সাবের হোসেন চৌধুরী : বনের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় নয়, বন কর্মকর্তার খুনিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

আগের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

পরের সংবাদ

জনগণের সেবা করলে ভবিষ্যতে ভোটের কোনো চিন্তা থাকবে না : দুই মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জনগণের সেবা করা একটি বড় কাজ উল্লেখ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনকল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনগণের সেবা যদি নিশ্চিত করতে পারেন ভবিষ্যতে আপনাদের ভোটের কোনো চিন্তা থাকবে না। মানুষই আপনাদের ওপর আস্থা রাখবে, বিশ্বাস রাখবে। জনগণের কল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস কোনোভাবেই হারাবেন না। তাই তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করুন। আমরা প্রতিটি এলাকার উন্নয়ন করেছি। তৃণমূলের মানুষকে ঘিরেই এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত দুই মেয়র এবং পাঁচ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রথমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র তাহসিন বাহার সুচনা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র একরামুল হক টিটুকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী। এরপর একই অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ এন এম ওবায়দুর রহমান, ঠাকুরগাঁওয়ের আবদুল মজিদ, সিরাজগঞ্জের শামীম তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিল্লাল মিয়া ও হবিগঞ্জের আলেয়া আক্তারকে শপথ বাক্য পাঠ করান তিনি। আর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ৪৪ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম। সমবায় প্রতিমন্ত্রী

আব্দুল ওয়াদুদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যেটা আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। এই পরিবর্তন ধরে রেখে আরো উন্নয়ন করতে হলে জনগণকে আপনারা যে ওয়াদা দিয়েছেন, সেটা আপনাদেরই রক্ষা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ঘোষণা দিয়েছি ‘আমার গ্রাম, আমার শহর।’ অর্থাৎ গ্রামের মানুষ সব নাগরিক সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ লাভ করবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি আপনাদের বলব, আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে জনগণের পাশে দাঁড়ান, আর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখুন। সেসঙ্গে দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্যই কাজ করে। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই এই দেশের মানুষ অন্তত পক্ষে এইটুকু পেয়েছে- সরকার জনগণের শোষক নয়, সেবক হিসেবেই কাজ করে। যার কারণে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আমি অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যার বয়স ১৫ বছর, সে হয়তো ভাবতেও পারবে না যে, ১৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালের আগের বাংলাদেশ কী অবস্থায় ছিল? বাংলাদেশে সেখান থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমরা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের টার্গেট ছিল অন্তত ১৬ বা ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনব। যেটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান। সেটাও করতে পারতাম, যদি কোভিড-১৯ এর মহামারি না দেখা দিত। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি না হতো, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে, জ¦ালানি তেলের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে। এগুলো যদি না হতো, আমরা আরো দ্রুত এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের দারিদ্র্যের হার আরো কমাতে পারতাম। তিনি বলেন, অতি দরিদ্রের হার ২৫ ভাগের ওপরে ছিল আমরা সেটা ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি। এত দ্রুত অতি দরিদ্রের হার কমানো, আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এটা পারেনি। আমরা লক্ষ্য স্থির করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে কেউ আর ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, অতি দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। আজকে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। এখান থেকে চিকিৎসার পাশাপাশি ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ যাতে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে খাদ্যোৎপাদন বাড়াতে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সতর্কতার অংশ হিসেবে তিনি দেশের নদী-নালা, খাল, বিলসহ বিভিন্ন জলাশয় সংরক্ষণ ও পানির প্রবাহকে অব্যাহত রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিতেরও নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্থানীয় সরকার খাতে বাজেট বরাদ্দ ৮ গুণের বেশি বাড়িয়েছি। বিএনপির শাসনামলে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা বর্তমানে ৪৬ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। দেশের প্রতিটি এলাকায় এখন উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থারও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। কাজেই, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং কাজের মান বজায় রাখতে আপনাদের কাজ করা উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়