আজকের খেলা

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল হোক

পরের সংবাদ

ইসরায়েলে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের হুঁশিয়ারি : বাইডেন ও ট্রাম্পের সতর্কবার্তা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বেসামরিকদের ও ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইসরায়েলকে কড়া বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তা না হলে ইসরায়েলের বিষয়ে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আনা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে এক টেলিফোন কলে এ সতর্কতা জানান বাইডেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় যদি শিগগিরই শান্তি ফিরে না আসে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ইসরায়েল। এর পরিপ্রেক্ষিতে অবরুদ্ধ গাজায় দুটি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৩৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। আরো দুটি সীমান্ত খুলে দেয়ার কথাও জানিয়েছে।
গাজায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পর বেসামরিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত কঠোর অবস্থানের জানান দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই হামলার ঘটনার পর বাইডেনের ডেমোক্র্যাট দলীয় সহকর্মীরা ইসরায়েলকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় শর্ত আরোপ করার জন্য নতুন করে আহ্বান জানান। বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতিমালা বলতে বাইডেন অস্ত্র সরবরাহ ও জাতিসংঘে ইসরায়েলকে সমর্থন জানানোর বিষয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
ইসরায়েলের আজীবন সমর্থক বাইডেন দেশটিতে দেয়া

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা আটকে রাখা অথবা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখার চাপ প্রতিরোধ করে আসছিলেন। এবার তিনি প্রথমবারের মতো ইসরায়েলকে দেয়া সহায়তায় সম্ভাব্য শর্ত আরোপ করার হুমকি দিলেন। এটি ৬ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে।
দুই নেতার কথোপকথনের বিষয়ে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, বেসামরিকদের ক্ষতি, মানবিক দুর্ভোগ চিহ্নিত এবং ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইসরায়েলকে সুনির্দিষ্ট, বাস্তব ও যাচাইযোগ্য পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে বলে বাইডেন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। বাইডেন ও নেতানিয়াহু প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কথা বলেন। এ সময় বাইডেন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন ‘এসব বিষয়ে ইসরায়েলের আশু পদক্ষেপ ?নিয়ে পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতি নির্ধারিত হবে’।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের শীর্ষ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। জাতিসংঘে গাজা নিয়ে তোলা অধিকাংশ প্রস্তাবে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের কূটনৈতিক ঢাল হিসেবে কাজ করেছে।
বাইডেনের কলের পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি ইসরায়েল ও গাজা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতিতে সুনির্দিষ্ট কী পরিবর্তন আনতে পারে তার বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক ঘণ্টা বা দিনের মধ্যে’ ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলোর একটি ঘোষণা দেখার আশা করছে ওয়াশিংটন।
পরে ইসরায়েল মানবিক সহায়তা সরবরাহ বাড়াতে গাজার ভূখণ্ডের নিকটবর্তী তাদের আশদোদ বন্দর এবং জর্ডান থেকে সরাসরি সরবরাহ বাড়াতে ইসরায়েল-গাজার মধ্যবর্তী ইরেজ ক্রসিং খোলার পদক্ষেপ নিলে হোয়াইট হাউস স্বাগত জানায়। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এড্রিয়েন ওয়াটসন ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এগুলো এখন পুরোপুরি ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
ইসরায়েলকে ট্রাম্পের সতর্কবার্তা : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় যদি শিগগির শান্তি ফিরে না আসে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে গাজায় হাজার হাজার বেসামরিক নিহতের ঘটনায় এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের সমালোচনাও করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার একটি রেডিওতে রিপাবলিকানপন্থি মার্কিন সাংবাদিক হিউ হেউইটকে সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলের সরকারকে আমি খুবই সহজ এবং সংক্ষিপ্ত একটি বার্তা দিতে চাই- দ্রুত যুদ্ধ শেষ করুন, শান্তি ফিরিয়ে আনুন এবং মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। এবং তাদেরকে অবশ্যই এটি করতে হবে- কারণ আপনাকে, আমাকে, আমাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরতে হবে। সেটি যত শিগগিরই হয় ততই ভালো।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমিও সমর্থন করি, কিন্তু ইসরায়েল যেভাবে এই যুদ্ধ করছে- সেটি আমার পছন্দ নয়। আমার কথা স্পষ্ট- এই যুদ্ধে ইসরায়েল জিতবে কিনা- তা অনিশ্চিত। কিন্তু দীর্ঘদিন যদি এই যুদ্ধ চলে, তাহলে আন্তর্জাতিক জনসমর্থন পুরোপুরি হারাবে ইসরায়েল।
গাজায় প্রতিদিন প্রবেশ করবে ৩৫০ ত্রাণবাহী ট্রাক : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ৩৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করবে। গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, কারেম আবু সালেম (কারেম শালোম) ক্রসিং দিয়ে দক্ষিণ ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে গাজায় ২৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করবে। আর ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক মিসরের রাফা সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করবে।
এই সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলে গাজায় ত্রাণ সহায়তা বাড়বে। এখন প্রতিদিন গাজায় মাত্র ২০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। ইসরায়েল ঘোষণা দিয়ে বলেছে, উত্তর গাজায় বেইট হানুন (ইরেজ) ক্রসিং খুলবে। এছাড়া আশদোদ বন্দরের মাধ্যমে সাময়িক সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দেবে।
মানবাধিকার সংস্থা অক্সফাম বলেছে, জানুয়ারি থেকে উত্তর গাজার বাসিন্দারা দিনে ২৪৫ ক্যালোরির চেয়েও কম খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যা ন্যুনতম চাহিদার ধারে কাছেও নেই। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সি ৩০ শতাংশ শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। এদিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি রয়েছে ২ হাজারের বেশি শিশু।
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ চায় মানবাধিকার কাউন্সিল : গাজায় গণহত্যার বিষয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইসরায়েলের কাছে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় এরই মধ্যে গাজায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে সংস্থাটি। ৪৭ সদস্যের সংস্থাটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ২৮টি। বিপক্ষে ৬টি ও ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে ১৩ দেশ। প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আরো লঙ্ঘন ও সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করতে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গাজায় গণহত্যার যে ঝুঁকির কথা জানিয়েছিল সে বিষয়েও প্রস্তাবে জোর দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার ওআইসির পক্ষে মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রস্তাবটি পেশ করে পাকিস্তান। এতে দ্রুত যুদ্ধবিরতির ও জরুরি ত্রাণ প্রবেশের কথাও বলা হয়েছে। এদিকে, জেনেভায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত মেরাভ ইলন শাহার এই প্রস্তাবকে মানবাধিকার কাউন্সিল ও জাতিসংঘের জন্য একটি ক্ষত বলে নিন্দা করেছেন।
১০১ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি : গাজার ক্রসিং ও সীমান্ত প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ১০১ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তারা অবরুদ্ধ ও বোমাবর্ষণ অঞ্চলে ফিরে এসেছেন।
একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্তদের অনেককেই রাফায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কারণ কারাগারে থাকাকালীন তারা মারধরের শিকার হয়েছেন। ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ অনুসারে, বন্দি কেন্দ্রের হাসপাতালের একজন ইসরায়েলি চিকিৎসক সতর্ক করে বলেছিলেন, বন্দিদের পরিস্থিতি শোচনীয়। এখানে ইসরায়েলি আইনের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টাই বেঁধে রাখায় তাদের হাতে ও পায়ে জখম হয়ে যায়। তাই প্রায়শই তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হতো। বন্দিদের নিয়মিত চোখ বেঁধে রাখা হতো। ছোট স্ট্র দিয়ে খাবার দেয়া হতো। তাছাড়া সময় মতো টয়লেটে যেতে দেয়া হতো না। এমনকি যথাযথ চিকিৎসা সেবা ছাড়াই বড় বড় অস্ত্রোপচার করা হতো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়