পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭ ত্রাণকর্মী নিহত : তাৎক্ষণিক ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা ডব্লিউসিকে’র

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় সাহায্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) এর ৭ ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পোল্যান্ড, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার তিনজন এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিক রয়েছেন। গত সোমবার গাজার মধ্যাংশের দাইর আল বালাহ এলাকায় হামলাটি চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে ডব্লিউসিকের ওই দলটির ফিলিস্তিনি গাড়িচালকও রয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এ খবর দিয়েছে। এই বিমান হামলার পর তাৎক্ষণিক ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এই হামলার নিন্দা জানিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, অবিলম্বে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ করা এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনজিও ডব্লিউসিকে বলেছে, ‘গাজায় মানবিক খাদ্য সরবরাহ উদ্যোগের সমর্থনে কাজ করার সময় আইডিএফের (ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স) হামলায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন টিমের সদস্যরা নিহত হয়েছেন এমন খবর জেনেছি আমরা। এটি একটি শোচনীয় ঘটনা। মানবিক ত্রাণকর্মী ও বেসামরিকদের কখনোই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। কখনোই নয়।’
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ওই হামলায় নিহত আরও একজন আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মী রয়েছেন বলে ডব্লিউসিকের কর্মীরা তাদের জানিয়েছেন। কিন্তু মুখমণ্ডলসহ দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ায় এই ত্রাণকর্মীকে তখনো পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।
ফিলিস্তিনি এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ওই মানবিক ত্রাণকর্মীরা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের লোগো সংবলিত বুলেটপ্রæফ ভেস্ট পরা ছিলেন।
দাইর আল বালাহ এলাকার আল আকসা হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, উপকূলীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময় একটি গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়, সেখানে নিহতদের মধ্যে চারজনের মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনি

স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস বলেছে, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মীদের ‘আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্যেই’ এ হামলা চালানো হয়েছে যেন তারা তাদের ত্রাণ তৎপরতা থেকে বিরত থাকে।
এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাদের বিমান হামলায় ত্রাণকর্মীদের নিহত হওয়াকে ‘শোচনীয় ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে। কোন পরিস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
এ হামলায় অস্ট্রেলীয় ত্রাণকর্মী লালজাওমি ‘জোমি’ ফ্রাঙ্ককম নিহত হয়েছেন, যা নিশ্চিত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, তিনি জানান, তার সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার জন্য দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
ডব্লিউসিকে অভাবী মানুষজনের জন্য খাবার তৈরি করে সেগুলো ত্রাণ হিসেবে সরবরাহ করে। গত মাসে এনজিওটি জানিয়েছিল, তারা ১৭৫ দিনে গাজায় চার কোটি ২০ লাখেরও বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে।
দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭ :
এদিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস। নিহতদের মধ্যে এলিট ফোর্স কুদসের সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং তার সহযোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমিও রয়েছেন।
এই হামলায় ইরানি দূতাবাসের পাশের একটি ভবন ধসে পড়েছে। ইরান ও সিরিয়া সরকার এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর কোনো মন্তব্য করবে না। যদিও সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে শতাধিক হামলার কথা স্বীকার করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ওইসব স্থানে ইরানের বিপ্লবী গার্ড অস্ত্র, অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল বলে তাদের দাবি।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলা জোরদার হয়েছে। একই সময়ে হেজবুল্লাহ এবং লেবানন ও সিরিয়ার অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোও ইসরায়েলের আন্তঃসীমানায় হামলা চালায়। ইসরায়েলি এই হামলাটি ইরান ও তাদের মিত্রদের ওপর এক ধরনের চাপ বাড়ানোর জন্যই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনাটিকে ইরান ও হেজবুল্লাহ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে দেশটি দেখছে ইরান ও হেজবুল্লাহ তাদের অবস্থান থেকে সরে যায় কিনা।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় দামেস্কের পশ্চিম মেজেহ জেলার একটি হাইওয়েতে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেট ভবনটিকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। এতে কনস্যুলেট ভবনটি পুরোপুরি ধসে গেছে। এমনকি ভবনের ভেতর যারা ছিলেন, তাদের সবাই আহত বা নিহত হয়েছেন। হামলায় হতাহতদের নাম উল্লেখ না করে মন্ত্রণালয় বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ এবং আহতদের উদ্ধারের কাজ চলছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ধসে পড়া বহুতল ভবনটি থেকে ধোঁয়া ও ধুলো উঠছে। তবে পাশের ইরানি দূতাবাসের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরী বলেছেন, ইসরায়েলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানটি নৃশংসভাবে আমার বাসস্থান এবং দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগ এবং ইরানের সামরিক শাখায় হামলা চালায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিকে তিনি জানান, কয়েকজন কূটনীতিকসহ পাঁচ থেকে সাতজন নিহত হয়েছেন।
পরে এক বিবৃতিতে রেভল্যুশনারি গার্ডস জানিয়েছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রাহিমিসহ তাদের সাতজন অফিসার নিহত হয়েছেন। যাদের কমান্ডার এবং ‘সিনিয়র সামরিক উপদেষ্টা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। ইরানের গণমাধ্যমগুলো বলছে, জাহেদি ৬৩ কুদস ফোর্সের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের বিদেশি অপারেশন শাখা এবং ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে লেবানন ও সিরিয়ায় কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আর হাজি-রাহিমিকে জাহেদির ডেপুটি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। জাহেদি হচ্ছেন ইরানের হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের একজন, যিনি দীর্ঘ অভিযানের পর ইসরায়েলের হাতে নিহত হলেন।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ এই হামলাকে নৃশংস দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানান। বলেন, এই হামলায় ‘বেশ কিছু নিরপরাধ মানুষ’ নিহত হয়েছে। মেকদাদের সঙ্গে ফোনালাপে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন। এই ঘটনায় তিনি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া জানানোর ওপর জোর দেন।
অন্যদিকে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরাসহ কয়েকটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের স¤প্রচার বন্ধে সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে একটি আইন অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট। এরই মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আল-জাজিরার আঞ্চলিক কার্যালয় বন্ধে তিনি ‘দ্রুত ব্যবস্থা’ নেবেন। ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট বিলটি অনুমোদন করায় এখন সরকার যেসব বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করবে, সেগুলো ‘সাময়িকভাবে’ নিষিদ্ধ করার অনুমতি পাবে। তবে ইসরায়েলের এ পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়