প্রার্থী।
এ বিষয়ে জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পার হলেই কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে গণ্য করা হয়। এর আগে সংসদ সদস্য তার পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে (আতাহার ইশরাক) পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনের পর সংসদ সদস্য নির্বাচনের প্রচারণা করতে পারবেন না।