এমসিসিএইচএসএলে দুর্নীতির অভিযোগ

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে দুষ্ট চক্রের থাবা

পরের সংবাদ

সুপ্রিম কোর্ট বারে দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে দ্বন্দ্বে বিএনপিপন্থিরা : সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার ইঙ্গিত খোকনের

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১১:০৮ অপরাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই গত ৬ ও ৭ মার্চ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ভোট গণনার দিন রাতে বহিরাগত ও আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি, মারধরের ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ভোট গণনা। পরে ১০ মার্চ ভোট গণনা শেষে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০টি পদে জয় লাভ করে। অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল সভাপতি পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারটি পদে জয় লাভ করে। কিন্তু বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ফোরামের পক্ষ থেকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোট নেয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়। তখন থেকেই বিএনপি প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থীদের দায়িত্ব নেয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতপার্থক্য তৈরি হয়।
এই মতপার্থক্য ও দ্ব›দ্ব প্রকাশ্যে আসে গত বুধবার। সেদিন ফোরামের পক্ষ থেকে জয়ী চার আইনজীবী নেতাকে দায়িত্ব না নিতে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেন ফোরামের দুই শীর্ষ আইনজীবী নেতা। ওই চিঠির পর সুপ্রিম কোর্ট বারে দায়িত্ব নেয়া-না নেয়া নিয়ে বিএনপির শীর্ষ আইনজীবীদের মধ্যে মতপার্থক্য ও রেশারেশি আরো বেড়ে যায়।
জানা যায়, আইনজীবী সমিতির ভোট নেয়া শেষে প্রথম দফার গণনার সময় মারামারি ঘটনায় দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনার কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে ফোরামের সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী, মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী এক ফোরাম নেতার বাসায় সভা করেন। ওই সভায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অসুস্থতার কথা বলে অংশ নেননি তিনি। সভায় সিদ্ধান্ত হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কোনো প্রার্থী ভোট গণনার কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা ভোট গণনার কার্যক্রমে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু হঠাৎ ভোট গণনার শেষ মুহূর্তে বিএনপির প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ভোট গণনা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে যোগ দেন। এতে ফোরামের তিন শীর্ষ নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর নাখোশ হন। শুরু হয় দ্ব›দ্ব।
ফোরামের আইনজীবী নেতারা বলেন, ফোরামের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে খোকনের দ্ব›দ্ব অনেকদিন ধরে। ওই শীর্ষ নেতা চান না খোকন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি পদে দায়িত্বে আসুক। তিনি দায়িত্ব নিলে ফোরামে তার গ্রহণযোগ্যতা কমতে পারে। এই শঙ্কা থেকেই দায়িত্ব নিতে বারণ করে এই চিঠি।
দলীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে দলের শীর্ষ আইনজীবীরা এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট বারে জয়ীদের দায়িত্ব নেয়া প্রসঙ্গে পক্ষে-বিপক্ষে দুই পক্ষই যুক্তি তুলে ধরেন। কেউ কেউ বর্তমান অবস্থায় দায়িত্ব নেয়া দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে মত দেন। তবে বিপক্ষে মত দেন ফোরামের শীর্ষ তিন আইনজীবী নেতা। এ অবস্থায় গত বুধবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে। চিঠিতে তাদের দায়িত্ব নেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। বিজয়ী অন্য যাদের চিঠি দেয়া হয়েছে তারা হলেন- কার্যনির্বাহী সদস্য আইনজীবী সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম।
ওই চিঠিতে বলা হয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিঠিতে চার আইনজীবীকে দায়িত্ব নেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আপনি/আপনারা

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ মেয়াদকালের দায়িত্ব নেয়া থেকে বিরত থাকবেন। দল আশা করছে- আপনি/আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।’
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, পুনর্নির্বাচন হলে আমরা খুশি হব, আইনজীবীরা খুশি হবেন। পুনর্নির্বাচন হলে আমরা আরো বেশি পদে ম্যান্ডেট পাব। এজন্যই সম্ভবত চিঠিটা দেয়া হয়েছে। আর পুনর্নির্বাচনের দাবি যদি না মানা হয় তবে আমরা তো প্রেসিডেন্ট, সদস্য পদে ইলেকটেড হয়েছি। সেটা তো আছেই। এক্ষেত্রে তো পদত্যাগেরও সুযোগ নেই, পুনর্নির্বাচনেরও সুযোগ নেই। দায়িত্ব না নেয়ার জন্য সংগঠনের সিন্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত, দায়িত্ব নেয়া বা না নেয়ার কী আছে। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের এই নির্বাচনে ফোরামের এক নেতার ভূমিকা রহস্যজনক। তার সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি খুব শক্তিশালী নেতা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার যোগসাজশ ছিল কিনা সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। সেই নেতার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। সময়মতো নাম প্রকাশ করব। খোকন বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা হলে এবং আমরা যদি ভোট গণনার সময় থাকতাম তাহলে আরো বেশি পদে বিজয়ী হতাম। কিন্তু ওই নেতার সিদ্ধান্তে সেদিন আমরা ভোট গণনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা থেকে বিরত ছিলাম। মূলত ওই নেতা আওয়ামী লীগের সবাইকে বিজয়ী করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেন। আমিসহ অন্যরা বিজয়ী হোক তিনি চাননি। সুপ্রিম কোর্ট বারে আমার পরাজয়ের ইতিহাস নেই। আমরা ম্যাজরিটি বিজয়ী হতাম। শুধুমাত্র ওই নেতার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের এই অবস্থা হলো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়