সাবের হোসেন চৌধুরী : বনের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় নয়, বন কর্মকর্তার খুনিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

আগের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

পরের সংবাদ

খুলনায় ইফতারে ‘রেশমি জিলাপি’ ও ‘নানা হালিম’ : ফুটপাত-অভিজাত হোটেলে বাহারি ও সুস্বাদু খাবার

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবুল আকতার, খুলনা ব্যুরো : পবিত্র মাহে রমজানের শেষের দিকে খুলনার সর্বত্র চলছে ইফতারের আয়োজন। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্টে বাহারি ও সুস্বাদু ইফতারের আয়োজন কর হয়েছে। এমনকি পাড়া-মহল্লার গলিতেও খণ্ডকালীন ইফতারসামগ্রীর দোকান বসিয়েছে বিক্রেতারা। নগরীর ফেরিঘাট মোড়ে রেশমি জিলাপি ও সাউথ সেন্ট্রাল রোডে নানা হালিম এই ইফতারসামগ্রীর মধ্যে অন্যতম। ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, কাবাব, জিলাপি, হালিম, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন তানদুরিসহ নানা স্বাদের রকমারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এছাড়া দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা বাজারে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ ও ঝালের চপ প্রতি পিস এক টাকায় বেচা হচ্ছে, যা খুলনার মানুষের নজর কেড়েছে। নগরীর বিভিন্ন মোড়, অলিগলি ও অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায, সকাল থেকেই দোকানিরা ইফতারি তৈরির প্রস্তুতি নেন। দুপুরের পর পরই ইফতারের বাজার চালু হয়ে যায়। আর আসর নামাজের পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। খেজুর, শসা, কাঁচা ছোলা, ভুনা ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি, মুড়ি, জিলাপি, হালিম, ফালুদা , আলু ও ডিমের চপ, কলার মোচার চপ, সবজির চপ, ঘোল, মাঠা, ফিরনি, পিঠা, এইসব বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তবে রেশমি জিলাপি ও নানা হালিম খুলনার মানুষের বেশি পছন্দের। নগরীর ফেরিঘাট মোড় এলাকায় সেলিম সুইটসের মালিক বুলু এই জিলাপি তৈরি করেন। পোলাও চালের গুঁড়া, মাষকলাইয়ের ডাল, ঘি, বেসনসহ নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় রেশমি জিলাপি। এ ব্যাপারে সেলিম সুইটসের মালিক বুলু জানান, নয়-দশ বছর ধরে তৈরি করছি রেশমি জিলাপি। সারা বছরই তৈরি করা হয়। রোজার মাসে জিলাপি বেশি চলার কারণে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত জিলাপি বিক্রি হয়। তিনি আরো জানান, রেশমি জিলাপি নেয়ার জন্য দুপুর থেকেই ভিড় জমায় ক্রেতারা।
ইফতারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নানা হালিম। নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোড়ে হযরত আলী নামের প্রায় ৮০ বয়সের এক বৃদ্ধ বেচেন হালিম। সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনের ফুটপাথেই কাপড় দিয়ে দোকানের মতো তৈরি করা। হযরত আলী নিজের হাতেই রান্না করেন। সবাই তাকে নানা বলে ডাকেন। তার তৈরি হালিম এতটাই সুস্বাদু যে, এই হালিমের নাম শেষ পর্যন্ত নানা হালিম হয়ে যায়। খাসির মাংস দিয়ে রান্না করা হালিম কিনতে দুপুর থেকেই ভিড় শুরু হয়। হালিম বিক্রেতা রমজান আলী জানান, শুধু রমজান মাসেই হালিম

বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হালিম রান্না হয়। তিনি আরো বলেন, উপকরণের দাম বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর হালিমের দাম বেড়েছে। হালিমের দাম সর্বনি¤œ ২০০ টাকা থেকে শুরু। ৩০০, ৫০০, ৮০০ ও ১ হাজার টাকা দামের হালিম এখানে পাওয়া যাচ্ছে। হযরত আলী পেশায় একজন বাবুর্চি। অভিজাত হোটেলেও প্রায় ৪১ ধরনের ইফতারসামগ্রী রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ইফতারি রেডি প্লেট। যার মধ্যে এক গøাস শরবত, দুই পিস খেজুর, একটুকরা করে মাল্টা, আপেল ও পিয়ারা, ৫০ প্রাম ছোলা, ৩০ গ্রাম মুড়ি, এক পিস পিয়াজু, এক পিস বেগুনি, এক পিস আলুর চপ, এক পিস চিকেন ফ্রায়, এক পিস পাটি শাপটা পিঠা, এক পিস জিলাপী, পরিমাণ মতো কাঁচা ছোলা ও শাশা, ১ কাপ হালিম বা ফালুদা, ৫০০ মিলির ১ বোতল পানি। যার দাম ৬৫০ টাকা। ওয়েস্টর্টান ইন হোটেলে ডিনার ও ইফতারি বক্সের ব্যবস্থা রয়েছে। ওয়েস্টর্টান ইন হোটেলের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম রবি বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও রকমারি ইফতারের আয়োজন করেছি। রেস্টুরেন্টের সুন্দর পরিবেশে ইফতারি সেট দ্বারা ইফতার করার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ইফতার পার্টির সুব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের ইফতার বাজার হতে বিভিন্ন প্রকার ইফতারসামগ্রী পরিবারর জন্য ক্রয় করার ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদিকে এক টাকার ইফতার খুলনাবাসীর কাছে সাড়া জাগিয়েছে। নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা বাজারের বাসিন্দা ইকবার মোল্লা নিজ দোকানেই এই ইফতার বিক্রি করছেন। এখানে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ ও ঝালের চপ প্রতিটি এক টাকা করে বেচা হচ্ছে। এ ব্যাপারে হোটেল ব্যবসায়ী ইকবাল মোল্লা বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সেবামূলক কাজ করছি। অনেকে বাইরে থেকে আমাকে সহযোগিতা করছেন। এখানে চপ, বেগুনি, কাচা ঝালের চপ, পেঁয়াজু ও ছোলা রয়েছে। ছোলা বাদে সব কিছু এক একটি ১ টাকায় করে বেচা হচ্ছে। ১৭ বছর আগেও যে টাকায়

ইফতারি বেচেছি, এখনো সেই দামেই বেচছি। ইকবাল মোল্লা আরো বলেন, ভোর থেকে কাজ শুরু করি। এরপর অন্যরা আমাকে সহযোগিতা করতে আসেন। মালামাল যতক্ষণ থাকে, কাজও ততক্ষণ চলতে থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয় শিবুপদ দে, মনিরুল ইসলাম টুটুল, আব্দুল খালেক, গোবিন্দ কুমার দাস, পর্বত, হাফিজুর, নিরঞ্জন, হায়দার ও রায়হানসহ ১২ জন প্রতিদিন রান্না থেকে বিক্রি পর্যন্ত সহযোগিতা করেন। সব শ্রেণির মানুষ যাতে ইফতারি কিনতে পারে সে জন্য এই সহযোগিতা। সব শ্রেণিপেশার মানুষ এখান থেকে ইফতারসামগ্রী নিয়ে যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়