প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে জ্ঞানের সমাহার। জ্ঞানের অতল সাগর। যেখানের জ্ঞান দিয়ে পাহাড়, পর্বত, হিমালয় ও পৃথিবীকে জয় করা যায়। যেখানে সব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। কথায় আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলেও জ্ঞান অর্জন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা জায়গাই জ্ঞানের সমাহার। কিন্তু আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দা তো দূরে থাক, নাম শুনলেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চোখে ভেসে ওঠে শ্লীলতাহানি, মানসিক টর্চার, র্যাগ, যৌন হয়রানির মতো ঘটনাগুলো। বাংলাদেশে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষা এমনিতেই নানান কারণে বাধা, তার ওপর এমন গর্হিত কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র জায়গায় হলে তা নারীদের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দিন দিন যৌন নিপীড়নের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এর আকার বেড়েই চলেছে। যৌন হয়রানি ভয়ানক আকারে বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর জন্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই লজ্জিত নয়, গোটা জাতি লজ্জিত। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই কলঙ্কিত হয় না। বিশ্বের দরবারে পুরো জাতি কলঙ্কিত হয়। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫৫টি আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১১৪টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৫টির মধ্যে যৌন নিপীড়নের সেল আছে ৪৫টির মধ্যে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৪টির মধ্যে যৌন নিপীড়নের সেল আছে ৯৭টির মধ্যে। মোট ১৬৯টি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবকটার মধ্যেই যৌন হয়রানি হয়ে থাকে। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী তার সহপাঠী বা শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার। অশ্লীল আচরণের শিকার।
শুধু ছাত্রীরা যে যৌন হয়রানির শিকার তা নয়। বরং নারী শিক্ষকরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পান না। সহকর্মী হিসেবে তাদের সঙ্গে যেমন আচরণ করার কথা তেমন আচরণ না করে অশ্লীল ভঙ্গিতে বা কথায় আক্রমণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এমন অনেক জায়গায় ঘটে। কিন্তু কেউ বলতে চায় না লজ্জায়, চরিত্র হননের চিন্তা করে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, নারী তার প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই যৌন হয়রানির শিকার। যারা এমন কাজ করে তাদের নামে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে তেমন দেখা যায় না। যাও নেয়া হয়, তা কেবল সাময়িক বরখাস্ত। যাদের স্থায়ী বরখাস্ত করা হয় তাদের নামে ফৌজদারি মামলা করা যায়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ওই পর্যন্তই নীরব। আর কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তি ও অপমানজনক কিছু করা গেলে বাকিরাও সঠিক হওয়ার পথে এগিয়ে আসত। মিডিয়ায় না আসা পর্যন্ত প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেন না। কোনো শাস্তি দেন না। প্রশ্ন জাগে, তারাও কি এটাকে সমর্থন করে? দুধ-কলা দিয়ে তো তারাই কালসাপ লালন করে। না হলে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে ফেলে রাখে কীভাবে? এমন নোংরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে তাদের দশবার ভাবায় কেন? যৌন নিপীড়নের মতো গর্হিত কাজে কি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় লজ্জিত? জাতি লজ্জিত নয়?
যাদের দ্বারা এমন কাজ ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। জবাবদিহিতার অভাবে এমন কাজ হচ্ছে। সময়মতো তদন্ত করতে হবে। সঠিক তদন্ত করে সময়মতো রিপোর্ট জমা দিতে হবে। যত বড় প্রভাবশালী হোক, শক্তিশালী হোক প্রশাসনের ঊর্ধ্বে নয়। আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও অপমানজনক শাস্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যারা এমন কাজ করে তারা রাজনীতিকেও কলুষিত করে। রাজনৈতিকভাবেও তাদের পাকড়াও করতে হবে। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের মতো নোংরা কাজ ও আচরণ কমে যাবে। অন্যরাও দেখে শিক্ষা নেবে। মূলত দৃশ্যমান ও অপমানজনক শাস্তিই কমাতে পারে যৌন নিপীড়নের মতো গর্হিত কাজকে।
শহীদুল ইসলাম শুভ : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।