পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

রমজান ও স্রষ্টার নৈকট্য : ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) প্রসিদ্ধ বাণী- ‘বুনিয়াল ইসলামি আলা খামসিন’ অর্থাৎ পাঁচটি স্তম্ভের উপরে ইসলামের ভিত্তিমূল প্রতিষ্ঠিত। পবিত্র রমজানের রোজাব্রত পালন সেই পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। সে কারণেই মহানবী (সা.) পবিত্র রজব মাসের শুরু থেকেই এবং পবিত্র শাবানের সময়টাতেও পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার বিষয়ে তাঁর অনুসারীগণকে সতর্ক করতেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতেন এবং মহান আল্লাহর কাছেও রমজানের রোজাব্রত পালনের তাওফিক কামনা করতেন। এর পেছনে মূল কারণই ছিল পবিত্র রমজান মানুষকে আত্মশুদ্ধি এবং পুণ্যার্জনের এক অবারিত সুযোগ এনে দেয়; যেখানে একটা নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের এবং রমজানের একটা ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমপর্যায়ের গুরুত্ব বহন করে থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই পবিত্র রমজান মাস মানুষের জীবনে সংশোধন লাভ এবং অগণিত সওয়াবের বার্তা নিয়ে তার শুভাগমন ঘটায়। মানুষের উচিত হলো এমন পুণ্যময় ও বরকতের মাসটিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ ইবাদতের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ অর্জন ও পারলৌকিক প্রত্যাশিত সাফল্যের সবটুকু লাভে আত্মনিয়োগ করা।
মহানবীর (সা.) যুগে পবিত্র রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকে মূলত সাহাবায়ে কেরামের মাঝে আত্মশুদ্ধি ও পুণ্যার্জনের ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হতো। সবাই রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে মহান আল্লাহর উদ্দেশে নিবেদন করতেন এবং তাঁকে রাজি-খুশি করার মহান ব্রত নিয়ে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিয়োজিত থাকতেন। রমজানের কোনো একটি সময়কেও তারা অবজ্ঞা বা অবহেলায় কাটিয়ে দিতেন না; রাসুল (সা.) প্রদর্শিত পন্থায় তারা পুরো রমজানকে অতিবাহিত করতেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতো গোটা রমজানই যেন ইবাদতের এক অমোঘ মৌসুম; সকলেই তা থেকে কাক্সিক্ষত ফল লাভে ব্রতী হতেন। তারা মহান আল্লাহর ঘোষণা মতে, ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’ তথা মুত্তাকির গুণাবলিতে নিজেদের গুণান্বিত করতে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন, একেক জন পরহেজগারি বা খোদাভীরুতার সর্বোচ্চ পরাকাষ্টা বহন করতেন; মহিমান্বিত রমজানকে তারা ইবাদতের এক উৎসবমুখর সময়ে রূপ দিতেন। রমজানে অবতীর্ণ পবিত্র কুরআন ও তার বিধিনিষেধকে নিজেদের জীবন-বৈশিষ্ট্যে আরো গভীরভাবে তারা ফুটিয়ে তুলতেন, ‘হুদাল্লিন্নাস’ তথা গোটা মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে যে কুরআনের আবির্ভাব, তাকে তারা জীবনের সব পর্যায়ে ধারণের দীপ্ত শপথ গ্রহণ করতেন। এভাবে মহানবীর (সা.) সঙ্গীসাথীরা পুরো রমজান মাসকে নিজেদের জীবন পরিবর্তন ও সামাজিক বিন্যাসের স্তরসমূহে রমজানের ইতিবাচক প্রভাবকে অর্থবহ ও তাৎপর্যমণ্ডিত করে তুলতেন।
মুসলিম উম্মাহর উচিত তাদের গৌরবোজ্জ্বল পূর্বসূরিদের সমস্ত আমল নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনমানে বাস্তবায়ন করা। পবিত্র রমজান মূলত সেই সুযোগ ও সৌভাগ্যই নিয়ে আসে আমাদের জীবনে। ‘কিয়ামুল্লাইল’ তথা রাত্রি জাগরণ ও রাতের নানা ইবাদত শেষে সেহরির বরকত নেয়া, পূর্ব দিগন্ত সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হওয়ার আগে থেকে পশ্চিম দিগন্তে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সংসর্গ পরিহারের যে নজির রোজাদার কর্তৃক স্থাপিত হয় এবং এর সাথে আরো নানাবিধ বিধি-নিষেধ প্রতিপালন ও কঠোর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে একজন রোজাদার নিজেকে যেভাবে পরিশুদ্ধ করবার প্রয়াস চালিয়ে থাকেন, তা মহান আল্লাহকে সবচাইতে বেশি খুশি ও সন্তুষ্ট করে দেয়। সব ইবাদতের প্রতিদান সওয়াবের সংখ্যায় প্রদত্ত হলেও সিয়াম সাধনার পুরস্কার তাই মহান আল্লাহ নিজ হস্তে প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
রোজাদার যখন ইফতার করতে বসেন মহান স্রষ্টা তখন তদীয় ফেরেশতাদের কাছে গর্ব ভরে বান্দার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন। ‘লিস্সায়েমে ফারহাতান’ তথা হাদিস শরিফে রোজাদারের জন্য দুটি খুশির লগ্ন ঘোষিত হয়েছে, তার একটি তো এই ইফতারের লগ্ন; বান্দা ইফতার করছে, নানাবিধ সুস্বাদু খাবারে নিমগ্ন থাকার পরেও অবর্ণনীয় পুণ্য লাভে ধন্য হচ্ছে এবং পরিশেষে এই রোজাব্রত পালনের চূড়ান্ত প্রতিদান স্বরূপ মহান আল্লাহর দিদার লাভেও তারা কেয়ামতে ধন্য হবেন। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দান-খয়রাত, সেবার মহিমাসহ বিরল সব আমলের মাধ্যমে একেক জন রোজাদার পবিত্র মাহে রমজানে মহান আল্লাহর নৈকট্য-প্রাপ্ত হন, এমনকি ক্রমান্বয়ে তার আরো ঘনিষ্ঠতর হতে থাকেন এবং প্রত্যাশিত জান্নাতের আরো অধিকতর নিকটবর্তী হতে থাকেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়