গজারিয়ায় পুকুর থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অস্বস্তি

পরের সংবাদ

খান ইউনিসের ধ্বংসস্তূপেই আশ্রয় নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা : এবার রাফায় হামলা চালাবে ইসরায়েল!

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ সপ্তম মাসে গড়ানোর প্রেক্ষাপটে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার দাবি করেছে তেল আবিব। মাত্র একটি ব্রিগেড রেখে বাকি সৈন্যদের সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। অবশ্য গাজায় ‘উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি’ থাকবে বলে জোর দিয়ে জানিয়েছে তারা। এদিকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার হওয়ায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িঘরগুলোয় ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরেই আশ্রয় নিচ্ছেন তারা।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটার লার্নার বলেছেন, এটি যুদ্ধের তৎপরতার আরেকটি পর্যায়। খান ইউনিসে সামরিক বাহিনী তার মিশন সম্পন্ন করেছে বলে সৈন্যদের সরানো হচ্ছে। তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি। যুদ্ধ তখনই শেষ হতে পারে যখন জিম্মিরা বাড়ি ফিরে আসবে এবং হামাস নিঃশেষ হয়ে যাবে। এতে

বাহিনীর উপস্থিতি হ্রাস পেল ঠিকই, তবে আরো অনেক অভিযান পরিচালনা করার আছে। রাফা স্পষ্টতই একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। যেখানেই থাকুক, হামাসের সক্ষমতা ধ্বংস করতে হবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ত বলেছেন, গাজা থেকে রবিবার ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আর এই কাজটি করা হয়েছে ভবিষ্যতে সামরিক অভিযানের কথা চিন্তা করেই। বিশেষ করে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরে অভিযান চালানোর জন্য।
রাফায় ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই শহরটিতে অভিযান চালাতে আগ্রহী ছিল ইসরায়েল। তাদের দাবি, ওইখানেই রয়েছে হামাসের মূল ঘাঁটি। তাই হামাসকে পুরোপুরি শেষ করতে গেলে রাফায় অভিযান করতেই হবে। কিন্তু একাধিকবার আন্তর্জাতিক মহলের তোপের মুখে পড়েছে ইসরায়েলের এ পরিকল্পনা।
ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরেই ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা : খান ইউনিসে কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ চলেছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে শহর এবং আশপাশের এলাকা। এখন ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার হওয়ায় ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া তাদের বাড়িঘরগুলোয় ফিরতে শুরু করেছেন। ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরেই আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। মানুষজন বলছেন, ইসরায়েলি সেনারা তাদের ঘরবাড়ি এমনভাবে ধ্বংস করেছে যে তা দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে তাদের ঘর ছিল। রাস্তাঘাটও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সেগুলো দেখে মনে হচ্ছে বালির স্তূপ।
খান ইউনিসে ফিরে মাহা তাহের নামের তিন সন্তানের এক মা বলেন, চারদিকে লাশের গন্ধ পাচ্ছি। আমাদের শহর আর আগের মতো নেই। এখন এটি শুধুই ধ্বংসস্তূপ। রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন আমি কান্না ধরে রাখতে পারছিলাম না। তিনি বলেন, প্রতিটি বাড়িতে বুলডোজার চালানো হয়েছে। এমনকি, আমি মানুষজনকে মাটি খুঁড়ে মরদেহ বের করতেও দেখেছি। এ এক অসহনীয় পরিস্থিতি।
গত ৭ অক্টোবরের আগে খান ইউনিসে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করত। কয়েক মাসের ইসরায়েলের লাগাতার বোমা হামলা ও হামাস সদস্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে শহরটির অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে গাজায় হামলার পাশাপাশি সেখানে ত্রাণ সরবরাহেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় বসবাসরত ২২ লাখ ফিলিস্তিনি ভয়াবহ খাদ্যসংকটে পড়েছে। খাবার-পানির অভাবে উপত্যকাটিতে মানুষের মৃত্যুও শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং শক্তিশালী মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহের শুরুতে কিছু সতর্কবার্তাও দিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। তবে যুদ্ধবিরতির জন্য যে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে, সেটাও স্বীকার করেছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ ইসরায়েলের ওপর নয়, হামাসের ওপর যাওয়া উচিত। তার দাবি, হামাসের জন্যই ইসরায়েল নিজেদের অবস্থান কঠোর করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল চুক্তির জন্য প্রস্তুত, আত্মসমর্পণের জন্য নয়।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ : এ সপ্তাহের শুরু থেকেই কায়রোয় চলছে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা। মিসরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের চুক্তির আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে।
মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা দেশটির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, চুক্তির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতার ও হামাসের প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে কায়রো ছেড়ে গেছেন। তারা দুদিনের মধ্যে আবারো ফিরে এসে চুক্তির শর্তগুলো চূড়ান্ত করবেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরাও মিসরের রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় নেবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়