আজকের খেলা

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল হোক

পরের সংবাদ

ফের বেড়েছে সব মাংসের দাম : ঈদের বাজার

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এই সময়ে বাড়তি চাহিদা ও সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ফের অস্থির হয়ে উঠেছে মাংসের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাংসের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংস ৫০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৫ মার্চ ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, আলুসহ ২৯টি পণ্যের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তবে, সরকারের ওই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামেই পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়- ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা ও দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৩০-৩৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।
মাংসের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজার করতে আসা আক্তার নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, বিক্রেতারা ইচ্ছা মতো মাংসের দাম নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানেন, ঈদে সবাই কম-বেশি মাংস কিনবেনই। তারা এখন সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়েছেন। এগুলো দেখার কেউ নেই। বাজার তদারকির দুর্বলতার কারণে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
বিক্রেতারা জানান, ঈদের কারণে চাহিদা বেড়েছে মাংসের, যা সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি। এতে বাড়ছে দাম। যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ?মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে বেড়েছে চাহিদাও। সব মিলিয়ে মুরগির দাম বাড়তি। রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ভাই ভাই ট্রেডার্সের মুরগি বিক্রেতা কামাল উদ্দিন জানান, ঈদের জন্য মুরগির চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে। গত তিন দিন ধরে প্রতিদিনই পাইকারি বাজারে মুরগির দাম পাঁচ-দশ টাকা করে বাড়ছে। ঈদের পর দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের পর আরো বাড়তে পারে। কারণ ঈদের পর সাধারণত বিয়ে-সাদিসহ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়বে। ফলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এদিকে, প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, করপোরেট গ্রুপগুলোর কৃত্রিম সংকটে মুরগির বাচ্চা কিনতে না পেরে উৎপাদন থেকে বাধ্য হয়ে সরে যাচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। মুরগির বাজারের এখন বেশির ভাগ মুরগি হচ্ছে করপোরেট গ্রুপগুলোর। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। ফলে বাজারে মুরগির দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে জানিয়ে বিপিএ সভাপতি বলেন, একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করতে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা। অথচ প্রান্তিক খামারিদের সেই বাচ্চা কিনতে হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির ফিড উৎপাদন করতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের সেই ফিড কিনতে হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা।
মুরগির মতো গরু ও খাসির মাংসের দামও বেড়েছে। বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ, গত সপ্তাহেও গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। মালিবাগ কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতা মোহন মিয়া বলেন, ঈদ সামনে রেখে গরুর দাম বেড়েছে। এ কারণে মাংসের দামও বাড়তি। কম দামে মাংস বিক্রি করে আমাদের কোনো লাভই হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে গরুর দাম কম ছিল, তাই আমরা কম দামে মাংস বিক্রি করেছি। এখন গরুর দাম বেশি, যে দামে কিনি সেই হিসাবে বিক্রি করতে হয়।
এদিকে, ঈদের আরেক প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য পোলাওয়ের চাল। রমজান মাসের শুরু থেকে ১-২ টাকা করে বেড়ে এখন খোলা চিনিগুঁড়া ১২৫ থেকে মানভেদে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চাল ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা কম থাকায় সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে সব ধরনের সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পেঁয়াজ ও আলু আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, দেশি পুরনো পেঁয়াজ ৬০ টাকা এবং আলু ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুর মুখীর কেজি ৮০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, সজনে ১৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও ধনেপাতা ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ব্রোকলি ৩০ টাকা এবং কলার হালি ৪০ টাকা ও লেবুর হালি ২০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়