সায়মা ওয়াজেদের কারণে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে : বাহাউদ্দিন নাছিম

আগের সংবাদ

পাহাড় জনপদে আতঙ্কের ঢেউ

পরের সংবাদ

গাজায় ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলায় ‘ক্ষুব্ধ’ বাইডেন : ইসরায়েলের কাছে ব্যাখ্যা চায় পোল্যান্ড-যুক্তরাজ্য

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৭ ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেছেন, এ খবর তার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষায় ইসরায়েল যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এদিকে পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য তাদের ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের শুরু থেকেই এক ধরনের দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে এসেছেন জো বাইডেন। একদিকে তিনি ইসরায়েলকে দ্বিগুণ পরিমাণ অস্ত্র দেয়ার অনুমোদন দিচ্ছেন আর অপরদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। আবার এটাও নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েল থেকে কখনোই মুখ ফিরিয়ে নেবে না ওয়াশিংটন।
সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দাইর আল বালাহ এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) এর ৭ কর্মী নিহত হন। ওই কর্মীদের মধ্যে পোল্যান্ডের একজন, যুক্তরাজ্যের ৩ জনসহ অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। বাকি একজন ফিলিস্তিনি। ডব্লিউসিকে বলছে, দাইর আল বালার একটি গুদাম থেকে চলে যাওয়ার সময় ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলায় ওই কর্মীরা নিহত হন। তারা সমুদ্রপথে গাজায় নেয়া ১০০ টনের বেশি খাবার ওই গুদামে রেখে আসতে গিয়েছিলেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েলি বাহিনী নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করেছে। মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন ঘটনা ঘটে গেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজোগ ত্রাণকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ইসরায়েলের

সামরিক বাহিনী অনাকাক্সিক্ষত এই ঘটনার জন্য ‘আন্তরিকভাবে দুঃখ’ প্রকাশ করেছে। একটি স্বাধীন, পেশাদার এবং বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে এই ঘটনা তদন্ত করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার রাতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জো বাইডেন জানান, ইসরায়েলকে দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং সব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। গাজায় ত্রাণ বিতরণ ‘খুবই কঠিন’ হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে অতি জরুরি যে সহায়তা প্রয়োজন তা বিতরণ করতে যাওয়া ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষায় ইসরায়েল যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের রক্ষার্থেও ইসরায়েল পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি। বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলকে বলেছে, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক অভিযান যেন মানবিক অভিযানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়।
বাইডেন বলেন, আমি ইসরায়েলের ওপর চাপ অব্যাহত রাখব। আমরা জিম্মি-বন্দি মুক্তির বিনিময়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির চুক্তির জন্যেও চাপ দিচ্ছি। আমার একটি প্রতিনিধি দল এ মুহূর্তে কায়রোয় এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
সোমবারের হামলার ঘটনার পর ত্রাণকাজ করা গোষ্ঠীগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, তারা যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত। এদিকে, সোমবারের ওই হামলার পর এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মীদের ‘আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্যেই’ এ হামলা চালানো হয়েছে যেন তারা তাদের মিশন অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে।
জাতিসংঘের মতে, অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ১৯৬ মানবিক কর্মী নিহত হয়েছেন। এর আগে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করেছিল হামাস।
ব্যাখ্যা চেয়েছে পোল্যান্ড-যুক্তরাজ্য : পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য গাজায় বিমান হামলায় তাদের ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি কাটজকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ত্রাণকর্মী নিহতের এমন ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ক্যামেরন লিখেছেন, ইসরায়েলকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে হবে যে, এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল। মাঠ পর্যায়ে ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের বড় ধরনের বদল ঘটাতে হবে।
এদিকে, এক্সে পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লা সিকোরস্কি লিখেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইয়াকভলিভনেকের কাছে জরুরি ব্যাখ্যা চেয়েছি।
গাজায় নিহত প্রায় ৩৩ হাজার : গাজায় ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংকের একটি যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলার প্রথম ৪ মাসে গাজা উপত্যকায় অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ইসরায়েলি তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩২ হাজার ৯৭৫ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৭৫ হাজার ৪৯৪ জন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের হামলায় গাজার বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর, মসজিদ, হাসপাতালই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। গাজা যেন এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়