পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

পাবনায় খরায় ঝরছে আম-লিচুর গুটি, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাবনা প্রতিনিধি : লিচুর রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী ও চাটমোহরে প্রচণ্ড খরা ও তীব্র তাপপ্রবাহে বোঁটা শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ছে লিচু ও আমের গুটি। গাছের গোড়ায় পানি দিয়েও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
জানা যায়, রসাল ও সুস্বাদু লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঈশ্বরদীতে বৈশাখের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল আসে এবং চৈত্র মাসে মুকুল থেকে লিচুর সবুজ গুটি দেখা যায়। এখন লিচু গাছের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে ছোট ছোট সবুজ গুটি। এ বছর প্রতিটি গাছে রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছিল। মুকুল থেকে গুটিও বেশ ভালো হয়। তাই এবার চাষিরা লিচুর ভালো ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু গত ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ২৪ দিন প্রচণ্ড তাপদাহে লিচুর গুটি ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ছে। বহু গাছে শুধু বোঁটা দেখা যাচ্ছে। ফলে চাষিদের মধ্যে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার লিচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত রাজাপুর, তিনগাছা, ব্যাংগারা, বক্তারপুর, জগন্নাথপুর, বাঁশেরবাদা, জয়নগর, মিরকামারী, মানিকনগর, সাহাপুর, আওতাপাড়া, চরসাহাপুর ও চাটমোহর উপজেলার নতুন পাড়া, জালেশ্বর, রামচন্দ্রপুর, গুনাইগাছায় লিচুর আবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। বাগানের পর বাগান সারি সারি লিচু গাছ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার লিচুর গুটি বেশি ছিল। প্রায় প্রতিটি গাছেই প্রচুর গুটি এসেছিল। কিন্তু প্রচণ্ড খরা বৈরি আবহাওয়া অর্থাৎ তীব্র তাপদাহে যেভাবে লিচুর বোঁটা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং গুটি ঝরে পড়ছে তাতে ফলনে বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজাপুর গ্রামের রওশন আলী জানান, তার ২০ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এবার রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছিল গাছে। চৈত্রের খরতাপে লিচুর গুটি খুব ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে গুটি ঝরে পড়া অব্যাহত থাকলে আমাদের লিচু চাষিদের ভালো ফলনের স্বপ্নভঙ্গ হবে।
তিনি আরো জানান, টানা ২৪ দিন প্রচণ্ড খরার কারণে গাছের লিচুর গুটি সব ঝরে যাচ্ছে। রাতে ও সকালে পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। দিনে প্রচণ্ড গরম আবার রাতের আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকে। গরম-ঠাণ্ডার কারণে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এইভাবে গুটি ঝরে গেলে যা ফলনের আশা করেছিলাম তার অর্ধেক লিচুও পাব না। তিনগাছা গ্রামের বিপ্লব হোসেন ও আসলাম হোসেন জানান, তারা ২২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগানে এ পর্যন্ত ৬ বার পানি কিনে দিয়েছেন। এক দিকে পানি দেয়া হচ্ছে; আরেক দিকে সঙ্গে সঙ্গে মাটি পানি চুষে খাচ্ছে। খরার যে অবস্থা; তাতে ফলন তো দূরে থাক এক-চতুর্থাংশ লিচুও পাওয়া যাবে না বলে তারা সংশয় প্রকাশ করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর গ্রামের আমের বাগানের মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, আমার ১৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন রকমের আম গাছ আছে, আম গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে গুটি ধরেছিল। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেয়া সত্ত্বেও গুটিগুলো ঝরে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছি।
চাটমোহর উপজেলার নতুনপাড়া গ্রামের আম বাগানের মালিক আবুল কাশেম মাস্টার বলেন, আমার আম বাগানে এবার রেকর্ডসংখ্যক মুকুল এসেছিল, আমেরগুটি ও ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রায়ই পানি দিচ্ছি, তারপরও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে মুকুল ঝরে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে অধিকাংশ মুকুলই ঝরে যাবে বলে শঙ্কা রয়েছে, এতে ব্যাপক ক্ষতি হবে।
কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ীরা বলেন, এবার প্রচণ্ড খরার কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। চাষিরা গুটি ঝরা রোধ করতে আমাদের কাছে এসে পরামর্শ চাইছেন। আমরা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গুটি ঝরা রোধে চাষিদের কীটনাশক দিচ্ছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতেই এ বছর ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০ মেট্রিক টন। বৈশাখ মাসে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি লিচু গাছে এবার ভালো মুকুল এসেছিল। লিচুর ভালো ফলনের আশাও করেছিল কৃষি বিভাগ। কিন্তু প্রচণ্ড খরা ও তীব্র তাপপ্রবাহে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে প্রচুর। এমতাবস্থায় লিচুর গুটি ঝরা রোধে চাষিদের সঠিকভাবে বাগান পরিচর্যা করা ও প্রয়োজনমতো কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন জানান, এ বছর জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে ৪,৭২১ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭,৭৬৮ মেট্রিক টন। আমের বাগান রয়েছে ২,৭৩০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০,৯০০ মেট্রিক টন। গুটি ধরে রাখতে চাষিদের উপযুক্ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দেয়ার মাধ্যমে গুটি ঝরা অনেকটা রোধ করা সম্ভব বলে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক বাগানে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
তবে এবারের প্রচণ্ড খরার কারণে লিচু ও আমের গুটি ঝরে পড়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়