বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

বাড়ছে বায়ু ও পানিবাহিত রোগ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : গ্রীষ্মের প্রখর রোদ ও ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি মিলেছে না কোথাও। তাপমাত্রা এরই মধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা আরো বাড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তা ছাড়াতে পারে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই গরমে পানি ও বায়ুবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, বৃষ্টি হলেও চলমান তাপপ্রবাহ শীঘ্রই যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এপ্রিল এমনিতেই উষ্ণতম মাস, পর্যাপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আমরা আশঙ্কা করছি, ২০ এপ্রিলের পরে গরম আরো বাড়তে পারে। ২৩ এপ্রিলের দিকে গিয়ে পাবনা-ঈশ্বরদী, যশোর ও কুষ্টিয়া বেল্টে তাপমাত্রা বেড়ে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের সময় পানি বেশি দূষিত হয়। তাপমাত্রা বেশি হলে খাবারও দ্রুত নষ্ট হয়। ওই খাবারে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। সেই নষ্ট খাবার খেলে এবং দূষিত পানি পান করলে বাড়ে পানিবাহিত রোগ ও পেটের পীড়া। গরমে ডায়রিয়া, বদহজম, পেটের পীড়া, সর্দি-কাশি ও জ¦র, জন্ডিস, পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, হিটস্ট্রোক, টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস বেশি হয়। এছাড়া গরমে ঘাম বেশি হয় বলে কিছু চর্মরোগ যেমন- ঘামাচি বা ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে এসব রোগীর সংখ্যাও।
সাধারণ সময়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ পর্যন্ত। তবে বর্তমানে হাসপাতালটিতে দৈনিক ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫৯৫ জন রোগী ভর্তি ছিল ১২ এপ্রিল। ১৩ এপ্রিল ৫২৫ জন, ১৪ এপ্রিল ৪৩৪ জন, ১৫ এপ্রিল ৪৯১ জন এবং গতকাল ১৬ এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৩৩৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন, ঈদের ছুটি শেষে ঘরমুখো সব মানুষ রাজধানীতে ফিরলে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালের প্রস্তুতি রয়েছে।
আইসিডিডিআরবি সূত্র বলছে, সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কম। এ বছর মার্চ মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ১৬ হাজার ৯৪৮ জন। এপ্রিলে ১৫ তারিখ বিকাল ৫টা পর্যন্ত রোগী ছাড়িয়েছে ৯ হাজারের ঘর। ঢাকা ও আশপাশের এলাকার ডায়রিয়া পরিস্থিতি আগামী ৩ সপ্তাহ অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আইসিডিডিআরবির ডায়রিয়া ইউনিটের দায়িত্বে থাকা ডা. বাহারুল আলম জানান, চলতি বছর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় এবং এখন এটি চতুর্থ সপ্তাহে প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে না, বা কমছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এই সময়ে রোগীর সংখ্যা কম।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত কয়েকদিনের গরমে ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা-জ¦র, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে

বহির্বিভাগে। তবে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। বহির্বিভাগে গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসার জন্য আসে। গরমের সময় এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, তাপমাত্রা যে হারে বেড়েছে সেই অনুপাতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। তবে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী কিছুটা বেড়েছে।
গরমের রোগবালাই প্রসঙ্গে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, তাপপ্রবাহ বাড়লে সাধারণত কিছু রোগব্যাধি দেখা যায়। গরম বাড়লে পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়। এছাড়া বাইরের খাবারেও জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হয়। ফলে হজমে সমস্যা হয়, খাদ্যে বিষক্রিয়া বেশি হয়। আবার গরমের সময় খাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাসি-পচা খাবার খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। গরম থেকে বাঁচতে মানুষ অনেক সময় বাইরে বিভিন্ন পানীয়, ফলের জুস বা আখের শরবত খেয়ে থাকে- যা পেটের পীড়া ও জন্ডিসের কারণ হতে পারে। হিটস্ট্রোক প্রসঙ্গে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, গরমে অনেকেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। যাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম যেমন- বয়স্ক ও শিশুদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
গরমের রোগবালাই থেকে প্রতিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, জন্ডিস ও হেপাটাইটিস থেকে বাঁচতে হলে বাইরের খোলা খাবার না খাওয়া, পানীয় না পান করা, খাওয়ার আগে খাবারটি ভালো আছে কিনা, তা যাচাই করে নেয়া উচিত। রোদের মধ্যে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। প্রচুর পানি পান করা উচিত। পোশাকের ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। এই গরমে আটসাঁট কাপড়ের বদলে সুতির কাপড় পরার পরামর্শ দেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়