কাগজ ডেস্ক : প্রিমিয়ার লিগে এবারের মৌসুমের শিরোপা জেতার দৌড়ে আর্সেনালের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এগিয়ে আছে লিভারপুল, তবে গতকালের রাতটা মোটেও সুখকর ছিল না প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের শীর্ষে উঠার অন্যতম দাবিদার ক্লাবটির জন্য। কারণ টেবিলের শীর্ষস্থান দখলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গতকাল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে পয়েন্ট হারিয়েছে তারা। তাতে হাতছাড়া হয়েছে টেবিলের শীর্ষস্থান, এ নিয়ে ৩১ ম্যাচে ৭১ পয়েন্ট তাদের। আর রেডসের এই ড্রয়ে সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে শীর্ষস্থানে থাকা আর্সেনাল। এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে নটিংহ্যাম ফরেস্টকে ৩-১ গোলে হারিয়ে লিগ টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে টটেনহ্যাম। যেখানে অন্য ম্যাচে দুইবার এগিয়ে থেকেও শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগিতেই সন্তুষ্ঠ থাকতে হলো চেলসিকে।
ওল্ড ট্র্যাফোডে গতকালের ম্যাচটি ছিল লিভারপুলের জন্য মর্যাদার লড়াই। কারণ তাদের চিরপ্রতিদ্ব›িদ্ব ম্যানইউর শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা না থাকলেও লিভারপুলের জন্য প্রতিটি পয়েন্টও যেন সোনার হরিণ। পয়েন্ট হারলেই শিরোপা দৌড়ে পেছনে পড়তে হবে। এ সমীকরণ নিয়েই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে আজ খেলতে নামলেও একের পর এক গোল মিসের মহড়ায় ঠিকই পয়েন্ট হারাতে হলো ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যদের।
ম্যাচের ২৩ মিনিটে লুইস দিয়াজের গোলে লিড পায় লিভারপুল। কিন্তু তারপরও জয় নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করে তারা নিজেরাই নিজেদের দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছে। লিবারপুলের জ্যারেল কুয়ানশাহর ভুলে ব্রুনো ফার্নান্দেস ৫০ মিনিটে ইউনাইটেডকে সমতায় ফেরান।
তবে ৬৭ মিনিটে কোবি মেইনু ব্যবধান দ্বিগুণ করে ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেন। ১৮ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডার আলেহান্দ্রো গারনাচোর সঙ্গে পাস দেয়া-নেয়া করে বাঁ-প্রান্ত থেকে দারুণ এক শটে গোল পেয়ে যান। আর তাতেই প্রিমিয়ার লিগ যুগে লিভারপুলের বিপক্ষে ইউনাইটেডের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা এখন তিনিই। তাতে ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে রেডরা। আর পিছিয়ে পড়ার পর আবারও আক্রমণের ঝড় বয়ে দেয় লিভারপুল।
একের পর এক আক্রমণ করে যাওয়া লিভারপুল সমতায় ফেরে ৮৪ মিনিটে।
পেনাল্টি বক্সে হার্ভি এলিয়টকে ফেলে দিয়েছিলেন অ্যারন ওয়ান-বিসাকা। ম্যাচে সহজ সব গোলের সুযোগ নষ্ট করা মোহাম্মদ সালাহ এবার আর ভুল করেননি। সালাহের করা গোলে সমতায় ফিরে লিভারপুল। এরপরও সুযোগ পেয়েছে লিভারপুল। তবে লুইজ দিয়াজ দারুণ সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হলে শেষপর্যন্ত জয়বঞ্চিত থাকতে হয় লিভারপুলকে।
ম্যাচের ফলাফর নিয়ে সন্তুষ্ট জানিয়ে ক্লপ বলেছেন, ‘আমাদের এই ম্যাচটি জেতা উচিত ছিল, এখানে কোনো দ্বিমত নেই। প্রথমার্ধে আরো একটি গোল পাওনা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমরা সেটা কাজে লাগাতে পারিনি। পুরো লিভারপুল কমিউনিটিকে শান্ত থাকতে হবে। আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি, এখন শুধু সঠিকভাবে সবকিছু কাজে লাগাতে হবে। এই মুহূর্তে আমরা যদি ১০ পয়েন্ট এগিয়ে থাকতাম তবে এত কথা হতো না। এখনো শিরোপা লড়াইয়ে টিকে আছি এবং এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
অন্যদিকে নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে রাতের আরেক ম্যাচে লন্ডনের টটেনহ্যাম হটস্পার স্টেডিয়ামে কাল অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল স্বাগতিকরা। ১৫ মিনিটে ফরেস্ট ডিফেন্ডার মুরিলোর আত্মঘাতি গোলে এগিয়ে যায় আনগে পোস্তেকোগøুর দল। টিমো ওয়ার্নারের লো ক্রস থেকে মুরিলো বল ক্লিয়ার করতে গেলে তা নিজের জালেই জড়ায়। তবে ২৭ মিনিটে এন্থনি এলানগার পাস থেকে দারুণ স্ট্রাইকে ক্রিস উড ফরেস্টকে সমতায় ফেরান। এবারের মৌসুমে এটি উডের ১২তম গোল। ৫২ মিনিটে জোড়ালো শটে আবারো টটেনহ্যামকে এগিয়ে দেন মিকি ফন ডি ভেন। ছয় মিনিট পর ১৪ গজ দূর থেকে পেড্রো পোরোর করা শক্তিশালী ভলিতে টটেনহ্যামের বড় জয় নিশ্চিত হয়। আর এই জয়ে গোল ব্যবধানে এ্যাস্টন ভিলাকে পিছনে ফেলে টটেনহ্যাম চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। হাতে আবার এক ম্যাচ বেশি রয়েছে। শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করার মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার দৌড়ে সঠিক পথেই রয়েছে পোস্তেকোগøুর দল। যেখানে টেবিলের তলানির দিক থেকে চতুর্থ স্থানে থাকা ফরেস্ট গোল ব্যবধানে লুটনের থেকে কোনমতে রেলিগেশন জোন থেকে উপরে রয়েছে।
লিগে দিনের অন্য ম্যাচে গতকাল ওলে ম্যাকবার্নির শেষ মুহূর্তের গোলে টেবিলে তলানিতে থাকা দল শেফিল্ড ইউনাইটেডের সাথে ২-২ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে চেলসি। যদিও আগের ম্যাচে বৃহস্পতিবার স্টপেজ টাইমের অন্তিম মুহূর্তের দুই গোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৪-৩ গোলে পরাজিত করেছিল ব্লæজরা। গতকাল ব্রামাল লেনে ম্যাচের ১১ মিনিটে কনর গালাহারের কর্নার থেকে থিয়াগো সিলভার দারুণ ফিনিশিংয়ে এগিয়ে যায় চেলসি। তবে ৩২ মিনটে গুস্তাভো হামেরের পাস থেকে রাইট উইং ব্যাক জেয়ডেন বোগলে ব্লেডসের সমতায় ফেরান শেফিল্ডকে। কিন্তু ৬৬ মিনিটে কোনাকুনি শটে আবারো চেলসিকে এগিয়ে দেন নোনি মাদুয়েকে। স্টপেজ টাইমের তৃতীয় মিনিটে পোস্টের খুব কাছে থেকে ম্যাকবার্নির করা গোলে সমতা দিয়ে ম্যাচ শেষ করে শেফিল্ড।
ম্যাচ শেষে চেলসি বস মরিসিও পোচেত্তিনো বলেছেন, ‘এভাবে গোল হজম করা মোটেই ঠিক হয়নি। আমরা খুবই হতাশ। আমাদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’