গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : ভারতের সবচেয়ে নিম্নমানের প্রোডাক্ট আওয়ামী লীগ

আগের সংবাদ

বহুমাত্রিক কৌশল আ.লীগের

পরের সংবাদ

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারকে যতœবান হতে হবে

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ যখন থাবা বিস্তার করেছিল দুনিয়াজুড়ে তখন অনেক দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক সূচকও দেখা গেছে অনেক দেশে। সে অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। নিত্যপণ্যের দাম ছিল ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। করোনাকালে ভোজ্যতেলসহ অনেক নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। করোনার অভিশাপ থেকে বিশ্ববাসী মুক্তি পেলেও এর প্রভাবে অর্থনীতিতে যে মন্দা সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে মুক্তি পায়নি। করোনার অভিশাপ না কাটতেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর সংকট আরো বাড়িয়েছে।
সে সংকটে বাংলাদেশের মানুষ কতটা অসহায় তার প্রতিফলন ঘটেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গেøাবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিটের এক যৌথ সমীক্ষায় জরিপে। তাতে উঠে এসেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর সময়কালে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য গ্রামীণ এবং শহুরে পরিবারগুলোর জন্য ছিল একটি প্রধান ধাক্কা। মূল্যস্ফীতির চাপ ছাড়াও এ সময় কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য, ফসল, গবাদিপশুর রোগ, পরিবারের সদস্যের উপার্জন হ্রাস, বন্যা, ফসলের কম দাম ইত্যাদির প্রভাব ছিল। এর প্রভাব কাটাতে পরিবারগুলো খাদ্যাভ্যাসের ধরনগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করেছে। তা ছাড়া সঞ্চয় কমে যাওয়া, ঋণ গ্রহণ ছাড়াও বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হয়েছে।
এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, মূল্যবৃদ্ধির এই প্রভাবে ৭০ শতাংশ পরিবার তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে। ৩৫ শতাংশ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় হ্রাস করেছে। ২৮ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করেছে এবং ১৭ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় হ্রাস করেছে।
যৌথ সমীক্ষায় স্পষ্ট হয়েছে বিশ্বজুড়ে যে মন্দা চলেছে তার প্রভাব প্রকটভাবে পড়েছে বাংলাদেশেও। এ প্রভাবের ফলে সুখ ও স্বস্তিতে নেই স্বল্প আয়ের মানুষ।
অনেকের অভিযোগ- দেশের ব্যবসায়ীরা পকেট স্ফীত করার বাইরে অন্য কিছু ভাবেন না; জনস্বার্থকে মোটেই গুরুত্ব দেন না। ব্যবসায়ীদের এহেন আচরণ ও কর্মকাণ্ড অযৌক্তিক, অমানবিকও বটে। এ অবস্থায় লোক ঠকানো মানসিকতা পরিহার করে তেল, চিনিসহ সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ী সমাজকে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। সব কিছুর দাম বাড়ায় সংসার খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে আয়ের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের পেছনে। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, এসব ব্যবস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অবশ্য এসব তৎপরতায় তেমন কোনো সাফল্য আমরা দেখি না। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘœ রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
পরিশেষে বলছি, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষেত্র পর্যন্ত ব্যবস্থাপনাও নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। একই সঙ্গে আমদানিকৃত ও দেশজ উৎপাদিত- এই দুই ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘœ রাখার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়