সাবের হোসেন চৌধুরী : বনের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় নয়, বন কর্মকর্তার খুনিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

আগের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

পরের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের ভল্টের তালা ভেঙে প্রায় দেড় কোটি টাকা লুট করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ সময় বাধা দেয়ায় পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মারধর করে ১৪টি অস্ত্র, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় তারা। লুট করে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে অপহরণ করে ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকেও। শুধু তাই নয়, পরদিন অর্থাৎ বুধবার দুপুরেও থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শাখায় ডাকাতি হয়েছে। দুর্ধর্ষ এ ঘটনায় আবারো আলোচনায় কেএনএফ। বান্দরবান সদর উপজেলা বাদে অন্য ছয়টি উপজেলার সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের আগে প্রয়োজনীয় লেনদেন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে মানুষ। গত বছর কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে ২০২৩ সালের জুনে ১৮ সদস্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। এই ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হোঁচট খেল। কেএনএফের এই ডাকাতি ও অপহরণের কারণে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হতে পারে বলে মনে করছেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির কেউ কেউ। স্থানীয়রা বলছেন, পার্বত্য তিন জেলায় তৎপর থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জেএসএস (সন্তু লারমা), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (প্রসিত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টি বা এমএনপির সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে টপকে প্রধান আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে এই কুকি-চিন সংগঠন। এমনিতেই প্রতিনিয়ত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। খুন হচ্ছে একের পর এক। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনাখুনির খবর প্রায় গণমাধ্যমে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অপহরণ, খুনাখুনি, সহিংসতা নতুন নয়। গত চার বছরে আঞ্চলিক দলগুলোর সংঘাতে সেখানে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত মূলত জনসংহতি সমিতির দুটি অংশ এবং ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক। পাহাড়ি অধিবাসীদের মধ্যেই এ পক্ষগুলোর কম-বেশি সমর্থন রয়েছে। তারা কেউ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। আদিবাসী ও সেটলারদের মধ্যেও বিবাদ-সংঘাতের ঘটনা ঘটে। কিছুদিন পরপরই অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্যাঞ্চল। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের নামে সক্রিয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিজেরাই পারস্পরিক দ্ব›েদ্ব লিপ্ত থাকছে সব সময়। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিনিয়ত চলছে বন্দুকযুদ্ধ ও অপহরণের ঘটনা। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় সে সময়কার বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তি বাহিনীর ২ হাজার সশস্ত্র কর্মী অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। অবসান ঘটে অব্যাহত রক্তপাতের। দুঃখজনক ব্যাপার, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এখনো এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের দিকে সব সময় বন্দুক তাক করে থাকছে। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক গ্রুপগুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে এর সুফল দৃশ্যমান করতে হবে পার্বত্যবাসীর কাছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়