বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

টিসিবির তালিকায় বিত্তবানদের নাম, ক্ষুব্ধ নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি : কোটচাঁদপুরে টিসিবির উপকারভোগী তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের মানুষের উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের মানুষের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন স্কুলের শিক্ষক, সাবেক জনপ্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিদের স্বজন, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা। মৃত ব্যক্তিদেরও এ তালিকায় যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঞ্চিতরা।
জানা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় মোট ৯ হাজার ৯৫১ জনকে টিসিবির উপকারভোগীর তালিকায় আনা হয়। তালিকায় সাফদারপুরে ২ হাজার, দোড়ায় ১ হাজার ৫০০, কুশনায় ১ হাজার ৫০০, বলুহরে ১ হাজার ২০০ ও এলাঙ্গি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০০ পৌরসভায় ২ হাজার ২৫১ জনকে টিসিবির উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের ১৬ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রকৃত যাচাই-বাছাই ছাড়াই জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তাবিত টিসিবির উপকারভোগীর তালিকার অনুমোদন দেন।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা টিসিবির তালিকা তৈরির সময় স্বজনপ্রীতি করার কারণে যাদের প্রাপ্য তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এদিকে টিসিবির তালিকা তৈরিতে অনিয়ম করায় প্রতিকার চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩নং কুশনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুজ্জামান সবুজ ও ৭নং ওয়ার্ড সদস্য ফরিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, খাদ্য সচিব, জেলা প্রশাসক, দুদক, ঝিনাইদহ র‌্যাব-৬ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, চেয়ারম্যান শাহারুজ্জামান তার আপন ভাই মাহাফুজ্জামান, চাচা আব্দুল হামিদ ও জাকির হোসনকে টিসিবির উপকারভোগীর তালিকায় এনেছেন। চেয়ারম্যানের ভাই ও চাচাদের রয়েছে বহুতল ভবন, ব্যবসা ও চাষের জমি। তাছাড়া পারিবারিকভাবে তারা এলাকায় বিত্তশালী হিসেবে পরিচিত। এ তালিকায় তিনি বহরমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম, তার স্ত্রী জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক রেকসনা শিরিন একই বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক আব্দুল আজিজ ও ধর্মীয় শিক্ষক আব্দুস সালামের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তালিকায় আরো রয়েছেন রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ৪নং কাশেম মুন্সী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের নাম। তালিকায় রেজাউল করিমের পেশা দেখানো হয়েছে কৃষি। এ ব্যাপারে শিক্ষক রেজাউল করিমের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না, ফেসবুকে দেখেছি আমার নামে টিসিবির কার্ড আছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উছেন মে অনিয়ম তদন্তের জন্য কোটচাঁদপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমারকে দায়িত্ব দেন। এ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এভাবেই ৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সংশ্লিষ্টরা যথেচ্ছভাবে টিসিবির তালিকা করেছেন।
তালিকা তৈরিতে অনিয়মের ব্যাপারে ৩নং কুশনা ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুজ্জামান সবুজ বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই আমার বক্তব্য নিয়ে কোনো লাভ নেই। তাছাড়া টিসিবি কাকে দেয়া যাবে আর কাকে দেয়া যাবে না সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো পরিপত্র নেই। পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কোটিপতি ব্যবসায়ী ও একটি যুব সংগঠনের পৌর সভাপতির নাম টিসিবি’র তালিকায় রয়েছে। তালিকায় রয়েছে ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রের বিত্তশালী স্ত্রীর নাম। অথচ শহরে বসবাসরত সিংহভাগ অসহায় দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষকে এ তালিকায় আনা হয়নি। কোটচাঁদপুর শহরের করাত কল মালিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের করাত কলের অধীনে দেড় শতাধিক শ্রমিক দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করেন। অথচ এদের কাউকেই টিসিবির তালিকায় আনা হয়নি।
কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র সহিদুজ্জামান বলেন, তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সময় চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলাম। আমার অবর্তমানে কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে টিসিবি পণ্য বিতরণেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত ১১ মার্চ পৌর এলাকায় টিসিবি পণ্য সরবরাহ করা হয়। এ সময় লাইনে অপেক্ষমাণ অনেকেই টিসিবি পণ্য পাননি। তাদের অভিযোগ- পণ্য বিতরণের কিছুক্ষণ পরই মাল শেষ হওয়ার কথা বলে বিতরণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ কার্ডধারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দেন। গত ২ এপ্রিল স্থানীয় পৌরসভায় কার্ডধারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকেই টিসিবি পণ্য পাননি। এমনটিই জানিয়েছেন ২নং ওয়ার্ডের টিসিবি কার্ডধারী ফিরোজ আহাম্মেদ। এদিকে কোটচাঁদপুর পৌরসভার প্রধান সহকারী বাবুল হোসেন জানান ঝিনাইদহ থেকে আসা ডিলাররা কোনো কোনো সময় টিসিবি পণ্য বিতরণকালে পৌর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তাদের কাজ শেষ করেন। এতে কর্তৃপক্ষকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে টিসিবির ঝিনাইদহের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারিভাবে সব দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মেয়র ও স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়েছে। এরপরও অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়