এমসিসিএইচএসএলে দুর্নীতির অভিযোগ

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে দুষ্ট চক্রের থাবা

পরের সংবাদ

এবার সোনামণিদের পছন্দ নায়রা, আফগানি থ্রি পিস : ঈদের বাজার

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ঈদে আনন্দের জোয়ার শিশুমনে থাকে সবচেয়ে বেশি। এ জন্য সোনামণিদের পোশাক নিয়ে বাড়তি ভাবনা থাকে বাবা-মায়ের। ছোট্ট সোনার পোশাক হতে হবে ফুরফুরে ডিজাইনের কালারফুল, আরামদায়ক। মেয়ে শিশুদের ঈদ রঙিন করতে এবার মার্কেটে এসেছে আফগানি থ্রি পিস, নায়রা, সারারা গারারা ও পার্টি ফ্রক। এছাড়াও নেট চিকেন কাপড়ে সিকোয়েন্সের কাজ করা লম্বা ঘেরওয়ালা ফোলানো বার্বি ফ্রকও চলছে। ছেলে শিশুদের মধ্যে বেশি চলছে ছোট ছোট প্রিন্টের পোলো শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও কামদানি পাঞ্জাবি সেট।
দোকানিরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে ছোট্ট সোনামণিদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে আফগানি সালোয়ার-কামিজ। কুচিওয়ালা ঢোলা ঝুলঝুলে সালোয়ারের কারণেই মূলত এই ড্রেসের নাম দেয়া হয়েছে আফগানি। এ ছাড়াও নয়রা, সারারা গারারা, টিস্যু গাউনগুলো চলছে ধুমসে। সাইজ অনুযায়ী এসব ড্রেসের দাম ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরছেন, ঈদে নতুন কী এলো, দাম কেমন- এসব এখন পরখ করছেন। তবে বাড়ির ছোটদের আবদার মেটাচ্ছেন সবার আগে। বরাবর এমনই হয়। ছোটদের জন্য কেনাকাটা দিয়েই ঈদের বাজার শুরু হয় সবার। ৭ বছরের ছোট্ট ফুটফুটে সিদারাতুল

মোনতাহার মা আর খালামনির হাত ধরে ঈদের জামা কিনতে এসেছে। রাজধানী শান্তিনগরের টুইন টাওয়ার শপিং সেন্টারে ঘুরে ঘুরে ড্রেস দেখছিল সে। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল দোকানের সামনে পুতুলের (ম্যানিকুইন) গায়ে পরিয়ে রাখা একটা আফগানি সালোয়ার কামিজে। আদুরে গলায় আম্মুকে বলল, ‘আমি এইতা নিবো’। ঈদে তোমার কেমন জামা পছন্দ? জিজ্ঞেস করতেই খানিকটা লাজুক ভঙ্গিতে হেসে ভোরের কাগজকে সে বলল, ‘পার্টি ফ্রক’। পুতুলের গায়ের জামাটা দেখিয়ে বলল, ‘আমার এতাও পছন্দ’। কটন সিল্কের ওপরে জরি সুতার গর্জিয়াস কাজের জামার সঙ্গে কুচি করা ঘেরওয়ালা সালোয়ার ও চিকন পাড়ের দোপাট্টার ড্রেসটির নাম আফগানি। এর মূল্য ৩ হাজার টাকা।
টুইন টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় চাঁদের হাট ফ্যাশন শো-রুমের কর্ণধার তারেকুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এবারের ঈদে মেয়ে শিশুদের আফগানি, সারারা গারারা, নায়রা, পার্টি ফ্রক, লং ফ্রক, পুষ্পা নামের ড্রেসগুলোর চাহিদা বেশি। এছাড়া সারারা গারারার ডিজাইনে এসেছে নতুনত্ব। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্রি আছে মোটামুটি। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বেচাবিক্রি বাড়বে। তিনি আরো বলেন, ডলারের মূল্য বাড়তি তাই দেশের বাইরে থেকে পোষাক আনতে খরচ অনেক বেশি পড়েছে। লাভ একেবারেই সীমিত।
এবারের ঈদ হবে বৈশাখের শুরুতে। এ সময় প্রচণ্ড গরম থাকায় ছোট্ট শিশুদের পোশাক যেন হয় স্বস্তিদায়ক, সেদিকে বাড়তি নজর রেখেছেন ডিজাইনাররা। ডেনিম ও জর্জেটে কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করা হলেও তা যেন নরম ও আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই তারা পোশাক তৈরি করেছেন। বাহারি ডিজাইনের গর্জিয়াস পার্টি ড্রেস ছাড়াও ক্রেতারা নরম কাপড়ের ও নকশার ড্রেস কিনছেন। এর মধ্যে সুতি, হ্যান্ডলুম, লিনেন, তাঁত বা পাতলা খাদি পোশাকেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া সিল্ক, ভিসকস, সাটিন, অরগ্যান্ডি, মসলিন, গিøটারি কাপড়ের পোশাকও চলছে বেশ। নামকরা শপিংমলগুলো ছাড়াও দেশীয় বুটিক হাউস- দেশিদশ, ক্লাব হাউস, শৈশব, লা রিভ, উজু উম্মু, সারা লাইফস্টাইল, সেইলরসহ প্রায় সব ফ্যাশন হাউসেই সাজানো হয়েছে শিশুদের ঈদের পোশাক।
মেয়ে সোনামণিদের ড্রেস : ঈদে মেয়ে শিশুদের পোশাক মানেই বিশেষ কিছু। এবার তাদের জামার কাপড়, রং, নকশা, কাটিং সবই ভিন্ন। কাতান ও অরগ্যান্ডি কাপড়ে তৈরি সারারা গারারা দেখতে অনেকটাই কাছাকাছি। নাম পুরনো হলেও ইন্ডিয়ান ঢংয়ের এ ড্রেসগুলোর ডিজাইনে থাকছে নতুনত্ব। জামাগুলোর ওপরের পার্ট কামিজ, এর ঝুল ছোট। সালোয়ার ঢোলা, হাঁটুর দিকে ঘোরানো জরি-চুমকির কাজ করা। ওড়নায়ও ভারী কাজ। এসব পোষাকের দাম ২ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়াও বেশি ঘেরের ট্রেন্ডি টিউনিক কামিজ ও প্লাজো, পার্টি ফ্রক, ঘাগড়া চোলি ও লেগিংসের চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে। ভারি সুতি কাপড়ের ফুলেল প্রিন্টের হাতাকাটা ফ্রকেরও বিশেষ চাহিদা রয়েছে। মেয়েদের পার্টি ফ্রকের দাম ১ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫৯৫ টাকা, সুতির টপস, স্কার্ট-টপস- এসবের দাম ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। লেগিংস পাওয়া যাবে ৪শ থেকে ৬শ টাকায়।
এদিকে টপ-বটম, টপ-স্কার্ট, শর্ট টপ, কাফতান, ওয়ান শোল্ডার ফ্রক, ফ্রিল ফ্রক, জাম্প স্যুট, ক্রপ টপ, কোল্ড শোল্ডার টপ, লেগিংস, ধুতি স্টাইলের সালোয়ারের ডিজাইনেও বেশ বৈচিত্র্য দেখা গেছে। সালোয়ারগুলো রাখা হয়েছে ঢিলেঢালা। সুতি, ডেনিম বা লিনেনের স্কার্ট ছাড়াও মসলিন, জর্জেট বা অরগ্যান্ডি কাপড়ের স্কার্টে বড় বড় ফুলের ছাপা প্রায় সব ফ্যাশন হাউসেই দেখা গেছে। এর সঙ্গে একরঙা টপ বা শার্ট এবার একেবারেই নতুন। কামিজের ঝুলে ও হাতায় উঁচুনিচু কাটিং, ফ্রিল, কুঁচির ব্যবহার হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। মেয়েদের পোশাকে নীলের অনেক ধরন, লাল, মেজেন্টা, সাদা, হলুদ, ফিরোজা, গোলাপি, বাদামি, হালকা সবুজ ইত্যাদি রঙের ব্যবহার হয়েছে বেশি।
একমাত্র মেয়ে নিতুর জন্য ঈদের জামা কিনতে ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষিকা মলি তাবাসসুম এসেছেন বেইলি রোডের কিডস কালেকশন নামের একটি দোকানে। তিনি বলেন, এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি। শিশুদের জিনিসের দাম আরো বেশি। দোকানিরা যদি বুঝে ফেলে বাচ্চার কোনো ড্রেস পছন্দ হয়েছে তাহলে তো কথাই নেই, গলাকাটা দাম চেয়ে বসে থাকবে। বাধ্য হয়েই তখন চড়া দাম দিয়েই কিনতে হয়। কারণ সন্তানের পছন্দই আমাদের পছন্দ। কেনাকাটায় শিশুর পছন্দকেই গুরুত্ব দিই আমরা।
ছেলে শিশুদের ড্রেস : ঈদে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে প্রধান আকর্ষণ থাকে পাঞ্জাবি। এবার ছেলে শিশুদের একছাটের পুরো পাঞ্জাবিতেই প্রিন্ট বেশি দেখা গেছে। এছাড়া ফুল, প্রকৃতি, ময়ূর প্রিন্টের ট্রেন্ড চলছে। গরমে শিশুদের প্রশান্তির কথা ভেবে গেঞ্জি কাপড়ের টপ, টি-শার্ট, প্যান্ট এনেছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। ছোট হাতার শার্ট, গেঞ্জির সঙ্গে ম্যাচ করা এক রঙের প্যান্টের পাশাপাশি আছে ব্লিচ করা ডেনিম প্যান্ট। উৎসব ও আরামের কথা ভেবে এবার উজ্জ্বল ও হালকা- দুই ধরনের পোশাকই দেখা গেছে। রঙের ক্ষেত্রে পোশাকে সাদা, পেস্টাল ঘরানার রং, সাদার সঙ্গে হলুদ, নীলের ব্যবহার অনেক বেশি।
ছেলেদের পোশাকে সব থেকে বেশি ব্যবহার হয়েছে সুতি, লিনেন, পাতলা খাদি ও গেঞ্জি কাপড়। অধিকাংশ পোশাকে ছোট ছোট ব্লক, ফুলের প্রিন্ট, গাড়ি, ছোট ছোট কার্টুন থাকছে। একরঙা পাঞ্জাবি ছাড়াও পাতলা খাদি কাপড়ে চেকের ব্যবহার হয়েছে। পাঞ্জাবিজুড়ে এমব্রয়ডারি ছাড়াও নতুনত্ব আনতে বুকের এক পাশে অল্প করে কাজ করা হয়েছে।
এবার ঈদে এসেছে উরাধুরা ‘ডিজে সেট’। পোশাকটির প্যান্টের পকেট ও শার্টের পকেটে লাইট ও মিউজিক বসানো। সাইজের ওপর নির্ভর করে এর দাম ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও হাফ শার্টের সেট ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ টাকায়। এ ছাড়াও মোদি সেট, বাবাসেট, পাঞ্জাবি-পায়জামা-কটি, শার্ট-প্যান্ট, কুরতা, ফতুয়া পাওয়া যাচ্ছে নানা রঙের। এসব পোশাকের ডিজাইন ও কাটছাঁটের পাশাপাশি নামেও রয়েছে ভিন্নতা।
শিশুদের হাল ফ্যাশনের নতুন পোশাকের প্রচুর সম্ভার থাকে নয়াপল্টনের গাজী ভবন, সিটি হার্ট- এসব বড় বিপণি বিতানে। ফকিরাপুল থেকে প্রবাসী জুয়েল তার ছেলে মেয়েকে নিয় ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন গাজী ভবনে। মেয়ের জন্য জর্জেট কাপড়ের ওপর এমব্রয়ডারি ও লেইসের নকশা করা চীনের তৈরি একটি পার্টি ফ্রক কেনার জন্য দরদাম করছিলেন। ৩ হাজার টাকা দাম চেয়ে বসে আছেন জে এস ট্রেডসের বিক্রয় ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। বহু দরদাম করে ২ হাজার ৫শ টাকা দিয়ে কেনা হলো জামাটি। বিক্রেতারা জানালেন, চীনের পোশাকগুলো সর্বনি¤œ ১ হাজার ৫শ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভারত ও পাকিস্তান থেকে ড্রেসগুলো এসেছে সেগুলোর দাম আরো বেশি। তবে বয়সভেদে দামের তারতম্য হয়।
ডি আর ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন জানালেন, ভারতের তৈরি বাচ্চাদের পোশাকগুলো ঈদে বেশ চলে। রং, ডিজাইনে নতুনত্ব থাকে। তবে এবার দাম এত চড়া যে তাদের নিজেদেরই দাম বলতে অস্বস্তি লাগছে। বেশি দরদাম করার সুযোগ নেই, খুব সামান্য লাভ হলেই বিক্রি করছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়