বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

সাংগ্রাই জল উৎসবে সব সম্প্রদায়ের মিলনমেলা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটি থেকে : পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মারমা স¤প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই। বর্ষবরণের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে মারমা পাড়ায় বইছে সাংগ্রাই বা জল উৎসবের আনন্দ। গ্রামে গ্রামে পাড়া-মহল্লায় এ বছর যেন উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে পাহাড়ের মানুষ। আর মারমা স¤প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জল উৎসবের আয়োজনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু শেষ হচ্ছে। তবে মারমাদের জলকেলীর মধ্যদিয়ে বৈসাবী উৎসব শেষ হয়ে গেলেও এর রেশ থেকে যায় প্রায় পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে।
রাঙ্গামাটিতে উৎসবের শেষ দিনে মারমা স¤প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে দিয়ে পুরনো বছরের সব দুঃখ, কষ্ট, গøানি ধুয়ে-মুছে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সাংগ্রাই জল উৎসবে মেতে ওঠে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ সমবেত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি মারি স্টেডিয়াম মাঠে কেন্দ্রীয়ভাবে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) আয়োজনে চলে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। আর রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মারমা ও অন্যান্য স¤প্রদায়ের মানুষেরা সমবেত হয়েছে সাংগ্রাই জল উৎসবে। আর সাংগ্রাই জলোৎসবকে ঘিরে এলাকায় বইছে আনন্দের বন্যা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাঙ্গামাটিতে কেন্দ্রীয়ভাবে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) আয়োজনে রাঙ্গামাটির মারি স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। জল উৎসব উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য ও বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়েশা খান। এরপর প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা ফিতা কেটে জলকেলির উদ্বোধনের পর মারমা যুবক-যুবতীদের গায়ে পানি ছিটিয়ে জলকেলির শুভ সূচনা করেন। জলকেলির পর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মারমা শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) সভাপতি অংসুইপ্রæ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য জ¦রতী তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সোহেল আহমেদ, বিজিবি রাঙ্গামাটি সদর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আনোয়ার লতিফ খান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, দুদক রাঙ্গামাটির উপপরিচালক জাহিদ কামাল প্রমুখ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, বৈসাবী উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন নয়। যুগ-যুগ ধরে চলে আসছে এই উৎসব। এটা শুধু সাংস্কৃতিক উৎসব নয়। এটাতে ধর্মীয় অনুভূতিও জড়িত। এদিন মুরব্বিদের কাছ থেকে আশির্বাদ চাওয়া হয়। তাই এটি সামাজিক সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসবও।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন সব ভাষাভাষী ও সব ধর্মের লোক স¤প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবেন। তারই সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। আজকের এই জল উৎসব প্রমাণ করে আমরা শান্তি চাই স¤প্রীতি চাই ঐক্য চাই। সেটাই আজকে প্রমাণ হয়েছে।
গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়েশা খান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাংগ্রাইয়ের স¤প্রীতি, সৌহার্দবোধ ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পাহাড়ে সবাই যেন ভালো থাকে। বিগত বছরের দুঃখ, গøানি, ব্যর্থতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন বছরকে বরণের মাধ্যমে আমরা যেন সবাই ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি।
জল উৎসব উদ্বোধন করতে গিয়ে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, সাংগ্রাই উৎসব শুধু মারমা স¤প্রদায়ের নয়, সবার। এ উৎসব এ এলাকায় বসবাসরত সব স¤প্রদায়ের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এটাই হলো বাংলাদেশে অসা¤প্রদায়িকতার রূপ। আর এই ধরনের অনুষ্ঠান পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত সব স¤প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করে তুলবে। এখন সময় এসেছে তা সবার মধ্যে পৌঁছে দেয়ার।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত মুসলমান, হিন্দু, চাকমা, মারমাসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যেসব জাতিসত্তা রয়েছে তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, এক কথায় আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ভাষাভাষী, স¤প্রদায়ের বিশ্বাসকে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে যা যা করা প্রয়োজন তা করতে বর্তমান সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যার যার যে ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে আমাদের সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মারমারা পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এই জল উৎসব করে থাকে। মারমা তরুণ-তরুণীরা কয়েকটি দলে অংশ নেয় জলখেলায়। একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে পুরাতন বছরের গøানি, দুঃখ, অপশক্তিকে দূর করে ধুয়ে মুছে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় এই জল উৎসবের মাধ্যমে। এটি মারমাদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠান হওয়ায় উদযাপন করা হয় জাঁকজমকভাবে। এই আনন্দে মেতে উঠে পাহাড়ের হাজারো মানুষ। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় অন্যান্য স¤প্রদায়ের মানুষও। আর মৈত্রী জল বর্ষণের মাধ্যমে পাহাড়ের মানুষ সারা বছর যাতে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে এই প্রত্যাশা পাহাড়ের মানুষের।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নর নারী ছাড়াও কয়েক হাজার বাঙালি নরনারী অংশ নেয়। পাহাড়ি বাঙ্গালীর পদধুলীতে এক মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় মারমা স¤প্রদায়ের সাংগ্রাই বা জল উৎসব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়