কবিতাসমগ্র

আগের সংবাদ

অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বার্তা

পরের সংবাদ

ঈদে সদরঘাটে ৫ মৃত্যু : রিমান্ডে দায় স্বীকার পাঁচজনই কারাগারে

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঈদের দিন রাজধানীর সদরঘাটে এক লঞ্চের ধাক্কায় অপর লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় দায় স্বীকার করেছেন দুটি লঞ্চের পাঁচ কর্মী। তিন দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা এ কথা স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে রিমান্ড শেষে গতকাল সোমবার ৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা চৌধুরী হিমেল তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশি রিমান্ড শেষে আসামিদের হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন- এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার (চালক) আব্দুর রউফ হাওলাদার (৫৪), দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার সেলিম হাওলাদার (৫৪), ম্যানেজার ফারুক খান (৭০), এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মিজানুর রহমান (৪৮) ও

দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মনিরুজ্জামান (২৮)।
এর আগে গত শুক্রবার সদরঘাট নৌ পুলিশের সদস্যরা আসামিদের আদালতে হাজির করেন। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ৭ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদরঘাট নৌ থানার উপপরিদর্শক নকীব অয়জুল হক। আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেক আসামিকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজহারে বলা হয়, ঈদের দিন গত বৃহস্পতিবার ২টা ৫৫ মিনিটে সদরঘাট টার্মিনালের ১১ নম্বর পন্টুনে এমভি তাসরিফ-৪ নোঙর করে থাকা অবস্থায় এমভি ফারহান-৬ এর চালক বেপরোয়া গতিতে লঞ্চ চালিয়ে ১১ নম্বর পন্টুনে ঢোকার সময় তাসরিফ লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। এতে তাসরিফ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। সেটি দ্রুত গতিতে এসে পন্টুনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের আঘাত করলে তারা নদীতে পড়ে যায়। এতে এক পরিবারের তিনজনসহ ৫ যাত্রীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফারহান ও তাসরিফ লঞ্চের দায়িত্ব অবহেলা আছে। ওই ঘটনায় নিহত হন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার মাটিচোরা গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে ৩০ বছর বয়সি বিল্লাল, তার স্ত্রী ২৬ বছর বয়সি মুক্তা, তাদের ৩ বছরের মেয়ে সাইমা। বাকি দুজন হলেন- পটুয়াখালী সদরের জয়নাল আবেদিনের ছেলে ৩৮ বছর বয়সি রিপন হাওলাদার এবং ঠাকুরগাঁও সদরের নিশ্চিতপুর এলাকার আব্দুল্লাহ কাফীর ছেলে ১৯ বছর বয়সি রবিউল।
দুর্ঘটনার পর ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএ এর ক্রয় ও সংরক্ষণ পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম কমিটির আহ্বায়ক, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. আজগর আলী ও বন্দর শাখার যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেন কমিটির সদস্য। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়। এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ-এর পক্ষ থেকে প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির নমিনির কাছে দাফন-কাফন বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
এদিকে গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ঈদুল ফিতরের দিন ঢাকার সদরঘাটে দুটি লঞ্চের সংঘর্ষে ৫ জনের নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন জোট। পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি ও নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ৮ দফা দাবিগুলো হলো- একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন; তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিধিও রাখা; অতীতের সব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা; মেরিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রাখা; লঞ্চ মালিকদের সব যাত্রীর বিমা ও যাত্রী নিবন্ধন নিশ্চিত করা; দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা; ঈদ, পূজা, অন্যান্য উৎসবকালীন ও ঝড়ের সময় জেটিতে অতিরিক্ত পরিদর্শক এবং পুলিশ মোতায়েন করা ও ১১ এপ্রিল লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলোকে অবিলম্বে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়