সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

রমজানের শেষ দশকে করণীয় : ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বমানবতার পরম সুহৃদ মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ঘোষণা অনুযায়ী পবিত্র মাহে রমজানকে তিনটি বিশেষ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘আউয়ালুহু রাহমাহ ওয়া আউসাতুহু মাগফিরাহ ওয়া আখিরুহু ইতকুম্ মিনান্নার’ অর্থাৎ রমজানের প্রথম দশক রহমতের, মধ্যবর্তী দশক মাগফিরাতের এবং শেষাংশ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির। রহমত, বরকতের বার্তা দিয়ে যার শুরু, মাগফিরাত তথা ক্ষমাপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা আছে যার মধ্যাংশে, তারই ধারাবাহিকতায় দোযখের অনলকুণ্ড থেকে পরিত্রাণের খোশখবর রয়েছে এর শেষাংশে। আমরা বর্তমানে পবিত্র রমজানের সেই প্রত্যাশিত সময় তথা নানাভাবে ফজিলতপূর্ণ শেষ দশকটিই অতিক্রম করছি।
আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করে মহান রব আমাদের জীবন-যাপনের উপযুক্ত নির্দেশনাও প্রদান করেছেন। পাপ-পুণ্যের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে বেহেশত আর দোযখে মানুষের জন্য চিরনিবাসের ব্যবস্থা করা হবে। কোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজের হিসাবও বাদ যাবে না অন্তিম বিচারে। ‘ফামাইয়ামাল মিসকালা র্যারাতিন খাইরাইয়ারাহ ওয়ামাইয়ামাল মিসকালা র্যারাতিন র্শারাইয়ারাহ’ অর্থাৎ কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে। কিন্তু যখনই কোনো ব্যক্তির অসৎকর্মের পাল্লা ভারি হয়ে যাবে তারই আবাসস্থল হিসেবে জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। বস্তুত আমরা কেউ তা চাই না। সুতরাং রমজানের এই শেষ দশক আমাদের দ্বারে সমুপস্থিত হয়েছিল সেই জাহান্নাম থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে; সিয়াম সাধনার এই বরকতমণ্ডিত সময়ে বেশকিছু আমলের মাধ্যমে আমরা দোযখাগ্নি থেকে পরিত্রাণের সুযোগ লাভ করতে পারি। হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের কর্মপ্রক্রিয়াসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- পরনিন্দা-পরচর্চা থেকে দূরে থাকা, প্রতিদিন তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল ও তাসবিহ পাঠ করা, সালাতে মনোযোগী হওয়া, বেশি বেশি করে মহান রবের বিশালত্বের স্বীকৃতি প্রদান করা, দান-খয়রাতে অভ্যস্ত হওয়া, মানুষের সঙ্গে সর্বোত্তম ব্যবহার করা, পাপাচার থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখা, ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজা পালন করা, বিশেষ করে কন্যা সন্তানের উত্তম প্রতিপালন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্যে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। মহানবী (সা.) বলেন- ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’ এই দোয়া যে অধিক পরিমাণে পাঠ করবে সে দোযখ থেকে নাজাত লাভ করবে।
উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়শা (রা.) বলেন- রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। তিনি নিজে রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সদস্যদেরও জাগিয়ে দিতেন। এহেন মনোযোগের অন্যতম কারণ ছিল এই শেষ দশকেরই কোনো এক বেজোড় রাত্রে সহস্র মাসের চাইতেও অধিক ফজিলত ও বরকতের মহিমান্বিত শবেকদর রয়েছে; কদরের পবিত্র রজনীতে পরম রবের বন্দেগির মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্য হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এমনকি মহানবী (সা.) এই দশ দিন মসজিদে নিরবচ্ছিন্ন সময় কাটাতেন এবং অন্যদেরও এ বিষয়ে উৎসাহ ও পরামর্শ দিতেন। মূলত রমজানের শেষ দশকের বরকত উম্মতে মোহাম্মদীর (সা.) জন্য বিরাট এক প্রাপ্তি; যা অন্য কোনো উম্মতের ভাগ্যে জুটেনি। তাই নাজাত-প্রাপ্তির মোক্ষম সময় পেয়েও যারা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তাদের চেয়ে দুর্ভাগা-হতভাগ্য আর নেই। সে কারণেই মহানবী (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি মাহে রমজানকে পেল এবং এর বরকতে নিজের গুনাহসমূহ ক্ষমা করাতে পারেনি, সে ধ্বংস হয়ে যাক।
আমরা তো কেউই ধ্বংস হতে চাই না, সকলেই নাজাত পেতে চাই। আমরা কখনোই পরম রবের বিরাগভাজন হতে চাই না, বরং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ইহকালীন ও পারলৌকিক জীবনে সফল হতে চাই। আল্লাহপাক বলেন- ‘ফামান যুহযিহা আনিন্নার ওয়া উদখিলাল জান্নাতা ফাকাদ ফাযা’ অর্থাৎ সেই প্রকৃত সফল যে জাহান্নাম থেকে দূরে রয়েছে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়েছে। আমরা জাহান্নামের ভয়াবহ অগ্নিতে প্রজ্বালিত হতে চাই না, বরং বরকতময় মাহে রমজানের চলমান শেষাংশে একনিষ্ঠ চিত্তে, রিয়াহীন অবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন ও গভীর মনোযোগের সঙ্গে পরম প্রভুর নানাবিধ ইবাদতের মাধ্যমে জাহান্নামের কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে নাজাত পেতে চাই। তাই আসুন, বেশি বেশি করে সবাই মিলে পাঠ করি ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়