কাগজ প্রতিবেদক : মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক বাংলাদেশ নারী দলকে ৫৮ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া নারী দল। আগে ব্যাটিং করে ফারিহা তৃষ্ণার হ্যাটট্রিকের পরও ৮ উইকেটে ১৬১ রানের বড় সংগ্রহ পায় অজিরা। জবাবে ৯ উইকেটে ১০৩ রান করতে পারে টাইগ্রেসরা। ৫৭ রান ও ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন জর্জিয়া ওয়ারেহাম। ম্যাচ হারের ফলে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। সিরিজের শেষ ম্যাচ আগামীকাল ৪ এপ্রিল। এর আগে ওয়ানডে সিরিজও নিজেদের করে নেয় সফরকারীরা।
গতকাল গ্রেইস হ্যারিস ও জর্জিয়া ওয়ারেহামের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার বিশাল পুঁজির জবাব দিতে পারেনি নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। বোলিংয়ে ফারিহা তৃষ্ণা হ্যাটট্রিক করে ব্যক্তিগত ঝলক দেখালেও দলীয় অর্জন থেকেছে শূন্য। আরও একবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ১৬২ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার ধারের কাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ওপেনার দিলারা আক্তারের ২৫ বলে ২৭ রানের পর স্বর্ণা আক্তার খেলেছেন ১৭ বলে ২১ রান, এরপরও ২০ ওভারে ১০৩ রানেই আটকে গেছে স্বাগতিকেরা। ৫৮ রানের বড় জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া।
মুর্শিদা খাতুন ও দিলারার ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ছিল আশা জাগানিয়াই। প্রথম ওভারে ৪ ওভারে ৩০ রান তোলেন তারা। পঞ্চম ওভারে মেগান শুটের বলে কট বিহাইন্ড হন মুর্শিদা। তবে ব্যাটে বল লেগেছে কিনা তা পরিষ্কার বোঝার উপায় ছিল না। আম্পায়ার মোরশেদ আলি সুমন কিছুটা সময় নিয়ে তুলেন আঙুল। আউটের সিদ্ধান্ত না মেনে হতাশা প্রকাশ করে বেরিয়ে যান তিনি। মুর্শিদার আউটের পর বাংলাদেশের পথ হারানোর শুরুও হয় সেখান থেকেই। সে সময় ১৪ রানের মধ্যে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে কার্যত লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে তারা। পঞ্চম উইকেটে ফাহিমা খাতুন ও স্বর্ণা ৩০ রানের জুটি গড়লেও তাতে পার্থক্য গড়ে ওঠেনি। দুই স্পিনার সোফি মলিনু ও অ্যাশলেই গার্ডনার নেন ৩টি করে উইকেট নেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে গ্রেস হ্যারিসের সঙ্গে ওপেন করতে আসেন ফিবি লিচফিল্ড। আট বছর আগে দুবার ওপেন করেছিলেন হ্যারিস (রান করতে পারেননি কোনো), লিচফিল্ড ক্যারিয়ারে ওপেন করেছিলেন মাত্র একবার। তাদের ওপেনিং জুটিতে অবশ্য আসে ১৫ রান, ফারিহার বলে কাভারে লিচফিল্ড ক্যাচ তুললে ভাঙে সেটি।
তবে ক্যারিয়ারে এর আগে কখনোই সাত নম্বরের আগে না খেলা জর্জিয়া ওয়ারেহামের সঙ্গে হ্যারিসের জুটিতে ওঠে ৫৪ বলে ৯১ রান। প্রথম ৬ ওভারে ৪০ রান ওঠার পর গতি বাড়ান দুজন, স্বর্ণার অষ্টম ওভারে তোলেন ২০ রান। ওয়ারেহাম ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেন মাত্র ২৬ বলেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৮৯ রানের স্কোর তো বটেই, ২০০-ও সম্ভব মনে হচ্ছিল তখন।
তবে ১২তম ওভারে নাহিদাকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ওয়ারেহাম ধরা পড়ার পর থেকেই ছন্দপতন হয় অস্ট্রেলিয়ার। ক্যারিয়ার সেরা ৩০ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ওয়ারেহাম। পরের ওভারে ফাহিমা করেন জোড়া আঘাত-চারে আসা অ্যাশলেই গার্ডনারের পর ফেরেন হ্যারিস। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি থেকে ৩ রান দূরে থামেন হ্যারিস, যিনি খেলেন ৩৪ বল।
মাঝে এলিস পেরি ও তালিয়া ম্যাকগ্রা যোগ করেন ৩৯ রান, যদিও তাতে লেগে যায় ৩৪ বল। ব্রেক থ্রæয়ের খোঁজে বারবার বোলার পরিবর্তন করা বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার ব্যবহার করেন সাতজনকে।
প্রথম ৩ ওভারে ১৩ রান দেয়া ফারিহাকে আনেন শেষ ওভারে। প্রথম বলে চার মারেন পেরি। চতুর্থ বলে গিয়ে স্বর্ণার হাতে ওয়াইড লং অফে ক্যাচ তোলেন তিনি, পরের বলে মলিনু ধরা পড়েন পয়েন্টে। শেষ বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে অ্যারাউন্ড দ্য লেগে বোল্ড হন মুনি। ফারিহার হ্যাটট্রিক পূর্ণ হয় তাতেই। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং সব মিলিয়ে তৃতীয় বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী টি-টোয়েন্টিতে দুটি হ্যাটট্রিক করলেন এ পেসার। তার প্রথম হ্যাটট্রিকটি এসেছিল ২০২২ সালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে।
মেয়েদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একাধিক হ্যাটট্রিকের ঘটনা অবশ্য আরও আছে। উগান্ডার কনসালেট আয়ুকু নুমুঙ্গু ও হংকংয়ের ক্যারি চানের আছে এই কীর্তি। বাংলাদেশের হয়ে ফারিহা ছাড়া হ্যাটট্রিক আছে ফাহিমা খাতুনের। ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া নারী দলের কাছে এবার কোনো পাত্তাই পায়নি স্বাগতিক টাইগ্রেসরা। ওয়ানডে সিরিজে কোনো প্রতিদ্ব›িদ্বতাই করতে পারেনি তারা। এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজও বাজেভাবে হারার পথে তারা।