আজকের খেলা

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল হোক

পরের সংবাদ

বাসের যাত্রীরা স্বস্তিতেই ঘরে ফিরছেন, লঞ্চে মিলছে যাত্রী

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঈদের ছুটি শুরু না হলেও গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, ফুলবাড়ীয়া, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল ও বিভিন্ন স্থানে বাস কাউন্টারগুলোর সামনে সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। বিকাল থেকে ভিড় আরো বাড়তে থাকে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও বিকাল থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের আনাগোনা বেড়েছে। এদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাস টার্মিনালগুলোতে পুলিশের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে গতকাল দুপুরের দিকে আগের কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় আগে থেকে টিকেট কিনে রাখা যাত্রীরা পথের কষ্ট এড়াতে আগেভাগেই রওনা হয়েছেন। যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিল নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। আবার অনেকেই আগেভাগে টার্মিনালে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। রংপুরের যাত্রী মাহবুব হোসেন বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ হবে। আগমনী পরিবহনে আগেই টিকেট কাটা ছিল, তাই পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি ছুটি শুরু হলে রওনা হব।
অন্যদিকে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারগুলোর সামনে কর্মীদের টিকেট বিক্রির জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করতে দেখা গেছে। টার্মিনালে এসে টিকেট কেটে যাচ্ছেন- এমন যাত্রীদেরও দেখা গেছে।
ঢাকা-বরিশাল-ঝালকাঠি রুটের সাকুরা পরিবহনের কর্মী রাসেল বলেন, আশা করছি এবার বাসগুলোতে ভালো যাত্রী হবে। ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই যাত্রীরা আসছেন এবং রওনা হচ্ছেন। আবার অনেকে এসেই টিকেট কেটে যাত্রা করছেন। এখনো সব বাস কোম্পানির টিকেট অবিকৃত আছে। টিকেটের কোনো সংকট নেই।
ঈগল পরিবহনের কর্মী মোস্তফা জানান, ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। মঙ্গলবার থেকে ঈদের ছুটি পুরোপুরি শুরু হবে। আজ প্রথম দিনে যাত্রীর ভালোই চাপ রয়েছে। যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে।
যশোরে রেজাউল জানান, ঈদ যত ঘনিয়ে আসে, ঝামেলা ততই বাড়তে থাকে। তাই আগেই পরিবারের সদস্যদের বাসে তুলে দেয়ার জন্য এসেছি। গরমে যেন কষ্ট না হয় তাই এসি বসের টিকেট কেটেছি। রাস্তায় এখনো কোনো ঝামেলা নেই, আশা করছি ভালোভাবে বাড়ি পৌঁছবে।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালেও যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। ভোগান্তি এড়াতেই অনেকে ঢাকা ছাড়ছেন, আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এই টার্মিনাল থেকে এনা পরিবহন, ন্যাশনাল পরিবহন, একতা পরিবহন, দেশ ট্রাভেলসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাসগুলোতে আগে থেকে টিকেট কেটে রাখা যাত্রীদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল,

জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নালিতাবাড়িগামী লোকাল বাসে এখন টিকেট কাটতে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে টিকেটপ্রতি ১০০ টাকা বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দেশ ট্রাভেলসের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে আগেই দূরপাল্লার বাসের টিকেট বিক্রি হয়েছে। সেসব যাত্রীরা আজ সকাল থেকে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। অফিস খোলা থাকায় চাকরিজীবীরা কয়েক দিন পর ঢাকা ছাড়বেন। অনেকে পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অফিস ছুটি হলেই সব রুটে ভিড় বাড়বে।
একতা পরিবহনের রাজশাহীর যাত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, তার স্বামী ব্যাংকে চাকরি করেন। স্বামীর ছুটি না হওয়ায় তিনি ছেলেমেয়েদের নিয়ে আগেই বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকেও দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীরা রওনা দিতে শুরু করেছে। বরিশালের যাত্রী মোজাম্মেল শ্যামলী পরিবহনের বাসে আগেই টিকেট কেটেছিলেন। তিনি তার পরিবারের ৬ সদস্যকে বাসে তুলে দিতে এসেছেন। মোজাম্মেল আগামী বুধবার সকালের বাসে বরিশালে পৌঁছবেন বলে জানান।
শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ জানান, বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির পাশাপাশি এখন তাৎক্ষণিক টিকেটও বিক্রি হচ্ছে। লোকজন ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। সব রুটের এসি বাসের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কাউন্টার থেকে টিকেট কিনতে যাত্রীদের যেন ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেজন্য নজরদারি চলছে। বাড়তি ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে না।
রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল থেকেও বিভিন্ন রুটে ঘরমুখো যাত্রীরা পরিবার পরিজন নিয়ে রওনা হচ্ছেন।
এদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব বাস টার্মিনালে পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কেউ সমস্যায় পড়লে বা অভিযোগ করলে তৎক্ষণাৎ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সড়কে চাপ : ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে চট্টগ্রামমুখী লেনে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ১৩ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গতকাল শুক্রবারও এই চাপ অব্যাহত ছিল। গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এই কারণে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। মেঘনা-গোমতী সেতুর পাড় হয়ে কুমিল্লা অংশে মহাসড়কের কিছু অংশ সরু হওয়ার কিছুটা জটলার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের তিন দিন আগে থেকে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ হলে সমস্যা কেটে যাবে।
ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ গত কয়েক দিনের তুলনায় বেড়েছে। এদিকে ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।
নৌ পথে ঈদযাত্রা : এদিকে নৌপথেও ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে ভোলার বিভিন্ন গন্তব্যের লঞ্চগুলোতে যাত্রীরা যাওয়া শুরু করেছেন। বরিশালের লঞ্চগুলোতে এখনো তেমন যাত্রীর দেখা মিলছে না।
কুয়াকাটা-২ লঞ্চের মালিক আবুল কালাম খান জানিয়েছেন, নৌপথে ঈদযাত্রা একটু বিলম্বেই শুরু হয়। শুক্রবার হওয়ায় গতকাল অনেকেই ঈদযাত্রা শুরু করেছেন। আগামী কয়েক দিনে যাত্রী আরো বাড়বে। তবে ভাড়া বাড়ানো হবে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা হবে। লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৪১টি নৌরুটে বিপুলসংখ্যক লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়