পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সোমবার ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার

আগের সংবাদ

দিশাহারা পাঁচ শতাধিক গ্রাহক : সুন্দরগঞ্জে কোটি টাকা নিয়ে উধাও এনজিও

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কথা বলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভার প্রায় পাঁচ শতাধিক নিরীহ লোকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে ‘কাশফুল ফাউন্ডেশন’ নামের একটি ভুয়া এনজিও। গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেলেও সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো তথ্য নেই ঘরমালিকের কাছে। এদিকে প্রতারণার শিকার হয়ে দিশাহারা ভুক্তভোগীরা।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভার পূর্ব বাইপাস মোড় থেকে গাইবান্ধা সড়ক ধরে ৫০০ গজ দূরে (ঠেংগা মারার পুরাতন অফিস) নোমান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নেয় ‘কাশফুল ফাউন্ডেশন’ নামের তথাকথিত এই এনজিও। সপ্তাহব্যাপী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কথা বলে গ্রাহক সংগ্রহ করে।
সদস্যর নাম অন্তর্ভুক্ত ও ঋণভেদে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন তারা। চলতি মাসেই গ্রাহকদের ঋণ দেয়ার কথা ছিল। তবে ঋণ নিতে এসে তারা দেখতে পান, এনজিওর অফিস তালাবদ্ধ।
এ সময় ২০ থেকে ৩০ জন সদসর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তত এক কোটি টাকা নিয়ে এনজিওর কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন। এনজিওটির কোনো ডকুমেন্ট নেই সদস্যদের কারো কাছেই। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোটর শ্রমিক মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমি দরিদ্র মানুষ। আমাকে দেড় লাখ টাকা লোন দেয়ার কথা বলে জামানত হিসেবে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া আমার নেতৃত্বে আরো ১৫ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কারো কাছে ১০ হাজার, কারো কাছে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়েছে। আমাকে ঋণ দেয়ার কথা ছিল। বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসি। এসে দেখি, আমার মতো অনেকেই এখানে উপস্থিত হয়েছেন, অফিস তালাবদ্ধ। যারা ঋণ দেবেন, তারা কেউ নেই। বুঝতে পারছি, আমরা সবাই প্রতারণার শিকার হয়েছি।
দহবন্দ ইউনিয়নের জিনিয়া গ্রামের হালিমা বেগম বলেন, লোনের কথা কয়া দশ হাজার করে ট্যাকা হামরা পাঁচজনে দিছি। লোন দেয়ার কথা কহে অফিসোত ডাকে আইল, হামরাও আইনো আশি দেখি অফিসোত ওমরা কেউ নাই। এখন হামার কী হইবে বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
প্রতারণা শিকার কামরুন্নাহার নামে এক নারী বলেন, শহরের মধ্য থেকে এত মানুষের কাছ থেকে এত টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল, কেউই বলতে পারে না এটা কোনো কথা হলো। বাড়ির মালিকের নাম শুনেই আমরা অনেকেই টাকা দিছি। এই টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পেছনে বাড়ির মালিকের সহযোগিতা থাকতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক মো. নোমান মাহমুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এনজিও পরিচালনা করার জন্য আমার বাসা ভাড়া নেয়। ভাড়া নেয়ার সময় তাদের সঙ্গে চুক্তি ও কাগজপত্রাদি চাইলে তারা বলেন ঢাকা থেকে স্যাররা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আসবেন। স্যারদের উপস্থিতিতে চুক্তি সই করা হবে। এ কথা বলে তারা এনজিওর কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা মানুষের টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যাবে আমি এটা ধারণাও করতে পারি নাই। তবে তাদের ভাড়া দেয়ার আগে কাগজপত্রাদি যাচাই করে বাসায় ওঠানো উচিত ছিল বলেও জানান তিনি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, এরকম সংস্থাকে বাসা ভাড়া দেয়ার আগে আমাদেরসহ থানায় বাসার মালিককে অবগত করা উচিত ছিল। বেশি আর্থিক সুবিধার কারণে তারা আমাদের অবগত করাননি হয়তোবা। বিষয়টি অবগত করালে তাদের বিষয় আগে খোঁজ নেয়া যেত। তাহলে হয়তো এত নিরীহ মানুষ প্রতারিত হতো না।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখবেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রতারণার সঙ্গে বাড়ির মালিক জড়িত ছিল কিনা, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়