কবিতাসমগ্র

আগের সংবাদ

অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বার্তা

পরের সংবাদ

ঈদের পরও সক্রিয় সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঈদের আগে হঠাৎ রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়ে গিয়েছিল মুরগির দাম- যা ঈদের পরও কমেনি। অথচ ঈদের পরে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি কম। বিক্রেতারা এখনো ঠিকভাবে দোকান খোলেননি, ক্রেতারাও আসছেন কম। কিন্তু এমন ফাঁকা পরিস্থিতিতেও বাজারে মুরগিসহ প্রায় সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে। এদিকে সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টায়ও কমানো যাচ্ছে না চালের দাম।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নানা অজুহাতে ঈদের আগে বেড়ে যায় সব ধরনের মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। একইভাবে পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে দাম বাড়ে ইলিশের। ক্রেতাশূন্য বাজারে গতকাল সোমবার ব্রয়লার মুরগি ২৪০-২৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন রকম মাছের দামও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা জানান, সাপ্লাই কম থাকায় দাম বেশি। কেউ কেউ বলছেন, পণ্যের দাম আরো বাড়বে।
মূলত, খামারি ও পাইকার এবং খুচরা বিক্রেতার সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি দেশের মুরগি এবং ডিমের বাজার। ‘সরবরাহ’ স্বল্পতার অজুুহাতে প্রায়ই বেড়ে যায় মুরগি ও ডিমের দাম। চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়। অথচ দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ জানাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। শুধু বলছেন, ‘সরবরাহ কম। চাহিদা বেশি।’ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বাজার মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
মুরগির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আগে বেড়ে যাওয়া দামই বহাল রেখেছেন বিক্রেতারা। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৪০-২৫০ টাকা, সোনালি ৩৮০ টাকা, লাল লেয়ার ৩৪০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও একই দামে মুরগি বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানান, মুরগির দাম এখন আর কমার সম্ভাবনা নেই, বরং বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে রফিকুল বারী নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে মুরগির সংকট রয়েছে। খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার দাম বেশি। তারপরও মুরগি পাওয়া যাচ্ছে না। এক মাস আগে দুই হাজার মুরগি অর্ডার করে দুই ধাপে মাত্র এক হাজার ৩০০ মুরগি পেয়েছি। খামারিদের কাছে মুরগি নেই। ঈদে সব বন্ধ, তাই এমন বাড়তি দাম। সব যখন খুলবে তখন আরো দাম বাড়বে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা মো. লিটন উদ্দিন বলেন, ঈদ

শেষ, তবুও দাম বেশি। দুইশ টাকার ওপরে ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের আগে থেকে ব্রয়লার মুরগির দাম সামান্য কমেছে। কিন্তু এটাকে কোনোভাবেই কম দাম বলে না।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডের দাম বেশি হওয়ার কারণে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। সেই হিসাবে আড়াইশ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি কিনতে হলে সেটা যে খুব বেশি পড়ছে, তা বলা যাবে না। তিনি বলেন, মুরগির বাজার স্থিতিশীল করতে হলে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মুরগির বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের দাম কমাতে হবে। নইলে আরো ক্ষুদ্র খামারি উৎপাদন ছাড়তে বাধ্য হবেন। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাজারে সংকট আরো তীব্র হবে।
এদিকে মাংসের সঙ্গে বেড়েছে আলু-পেঁয়াজ-আদা-রসুনের দামও। মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫০-৫৫ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৮০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত ৫ এপ্রিলের দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, পেঁয়াজে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা। দেশি ও চায়না রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া আলুর দাম ৫-১০ টাকা ও চায়না আদার দাম ২০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে। দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, দাম যে কেনো হুট করে বেড়ে গেল জানি না। ঈদে মানুষের চাহিদা বেশি থাকাই কারণ হতে পারে। তবে আলুর দাম আরো বাড়বে এটা বুঝতে পারছি।
এদিকে রমজানে সবজির বাজার নি¤œমুখী থাকলেও গতকাল বাজারে প্রায় সব সবজির দামই বাড়তি দেখা গেছে। শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, সজনে ১৫০ টাকা, কচুরমুখী ১৫০, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৫০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা করে।
বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম, প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা। দাম বেশি হওয়ার বিষয়ে সবজি বিক্রেতা রকিব বলেন, মাল কম পাচ্ছি আমরা। ক্রেতা কম থাকলেও মাল আনতে হচ্ছে। আমাদের পরিবহন খরচ তো ঠিকই দিতে হচ্ছে। তাই দাম বেশি।
অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে মাছের দামও বাড়তির দিকে। কিছু মাছের দাম বেড়েছে অনেক। গতকালের বাজারে ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ১২০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৫০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪৬০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১২০০ টাকা, কাচকি ৮০০ টাকা, কৈ ৩০০-৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, মেনি ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০ টাকা, কাজলী ১৮০০-২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মোটামুটি সবসময় ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাচকি এদিন বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়। হঠাৎ এত দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা হায়দার এক কথায় বলেন, ভালো জিনিসের দাম বেশিই হয়। কিন্তু এত বেশি হয় কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নদীর মাছের দাম বেশি হয়।
নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার
গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চালের বস্তায় জাত ও মূল্য লেখার নির্দেশনা দেয়া হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি বাজারগুলোতে মানা হচ্ছে না এ নির্দেশনা। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নওগাঁ থেকে চাল সরবরাহ হয় ১৮০ থেকে ২০০ ট্রাক। তবে এসব চালের বস্তায় প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা চালের জাত, মূল্য ও উৎপাদন তারিখের কোনো চিহ্ন নেই। মিলাররা বলছেন, আদেশ জানলেও বাস্তবায়নে দরকার দীর্ঘ সময়।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা নতুন বস্তায় চালের দামসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় তুলে ধরলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতি নেই। তবে এ ধরনের কাজের বাস্তবায়ন এত তাড়াতাড়ি সাধারণত হতে দেখা যায় না। মিল মালিকরা এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখালে ভিন্ন বিষয়। এদিকে রাজধানীর আড়তদাররা বলছেন, চালের খুচরা পর্যায়ে এখনো সরকারি আদেশের কোনো প্রভাব নেই। মিলগেটে তদারকি জোরদার করলেই মজুত করা পণ্যও আসবে বাজারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়