মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

ছয় মাসে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত : ‘গাজা যুদ্ধ মানবতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : গাজা যুদ্ধের ছয় মাস পূর্ণ হল গতকাল রবিবার। গণহত্যা ছাড়া গত ছয় মাসে গাজায় অবর্ণনীয় তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরায়েল। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের হামলার জের ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় হামলা ও অভিযান শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। বলা চলে গত ছয় মাস ধরে দুর্দশার চরম রূপটা দেখেছেন উপত্যকাটির বাসিন্দারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৩ হাজার ১৭৫ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৭৬ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশু ও ৯,২২০ জন নারী রয়েছে। আল-জাজিরা এ খবর দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মানবিক ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক বিদায়ী আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন

গ্রিফিথস গত শনিবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধকে ‘মানবতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেছেন। বিবৃতিতে তিনি সম্মিলিত সংকল্পের আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিদিন এই যুদ্ধে আরো বেশিসংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছেন। যারা এই যুদ্ধে হতাহত ও জিম্মি হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি তিনি সহানুভূতি জানাচ্ছেন। ইসরায়েলের তথ্যমতে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৭০ জন নিহত হন। সেদিন ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
ইরানি হামলার ভয়ে দূতাবাস খালি করছে ইসরায়েল :
এদিকে, সরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে ইরান। এর মধ্যে ইসরায়েলকে শাস্তি দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। ইরানের এই প্রতিশোধমূলক হামলার ভয়ে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে নেতানিয়াহু সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দূতাবাস খালি করতে শুরু করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে কমপক্ষে ২৮টি দূতাবাস বা কনস্যুলেট অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসরায়েল যেসব দেশে তার দূতাবাসগুলো খালি করে ফেলেছে সেসব দেশের মধ্যে বাহরাইন, মিসর, জর্ডান, মরক্কো এবং তুরস্কও রয়েছে।
অন্যদিকে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কায় শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্র। তেল আবিবকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটি। ইরানের সম্ভব্য হামলা ও ধরন নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, এবার হয়তো মিত্র কোনো গোষ্ঠীকে দিয়ে নয়, ইরান সরাসরিই ইসরায়েলের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে। হামলার ধরন কেমন হতে পারে বা কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে কোথায় আঘাত হানতে পারে তারও সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতিশোধ নিতে খুব বেশি সময় নেবে না তেহরান। আগামী সপ্তাহেই হতে পারে হামলা। আর এতে ব্যবহার করা হতে পারে শাহেদ কামিকাজে ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যার লক্ষ্যবস্তুতে হতে পারে ইসরায়েলের দূতাবাস কিংবা কনস্যুলেট ভবন।
ইরান কি পাল্টা হামলা চালাবে?
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করেন, ইরান পাল্টা আঘাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ইরান ড্রোন এবং ক্রুস মিসাইল হামলার পরিকল্পনা করছে।
তবে কখন এবং কোন জায়গায় এই আঘাত করা হবে সেটি নিশ্চিত নন মার্কিন কর্মকর্তারা। এই হামলা এখন থেকে শুরু করে রমজান মাসের শেষ সপ্তাহে যে কোনো সময় হতে পারে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
ড্রোন ও মিসাইল হামলা ইরাক ও সিরিয়ার মাটি থেকে নাকি ইরানের ভেতর থেকে পরিচালনা করা হবে সেবিষয়েও এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি মার্কিন গোয়েন্দারা।
এদিকে ইসরায়েলও বলেছে যে ইরান যদি পাল্টা আঘাত করে তাহলে তারা আবারো হামলা চালাবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের সংকেত বেজে উঠতে পারে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো কড়া সামরিক জবাব দিতে গেলে সেটি যুদ্ধকে ইরানের দোরগোড়ায় টেনে আনবে। কারণ, ইরানের বিষয়ে ইসরায়েলও ছেড়ে কথা বলবে না।
অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলার যথাযথ জবাব দিতে না পারলে ইরানের সামরিক সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। ফলে ভবিষ্যতে ইসরায়েল ইরানকে আরো দুর্বল ভাববে এবং তাদের ওপর চেপে বসবে। ইরানকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা দুর্বল নয়। যে কোনো হামলার জবাব দেবার ক্ষমতা তাদের রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের কোনো যুদ্ধের সূত্রপাত না করে ইরান কীভাবে ইসরায়েলকে জবাব দিতে পারে সেটি নিয়ে এক ধরনের দোদ্যুল্যমানতা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ইসরায়েলকে পাল্টা আঘাত করার মতো সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য ইরানের রয়েছে কিনা?
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ও লেখক আলী সাদরাজদেহ বিবিসিকে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর মতো সামর্থ্য ইরানের নেই।
‘কিন্তু দেশের ভেতরে জনগণকে দেখানোর জন্য হলেও ইরানকে একটি জবাব দিতে হবে। এছাড়া নিজেদের মিত্রদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্যও ইরানকে একটি পদক্ষেপ নিতে হবে,’ বলেন সাদরাজদেহ।
ইসরায়েলের কাছে ইরান যতই অপদস্থ হোক না কেন, এর কড়া জবাব দেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এর পরিবর্তে ইরানকে ‘কৌশলগত কারণে ধৈর্য’ ধরতে হবে।
কারণ, ইরানের এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা। কিছু ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়ে ১০০ জন ইসরায়েলিকে হত্যা করার চেয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে এগিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে শুধু ইসরায়েল নয়, আমেরিকার হামলা ঠেকাতেও সক্ষম হবে ইরান।
হেজবুল্লার অবস্থান কী?
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী ইসরায়েলি স্বার্থে আঘাত হানছে। কিন্তু তাদের সে তৎপরতাও সীমিত আকারে। এসব গোষ্ঠী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পুরোপুরি যুদ্ধে লিপ্ত হতে চায় না।
‘ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর কাছে ইসরায়েলের দূতাবাসে হামলার বিষয়টি চিন্তা করাটা বেশ কঠিন,’ বলেন সাদরাজদেহ। হেজবুল্লাহ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে সংগঠিত সশস্ত্র গ্রুপ। রাষ্ট্রীয় বাহিনী না হয়েও তাদের বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজারের মতো যোদ্ধা রয়েছে। তারপরেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের পক্ষ নিয়ে হেজবুল্লাহ এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না।
ইরানকে মোকাবিলায় প্রস্তুত ইসরায়েল :
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জেরে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা মোকাবিলায় ইসরায়েল প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল রবিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত এই মন্তব্য করেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, শত্রæ ইরানের সঙ্গে তৈরি হতে পারে এমন যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার দেশ প্রস্তুত। ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে চলমান পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর দেয়া বিবৃতিতে ওই মন্তব্য করেন গ্যালান্ত।
ইরানের সঙ্গে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই এবার লোববনে হামলা চালাল ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। গতকাল রবিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল গতকাল ভোরে পূর্ব লেবাননের বেকা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়েছে বলে দেশটির দুটি নিরাপত্তা সূত্র রয়র্টার্সকে জানিয়েছে। লেবাননে একটি ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করার কয়েক ঘণ্টা পর এই হামলা চালানো হল। সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামে হেজবুল্লাহর একটি প্রশিক্ষণ শিবিরকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালায় ইসরায়েল। এছাড়া পূর্বাঞ্চলীয় শহর বালবেকের কাছে অবস্থিত সাফরি শহরও হামলার লক্ষ্য ছিল বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়