বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

তাপপ্রবাহ থাকবে আরো দুই সপ্তাহ : ৪২ ডিগ্রি সে. ওঠার শঙ্কা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হরলাল রায় সাগর : রুদ্ররূপ নিয়েছে গ্রীষ্মের প্রথম মাস বৈশাখ। দিন দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। এরই মধ্যে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। তাপপ্রবাহ অন্তত আরো দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে। যা বেড়ে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন আবহাওয়াবিদরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ায় বয়ে যাওয়া এ তাপদাহের তীব্রতায় পুড়ছে দেশ। হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। জনস্বাস্থ্য পড়েছে ঝুঁকির মুখে। বাড়ছে ডায়রিয়া, জ¦রসহ নানা রোগ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকির কথা জানিয়ে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। উত্তপ্ত আবহাওয়ায় স্বস্তি নেই প্রাণীকুলেরও। প্রচণ্ড গরমে দিশাহারা পশুপাখী। সীমাহীন তাপে ধান ও সবজি ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষায় পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
গত ছয় বছরের মধ্যে এবারের পহেলা বৈশাখ ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্তপ্ত। এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাঙামাটিতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিনে গত বছর চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
কয়েক দিনের টানা তাপপ্রবাহের পর রাজধানীতে গতকাল নেমেছিল বৃষ্টি। দুপুরের পর থেকেই সূর্য গায়েব হয়ে যায়, আকাশ হয় অন্ধকার। এরপর বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ শুরু হয় ধুলিঝড়। পরে নামে মুষলধারে বৃষ্টি। ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ক্ষণিকের বৃষ্টি স্বস্তি দিতে পারেনি জনমনে। গরম কমেনি।
রেকর্ড তাপমাত্রা : চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। গত ৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়, রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল ওই এলাকায় ৪৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল মোংলায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৩ এবং যশোর ও ঈশ্বরদীতে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ফরিদপুর, রাজশাহী, রাঙামাটি ও খুলনায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টাঙ্গাইল ও পটুয়াখালী জেলায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেতুলিয়ায় ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যদিও বসন্তের শেষ মাস চৈত্রের শেষের দিক থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে আবহাওয়া। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চলতি এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে রাজধানীসহ গোটা দেশে। মাঝখানে বৃষ্টির কারণে কিছুটা সময় তাপমাত্রা সহনীয় ছিল। ১১ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, যা এ মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে। তবে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে। এ মাসে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার আশঙ্কা রয়েছে বলে আভাস দিলেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
প্রসঙ্গত, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
পূর্বাভাস : গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, বর্তমানে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। পরবর্তী ৫ দিনে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়। ঢাকায় বাতাসের গতি থাকতে পারে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭০ শতাংশ।
চিকিৎসকদের পরামর্শ : চলমান তাপপ্রবাহের সময় পঁচা-বাসি খাবার না খাওয়ার পরার্মশ দিয়ে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও যথাসম্ভব ফল-মূল খেতে হবে। তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ তার। তবে একান্ত বাইরে বের হলে ঢিলেঢালা সূতি পোশাক পরা ও ছাতা সঙ্গে রাখা ভালো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ভোরের কাগজকে বলেন, এখন মাঠে রয়েছে ধান ও সবজি ফসল। তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষায় যথাযথ সেচ ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি রাখতে হবে। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়। তাহলে ফসলের কোনো সমস্যা হবে না। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফসলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের কথা জানিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বিরূপ খবর পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়