মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

শাওয়াল মাস ও ছয় রোজা : ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের পয়গাম নিয়ে আগমন ঘটেছিল পবিত্র রমজানের। আমল, ইখলাস, তওবা আর তারবিয়াতের এক সুনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মাধ্যমে মাহে রমজানের আবশ্যকীয় সিয়াম সাধনার পরিপ্রেক্ষিতে রোজাদার বান্দারা মহান আল্লাহর অধিকতর নৈকট্য লাভ ও প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর সাধ্যাতীত প্রয়াস পেয়েছেন। রোজাদার ব্যক্তির ব্যক্তিগত অপূর্ণতায় বা তার মানবীয় দুর্বলতায় সিয়াম পালনে নানা ত্রæটি-বিচ্যুতির অবকাশ থেকে যায়। করুণাময় প্রভু পৃথিবীর তাবত মানবগোষ্ঠীর জন্য রহমতের মূর্তপ্রতীক রাসুলে পাক (সা.)-এর মাধ্যমে সেই সব মানবীয় দুর্বলতা বা মানুষের ভুল-ব্যর্থতা জনিত অপূর্ণতার দেয়ালকে পরিপূর্ণ করে দিতে মাহে রমজানের অনুসরণে হিজরি বর্ষপঞ্জিতে তৎপরবর্তী যেই মাসটির অবতারণা করলেন, সেই পবিত্র শাওয়ালেও ছয়টি বিশেষ মর্যাদার রোজা পালনের বিধান প্রবর্তন করে দিয়েছেন। শাওয়াল মাসে পালনকৃত এ ছয়টি রোজা মুসলিম উম্মাহর জীবনে প্রভুত কল্যাণের বার্তাবাহী এক তাৎপর্যময় আমল হিসেবে পরিগণিত।
শাওয়াল হিজরি বর্ষপঞ্জির দশম মাস। এ মাসের অগ্রজ প্রেক্ষাপট রচিত হয় পবিত্র রমজানের মাধ্যমে এবং এর উত্তরসূরি হিসেবে আসে পবিত্র জিলকদ ও জিলহজ মাস; যা পবিত্র হজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শাওয়ালের সূচনা দিবসেই উদযাপিত হয় বিশ্ব মুসলিমের পরম খুশির ঈদুল ফিতর, সামর্থ্যবানেরা ফকির, মিসকিনসহ দরিদ্র মানুষদের দান করেন সাদাকাতুল ফিতর, বিত্তশালীরা আদায় করেন সম্পদের প্রদত্ত জাকাত, ঈদের তাকবির আর আনন্দের বার্তায় মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ- এসব দিক থেকে শাওয়াল মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা স্বীকৃত। শাওয়াল শব্দের মধ্যেও এ মাসের মাহাত্ম্য নিহিত রয়েছে; এর অর্থ দাঁড়ায় প্রসারিত করা, পূর্ণতা দান বা উন্নতকরণ। অর্থাৎ পরম রবের দরবারে বান্দার প্রার্থিত হস্তদ্বয় প্রসারিত করে আমলের জিন্দেগিকে পরিপূর্ণতা দানের মাধ্যমে নিজের অবস্থানকে উন্নত তথা সংহত করাই হচ্ছে পবিত্র শাওয়ালের হেকমত; এ মাসের আমল বান্দাকে মহান আল্লাহর অধিকতর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেয়।
সিহাহ সিত্তাহর অন্যতম হাদিস গ্রন্থ সহিহ মুসলিম শরিফে রয়েছে, ‘মান সামা রামাদান ছুম্মা আতবাআহু ছিত্তাম মিন শাওয়াল কাআন্নামা সামাদ্ দাহ্রা কুল্লুহু’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি মাহে রমজানের রোজা পালন করল, অতঃপর তার অনুসরণে শাওয়ালের ছয়টি রোজাও রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা পালন করল। নাসায়ি শরিফ ও বায়হাকি শরিফে রয়েছে ‘মান সামা ছিত্তাতুম মিন আয়্যামিন বাদাল ফিতর কাআন্না তামামুস সানাহ, মান জাআ বিল হাসানাতি ফালাহু আশরু আমসালুহু’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পর ছয়টি রোজা রাখবে সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল। আর যে কেউ একটি সৎকর্ম সম্পন্ন করবে তার জন্য দশগুণ প্রতিদান রয়েছে। উপরিউক্ত দুটি হাদিসের মর্মার্থকে আমরা যদি নিবিড় পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব যে, পবিত্র রমজানে ৩০ রোজার দশগুণের জন্য হয় ৩০০ দিন আর তারই ধারাবাহিকতায় পবিত্র শাওয়ালের ছয় রোজার দশগুণ হয় ৬০ দিবস; এভাবে রমজানের ৩০ রোজা আর শাওয়ালের ছয় রোজায় দিবসের সমষ্টিগত সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩০০ ষাটে আর চন্দ্রবর্ষ হয়ে থাকে ৩০০ চুয়ান্ন বা পঞ্চান্ন দিবসে। অর্থাৎ পূর্ণ বছর তো বটেই বরং তারচেয়েও বেশি- হাদিসদ্বয়ের বিশ্লেষণে এমনটিই পরিষ্কার ফুটে ওঠে। এ হিসাবটি মাস দিয়েও আমরা করতে পারি। যেমন- রমজানে এক মাসের রোজার দশগুণ হয় দশ মাস আর শাওয়ালের ছয় দিনের রোজায় দশগুণ হয় দুই মাস; মোট বার মাস বা পূর্ণ বছর! তাহলে রমজানের রোজা পালনের ধারাবাহিকতায় আমরা যদি শাওয়ালের ছয়টি রোজাও পালন করি, তবে এই মহত্তর আমলের মধ্য দিয়ে আমরা সারা বছর রোজা পালনের সওয়াব অর্জন করতে পারি।
শাওয়ালের ছয় রোজা আরো একটি দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ; সেটি হলো- পবিত্র রমজানের রোজা পালনে রোজাদার ব্যক্তির ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সম্পন্নকৃত ত্রæটি-বিচ্যুতির পরিপূরক হিসেবেও এ ছয় রোজা কাজ করে থাকে। মহান আল্লাহ কর্তৃক দুর্বল করে সৃষ্টি করা মানুষের যে কোনো কর্তব্য-পালনে ভুল-ভ্রান্তি অথবা কমতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই পবিত্র রমজানের রোজার মতো শ্রেষ্ঠ একটি ইবাদত পালনেও নানা ধরনের অসঙ্গতি, ভ্রান্তি বা অপূর্ণতার রেখাপাত ঘটতেই পারে। সেই অপূর্ণতা বা ঘাটতির পরিপূরণে শাওয়ালের ছয় রোজা অপরিমেয় বরকতের ভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয় এবং রোজাদারের পুণ্য-পাল্লা ভারী হওয়ার এক মজবুত উপকরণে পরিণত হয়ে থাকে।
শাওয়ালের ছয় রোজা পালনের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা বা বিধান প্রদত্ত হয়নি, তাই এটি ধারাবাহিকভাবেও রাখা যাবে অথবা বিরতি দিয়েও পালন করা যাবে। কারো যদি রমজানের রোজার কাজা থাকে তবে এ মাসে ফরজ রোজার সেই কাজা আগে পালন করা উত্তম, তবে পরে অন্য কোনো মাসে তা আদায় করলেও সমস্যার কিছু নেই। কেননা বুখারি ও মুসলিম শরিফে উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, ‘আমার ওপর রমজানের রোজা যেগুলো আদায় করতে বাকি থাকত সেগুলো পরবর্তী শাবান মাস ব্যতীত পালন করতে পারতাম না।’ এতে বোঝা যায়, কাজা ফরজ রোজা পরবর্তী রমজানের পূর্বে যে কোনো সময়ই আদায় করা বৈধ। এখানে স্মর্তব্য যে, কোনো অজুহাতেই যেন শাওয়ালের ছয়টি রোজা বেহাত না হয়ে যায়। আমরা সবাই যেন পবিত্র শাওয়ালের ছয়টি ফজিলতপূর্ণ রোজা পালনের জন্য এখন থেকেই শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি। পবিত্র রমজানে সম্পন্নকৃত যাবতীয় নেক আমলের ধারাবাহিকতায় শাওয়ালের ছয়টি রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ আমাদের তার প্রভুত অনুগ্রহ লাভের তাওফিক দিন- এ প্রত্যাশাই করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়