সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক ও বান্দরবান প্রতিনিধি : পার্বত্য তিন জেলায় কয়েকটি সন্ত্রাসী সশস্ত্র সংগঠন অপতৎপরতা অব্যাহত রাখলেও সাম্প্রতিক সময়ে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ ভয়ানক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক খুন, অপহরণ, জখম, গুলি, অস্ত্র লুট, লাগাতার গুলি ছোড়াসহ বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’কে মদদ দিয়ে সারাদেশে ভীতি ছড়ানো সংগঠনটি। তাদের অপতৎপরতা থামাতে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার পরও কার্যক্রম দমাতে পারেনি। উল্টো যতই দিন যাচ্ছে ততেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে নাথান বম নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি। এ অবস্থায় সেখানে নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রবল হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও। কেএনএফের এ তাণ্ডবের কারণে জীবন বাঁচাতে নিজ বসতভিটা ছেড়ে উপজেলা সদরে আশ্রয় নিয়েছেন বহু পাহাড়ি বাসিন্দা। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মানববন্ধনও করেছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত, কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোপূর্বে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। নানা টালবাহানার পর ওই কমিটির সঙ্গে গত ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠকও হয় বেথেলপাড়ায়। কেএনএফর শান্তিপ্রতিষ্ঠা কমিটির আলোচনা চলার মধ্যেই এমন অপকর্ম ভিন্ন কোনো বার্তা দেয় কিনা- তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সবশেষ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বান্দরবানের থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, মুহুর্মুহ গুলি এবং রুমার সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক নিজামুদ্দিনকে অপহরণ করে অস্ত্র লুটের ঘটনায় আবারো আলোচনায় কেএনএফ। এ ঘটনার পর বান্দরবান সদর উপজেলা বাদে অন্য ছয়টি উপজেলার সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে লেনদেন করতে না পেরে বিপাকে পড়ছে মানুষ। যদিও সংগঠনটির কার্যক্রম দমাতে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
স্থানীয়রা বলছেন, পার্বত্য পার্বত্য তিন জেলায় তৎপর থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জেএসএস (সন্তু লারমা), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টি বা এমএনপির সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে টপকে প্রধান আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে এই কুকি চিন সংগঠন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বান্দরবানের থানচিতে এবার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল করিম বলেন, থানচি সদরের সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা ব্যাংকে ঢুকে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে নগদ টাকা নিয়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, থানচি উপজেলা সদর এলাকায় সশস্ত্র ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল হামলা চালায় এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় বাজার এলাকায় সামনে যাকেই পেয়েছে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে সোনালী

ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায় তারা। এ সময় ব্যাংক দুটি থেকে টাকা লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে দুপুর ১টার দিকে সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে শাহাজাহান পাড়ার দিকে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী অনিল ত্রিপুরা জানান, একদল সন্ত্রাসী ব্যাংকে ঢুকে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মো. ফারুক ও অন্য কর্মচারীদের মারধর করে টাকা লুট করে নিয়ে যায়। সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ ও কৃষি ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছেন বলে জানান তিনি। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন জানান, সোনালী ও কৃষি ব্যাংক লুট হয়েছে। তবে টাকার পরিমাণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও বাজারের লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় রুমা মসজিদে তারাবি নামাজ পড়ার সময় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী মসজিদের সবাইকে জিম্মি করে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার কে জানতে চায়। একপর্যায়ে ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে সঙ্গে করে ব্যাংকে নিয়ে গেট ভেঙে অফিসে থাকা সরঞ্জাম নষ্ট করে এবং ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে কার্তুজসহ মোট ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ওই ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাকে এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
রুমা উপজেলা মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রধারী ২০ থেকে ২৫ জন মসজিদে ঢুকে পড়ে। তখন আমরা সবাই এশার নামাজে ছিলাম। ফরজ নামাজ শেষ করে দেখলাম সবার মুঠোফোন নিয়ে নিচ্ছে তারা। নুরুল ইসলাম আরো বলেন, কেএনএফ সদস্যরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, কেএনএফের সদস্যরা দুটি এসএমজি (লাইট মেশিন গান) ও ৬০টি গুলি, ৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০টি গুলি, ৪টি শটগান ও ৩৫টি কার্তুজ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সোনালী ব্যাংক বান্দরবান অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ ওসমান গণি গত মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছিলেন, রুমা শাখায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা থাকার কথা।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে ওই সময় জানা যায়, সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা লুট করেছে। এ সময় ব্যাংকের ম্যানেজার ও নিরাপত্তায় থাকা ১০ পুলিশ সদস্য ও ৪ আনসার সদস্যের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তবে সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর গতকাল বিকালে এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের অন্য ভল্ট ভেঙেছিল সন্ত্রাসীরা। তবে মূল ভল্ট ভাঙতে না পারায় ব্যাংকের টাকা সুরক্ষিত আছে। বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈকত শাহীন বলেন, লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
সরজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান রুমা সড়কের রুমা উপজেলা পরিষদের ২০০ গজ দূরে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখা। তার পাশে উপজেলা মসজিদ। আশপাশে সব উঁচু-উঁচু পাহাড়। গত মঙ্গলবার রাতে ডাকাতির পর ব্যাংক ও উপজেলা পরিষদের সামনে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। রয়েছেন র‌্যাবের সদস্যরাও। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন, জেলা পুলিশ সুপার শাহিন সৈকতসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ব্যাংকের ভেতরে টেবিলের কাচ ভাঙা। ভল্টের কক্ষটি এলোমেলো। বান্দরবান রুমা সড়কের উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ঢোকার মুখে রয়েছে একটি দোতলা ভবন। এটির নিচতলায় থাকেন সরকারি কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় তলার এক পাশে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখা। আরেক পাশে থাকেন ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ জন পুলিশ সদস্য।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কনস্টেবল রূপন শীল বলেন, আমি আর কনস্টেবল তৌহিদ ব্যাংকের সামনে পাহারায় ছিলাম। হঠাৎ দেখি ইউনিফর্ম পরা অস্ত্রধারী কয়েকজন। তারা আমাদের ব্যারাকে ঢুকিয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাতে থাকা অস্ত্র ও মুঠোফোন নিয়ে নেয়। তিনি বলেন, সব পুলিশ সদস্যকে মাথা নিচু করে বসিয়ে রাখা হয়। এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা ব্যারাকে আটকে রাখা হয়। ভবনটির নিচতলায় থাকা রুমা উপজেলার সরকারি একটি সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অস্ত্রধারীরা ইউনিফর্ম (নিজেদের একই রকমের পোশাক) পরা ছিল। পোশাকে কেএনএফ লেখা ছিল। সোনালী ব্যাংক থেকে ২০০ গজ উত্তরে রুমা উপজেলা পরিষদ ভবন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন আটজন আনসার সদস্য।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর চট্টগ্রামের উপমহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ রাসেল ঘটনাস্থলে বলেন, তাদের দায়িত্বরত আটজন আনসার সদস্যের মধ্যে চারজন আহত হয়েছেন। তাদের ৪টি শটগান ও ৩৫টি গুলি লুট করে অস্ত্রধারীরা। তিনি আরো বলেন, আনসার সদস্যরা ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন না। ব্যাংকে হামলা চালালে আনসার সদস্যরা প্রতিরোধ করতে পারেন, সে জন্য অস্ত্রধারীরা আগেই আনসার সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের অস্ত্র ও গুলি লুট করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ডাকাতিতে শতাধিক কেএনএফ সদস্য অংশ নেয়। তাদের বেশিরভাগের পরনে ইউনিফর্ম ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ব্যাংক লুটের আগে অস্ত্রধারীরা বান্দরবান-রুমা সড়কের উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের অংশে দুই পাশে ব্যারিকেড দেয়। এলাকাটি নির্জন এবং ঘটনার সময় বিদ্যুৎ ছিল না।
খোঁজ মেলেনি ব্যাংক ম্যানেজারের : কেনএনএফের অস্ত্রধারীরা যাওয়ার সময় সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজামুদ্দিনকে নিয়ে যায় বলে স্থানীয় লোকজন বলছেন। গতকাল রাত পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে নিজামুদ্দিনকে অক্ষত উদ্ধার এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে রুমা উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ। উপজেলা পরিষদ এলাকায় এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি সুকান্ত দেব, সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বড়ুয়া প্রমুখ। রুমা উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের সভাপতি সুকান্ত দেব বলেন, ‘আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।
ঘোষণা দিয়ে চালানো হয় হামলা : ব্যাংকে হামলার তিন সপ্তাহ আগে এক ফেসবুক পেজ থেকে ‘বদলা নেওয়ার’ ঘোষণা দিয়েছিল পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী এ সংগঠন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের দুই সদস্যকে আটকের ‘বদলা’ হিসেবে তারা এ ঘোষণা দিয়েছিল। ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি- কেএনএ’ নামের এক ফেসবুক পেজ থেকে গত ১২ মার্চ এক পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চুক্তি ভঙ্গ করে বম স¤প্রদায়ের নিরীহ জনগণ লালমুয়ানওম বম (গিলগাল বা অবচলিত পাড়া) এবং রামনুয়াম বমকে (দুনিবার পাড়া) আটক করেছে। এর ফল খুব সুন্দরভাবে ফিডব্যাক দেয়া হবে। নিরীহ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করা না হলে। সংগঠনটির ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন ফ্লেমিংয়ের বরাতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনটির এ ঘোষণার ২১ দিনের মাথায় বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সোনালী ব্যাংকের ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার করার জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে রুমা ও থানচিতে গত দুই দিনে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় বান্দরবান সদর উপজেলা বাদে জেলার ছয়টি উপজেলার সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বান্দরবান সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওসমান গণি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে রুমা সোনালী ব্যাংক এবং আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সব ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের কাছে যা তথ্য আসছে কুকি চিন যে গ্রুপটি রয়েছে, যারা আগেও বান্দরবানে একটি জায়গায় অবস্থান করে জঙ্গি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। তারাই বিভিন্নভাবে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আমাদের যা যা করার, আমরা করব। এখানে যারা জড়িত বা করেছে আমরা সবগুলোর ব্যবস্থা নেব। সেখানে সরকারের যথেষ্ট পরিমাণ ফোর্স রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সেখানে পুলিশ ও বিজিবি রয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে সেনাবাহিনীও যাবে। থানচি একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা। এটা পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের মূল জায়গা। রুমাও শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিল, সেখানে বেশকিছু দিন ধরে শান্তি বিরাজ করছিল। সেই জায়গা তারা কেন বেছে নিল সেই সবকিছু দেখার বিষয় রয়েছে। এগুলো দেখে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
রুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বান্দরবানে এসেছি, মঙ্গলবার রাতে জঘন্য যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কী হয়েছে তা জানার জন্য এসেছি। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি, আমাদের লোকজনের উপর আক্রমণ হয়েছে, মসজিদে তারা আক্রমণ করেছে, আনসার ক্যাম্পে তারা আক্রমণ করেছে, পরবর্তীতে অস্ত্র নিয়ে গেছে। আনসার, পুলিশের অস্ত্র নিয়েছে এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে নিয়ে গেছে। আমরা দেখছি, অস্ত্রগুলো কোথায় আছে খুঁজে দেখব এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত এদের বিরুদ্ধে যথাযথ কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়